রংপুরের মুক্তাঞ্চলে পুনর্গঠনের কাজ শুরু
(নিজস্ব প্রতিনিধি)। রংপুর জেলার সম্পূর্ণ রৌমারি থানা ও গাইবান্ধার কিছু অংশ এবং অপরদিকে সম্পূর্ণ পাটগ্রাম থানা ও হাতিবান্ধা থানার কিছু অংশ লইয়া মুক্তাঞ্চল গড়িয়া উঠিয়াছে। মুক্তাঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক প্রশাসনও কিছু পরিমাণে চালু হইয়াছে। জনগণ এখানে মুক্তিবাহিনী, সরকারী কর্মচারী ও বিভিন্ন হাতে হাত মিলাইয়া পুনর্গঠনের কাছে লাগিয়া পড়িয়াছেন। রৌমারিতে থানা প্রশাসনের পক্ষ হইতে প্রাথমিক স্কুল সমূহ খােলার চেষ্টা করা হইতেছে। ইতিমধ্যে ২/৩টি স্কুল খুলিয়াছে। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের সংস্কার ও পুননির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হইয়াছে। জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম, প্রবল উদ্দীপনা ও সদাজাগ্রত প্রহরীর মনােভাব থাকায় মুক্তাঞ্চলে চুরি ডাকাতি একেবারেই অনুপস্থিত। তবে সমগ্র অঞ্চলটি যেহেতু যুদ্ধ বিধ্বস্ত, সেহেতু খাদ্য ও নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসের তীব্র অভাব রহিয়াছে। চাল ডাল লবণ কেরােসিন দেশলাই ইত্যাদি সামান্যই পাওয়া যাইতেছে এবং অত্যন্ত উচ্চমূল্যে।
এমনিতে এলাকাটি ছিল একটি অ-শিল্পাঞ্চল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অনুন্নত। জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপৃত থাকায় কৃষি উৎপাদনে প্রভূত ক্ষতি হইয়াছে। তদুপরি আশপাশের শত্রু কবলিত অঞ্চলসমূহ হইতে জনগণ মুক্তাঞ্চলে আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করায় খাদ্যাভাব আরও তীব্র হইয়া উঠিতেছে। চিকিৎসা ও ঔষধ-পত্রের অভাব একটা বড় সমস্যা। জনগণের এই আন্তরিকতা ও কর্মস্পৃহাকে সংগঠিত করিয়া মুক্তাঞ্চলে প্রশাসন, সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন, রিলিফ, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের জন্য সরকার ও সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বিত ও মুক্ত কর্মপন্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১ : ১৩ ॥ ৩ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪