You dont have javascript enabled! Please enable it! পাক অখণ্ডতা রক্ষায় রাশিয়ার ৪ শর্ত - সংগ্রামের নোটবুক

পাক অখণ্ডতা রক্ষায় রাশিয়ার ৪ শর্ত

হামুদুর রহমান কমিশনের রিপাের্ট অনুযায়ী, আজ নীরবে আত্মসমর্পণের সানাই বেজে ওঠে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আজ গভর্নর মালিকের কাছে এ মর্মে বার্তা পাঠান যে, আপনাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দিলাম। যে কোনাে সিদ্ধান্ত নেবেন তাতেই আমার সম্মতি থাকবে। জেনারেল নিয়াজিকেও আমি সে কথা জানিয়ে দিয়েছি। কিসিঞ্জার নিক্সনকে জানিয়ে দেন, ভারতীয়রা এখন ঢাকা থেকে মাত্র ২২ মাইল দূরে। তাদের শুধু একটি বড় নদী পার হতে হবে। ইয়াহিয়া আত্মসমর্পণে মনস্থির করার পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তানে তার সৈন্যদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য তার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তিনি এটা বলেছেন, তার সৈন্যরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে যাবে। স্বপক্ষত্যাগের কিছু ঘটনা ঘটেছে তবে তা ব্যাপকভিত্তিক নয়। সেনাশৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েনি। দিল্লি সফররত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে’ এই সুপারিশ রাখেন যে, ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যসহ পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সে জন্য পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আজ নিক্সনকে দেয়া কিসিঞ্জারের স্মারকে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের ঢাকা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট উভয় পক্ষের কাছে জোরালাে আবেদন জানিয়েছেন।

বিদেশীদের সরিয়ে নিতে ২৪ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন তিনি। ভারত সাড়া দেয়নি। তারা বলেছে, এর আগে একই উদ্দেশ্যে দুটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেস্তে যায়। ঢাকায় দুটি ‘নিরাপদ নিরপেক্ষ এলাকা’ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছিল জাতিসংঘ ও রেডক্রস। এই নিরপেক্ষ এলাকায় মার্কিন কূটনীতিকরাও ঠাই পাবেন। কারণ বাংলাদেশ দায়িত্বভার গ্রহণের পর তারা কূটনৈতিক অধিকার হারাবেন। উপরন্তু গেরিলাদের কাছ থেকে। তারা বৈরী আচরণের আশঙ্কা করছেন। কিসিঞ্জার নিক্সনকে এই তথ্যও দেন যে, যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি অন্যদের, বিশেষ করে ভুট্টোর কাঁধে চাপানাের জন্য ইয়াহিয়া। বাঙালি নূরুল আমীনকে প্রধানমন্ত্রী ও ভুট্টোকে উপপ্রধানমন্ত্রী করে বেসামরিক সরকার। গঠন করেছেন।

আজ সকাল ১০টা ৯ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠক। এতে সিদ্ধান্ত হয়, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমেরিকানদের সরিয়ে আনতে জরুরিভিত্তিতে একটি কেরিয়ার টাস্কফোর্স (সপ্তম নৌবহর) মােতায়েনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে। দুপুরের মধ্যে গােয়েন্দা সংস্থাগুলাে এ ব্যাপারে তাদের মত দেবে। কিসিঞ্জার এই বৈঠকের শুরুতেই মন্তব্য। করেন, প্রেসিডেন্ট ভারতের ব্যাখ্যায় আমেরিকান কর্মকর্তাদের দৃশ্যত সম্মতি দেখে অবাক হয়েছেন। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, ভারত তাে শুধু দেশের ৬০ শতাংশ বিচ্ছিন্ন করেছে। কিন্তু সে ভূখণ্ড তারা করতলগতও করেনি। এতেই বােঝা যায়, ভারতের পক্ষে মার্কিন কর্মকর্তারা কীভাবে ঝুঁকে আছেন। কিসিঞ্জার স্পষ্ট করেন, ভারত যা বলেছে তা আমাদের অবস্থান নয়। প্রেসিডেন্ট চাইছেন এ প্রসঙ্গে ভারতের মনে কোনাে ভুল ধারণা তৈরি না হােক। প্রেসিডেন্ট এটা আজকের মধ্যে শুধরে নিতে বলেছেন। অ্যাডমিরাল মুরার বৈঠকে উল্লেখ করেন, ভারতীয়রা এখন তাদের ডিভিশনগুলাে পশ্চিম ফ্রন্টে নিয়ে আসবে। সম্ভবত ছয় ডিভিশনের মধ্যে চারটিই এখন পূর্ব পাকিস্তানে। তাদের পশ্চিম ফ্রন্টে আনতে এক থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। অবশ্য এটা নির্ভর করছে আকাশপথে তারা কতটা সৈন্য আনে তার ওপর। যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ফলাফল কিন্তু পাকিস্তানের জন্য অবশ্যম্ভাবী। এরপর কিসিঞ্জার বলেন, সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতীয় আক্রমণ আমাদের প্রতিহত করতে হবে। যদিও পরিণতি হয়তাে পূর্ব পাকিস্তানের মতােই ঘটবে। আর ভারতীয়রা তখন খণ্ডিত। পাকিস্তানকে পূর্বে ভুটান ও পশ্চিমে নেপালের মতাে নিয়ন্ত্রণ করবে।

নিক্সন ও কিসিঞ্জার এদিন দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিটে হােয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে আরেক দফা বৈঠকে বসেন। পাকিস্তান বিভক্তির আশু ফলাফল কী হতে পারে, কিসিঞ্জার তা ব্যাখ্যা করেন প্রেসিডেন্টের কাছে। বলেন, আমাদের এক মিত্রের এই দশা মধ্যপ্রাচ্য, ইরান ও ইন্দোনেশিয়াকে দারুণভাবে বিচলিত করবে। কিন্তু এই পর্যায়ে আমাদের পক্ষে তাে আর কোনাে ভালাে সমঝােতার উপায় নেই। রাশিয়া যদি নিষ্ঠুর উপসংহার টানতে চায়, তাহলে আমরা হেরে যাব। কিসিঞ্জার অবশ্য উল্লেখ করেন যে, ব্রেজনেভ তার চিঠিতে যা উল্লেখ করেছেন, তা মেনে নিলে একটা আপােস হয়তাে এখনাে সম্ভব। সােভিয়েত শর্ত চারটি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুর নিষ্পত্তি, একটি ইউরােপীয় নিরাপত্তা সম্মেলন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও মস্কো-ওয়াশিংটন একটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠান। কিসিঞ্জার একইসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে একটি অভিন্ন অবস্থানে ঠেলে দেয়ার বিপদ সম্পর্কেও রাশিয়া সচেতন। সুতরাং আমরা একেবারেই সম্পদশূন্য’ নই।

দুই নেতাই বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর প্রেরণের নানামুখী সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মতবিনিময় করেন। পাকিস্তানকে আগ্রাসন থেকে রক্ষায় ওয়াশিংটন-পিন্ডির কোনাে গােপন চুক্তি নেই জেনেও কিসিঞ্জার নিক্সনকে পরামর্শ দেন, আমরা এ মুহূর্তে দুটো কাজ করতে পারি। প্রথমত, সংবাদপত্র বা অন্য কোনাে উপায়ে রুশদের কাছে এটা  ফাস করে দেব যে, ভারতের আগ্রাসন থেকে পাকিস্তানকে রক্ষায় কেনেডির সঙ্গে আইয়ুব খানের গােপন চুক্তি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বঙ্গোপসাগরে আমরা নৌবহর নিয়ে যাব। অজুহাত দেখাব, ঢাকার মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ। নিক্সন বলেন, চীনা দৃষ্টিকোণ থেকে আমি নৌবহর মােতায়েনের পক্ষে। কিন্তু জনমতের কী হবে। টেলিভিশন ও সংবাদপত্র বিষয়টিকে কীভাবে নেবে। আচ্ছা, শুধু আমাদের নাগরিকদের আনতেই কি নৌবহর সেখানে যেতে পারে না? কিসিঞ্জারের স্বগতােক্তি কিন্তু যুদ্ধবিমানগুলাে আমরা কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব? আমরা কি নিজেরাই নিজেদের পথ রুদ্ধ করছি? নিক্সন বলেন, তাহলে ওখানে নৌবহর নিয়ে লাভটা কী হবে? কিসিঞ্জারের জবাব, এটা হবে একটা প্রতীকী পদক্ষেপ। লােকে। ভাববে এরপর আরাে কিছু নিশ্চয় আসবে। ব্রেজনেভের চিঠিতে অখণ্ড পাকিস্তানের ইঙ্গিত!

আজ ১০ ডিসেম্বর। একাত্তরের এদিন সংক্রান্ত সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন মার্কিন নথিপত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, বৃহৎ শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এ পর্যায়ে এসে পূর্ব পাকিস্তানের হাল ছেড়ে দেয় পুরােপুরি। সপ্তম নৌবহর প্রেরণসহ অন্যান্য তৎপরতা দৃশ্যত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতীয়মান হলেও এসবের চরম লক্ষ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা। কিন্তু তাও পাকিস্তানের স্বাধীনতাসার্বভৌমত্ব রক্ষার কোনাে পবিত্র উদ্দেশ্যে নয়। বিষয়টি ছিল কৌশলগত। সপ্তম নৌবহর যখন বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয় তখন পূর্ব পাকিস্তানে আত্মসমর্পণের তােড়জোর শুরু হয়ে গেছে। জাতিসংঘে জেনারেল রাও ফরমান আলীর। আত্মসমর্পণের বার্তাও পৌছে গেছে। সে কারণে এমনও ধারণা করা যেতে পারে যে, পাকিস্তানের মিত্র মুসলিম ও আরব দেশগুলােও ১০ ডিসেম্বর এসে অস্ত্র পাঠাতে । উদ্যোগী হয়ে ওঠে মূলত পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষায়। নিক্সন ও কিসিঞ্জার ডিসেম্বরের এই লগ্নে বাংলাদেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রকাশ্যে । পাকিস্তানের অখণ্ডতার সপক্ষে কথা বলেন। এটা ছিল কৌশলগত।

তারা সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ব্রেজনেভের সঙ্গেও আলােচনা অব্যাহত রাখেন। ভাবেন, যদি তার মনের নাগাল মেলে। পশ্চিম পাকিস্তানকে ভারত দখল করে নেবে। ‘-দিল্লির এই আশ্বাস সম্পর্কে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ভরসা পাচ্ছিল না। আজ নিউইয়র্কে কিসিঞ্জার জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি হুয়াং হুয়ার সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টার এক বৈঠকে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। কিসিঞ্জার তাকে জানান, ৬ ডিসেম্বরে লেখা কিসিঞ্জারের চিঠির জবাব গতকাল সকালেই পাওয়া। গেল। একটি রাজনৈতিক সমঝােতার জন্য পাকিস্তান সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের। মধ্যে সংলাপ শুরু হওয়া দরকার।’ ব্রেজনেভের এ কথার অর্থ পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রাখা সাপেক্ষে কি না তা নিয়ে কিসিঞ্জার-হুয়াং হােয়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। ব্রেজনেভ লিখেছেন, ‘সঙ্গতকারণেই এই সমঝােতা শুরু হওয়া উচিত যেখানে তা ভেঙে যায়।’ কিসিঞ্জার ব্যাখ্যা দেন, তার মানে হচ্ছে সংলাপের ভিত্তি হবে অবিভক্ত। পাকিস্তান। দোভাষী তাং এ সময় একাধিকবার কিসিঞ্জারের কাছ থেকে বিষয়টি বুঝে নেন। কিসিঞ্জার এই চিঠি লাভ করেন ওয়াশিংটনে সােভিয়েত মিনিস্টার কাউন্সিলর ইউরি ভরােনৎসােভের কাছ থেকে। কিসিঞ্জার বলেন, আমি তাকে বললাম, ২৫ মার্চে।

পাকিস্তান তাে অবিভক্ত ছিল। তিনি আমার সঙ্গে একমত হন। গতকাল আমরা। জানলাম, সােভিয়েত কৃষিমন্ত্রী মাৎসকেভিচ ওয়াশিংটনে আসছেন। তিনি ব্রেজনেভের বন্ধু। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিসিঞ্জার বলেন, ভরােনৎসােভের সঙ্গে ১৫ মিনিটের আলােচনায় আমি প্রেসিডেন্টের একটি বিবৃতি পড়ে শােনাই। এতে প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানে হামলা চালানাে হলে রুশমার্কিন বিরােধ অনিবার্য হয়ে পড়বে। আজ ব্রেজনেভের কাছে প্রেরিত জবাবে বলা হয়েছে, “পূর্ব পাকিস্তানের পাক সামরিক অধিনায়ক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। এখন যদি পশ্চিম পাকিস্তানেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হয়, তহলে আমরা ধরে নেব, ভারতীয় আগ্রাসন এখন সমগ্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। এবং তা এমন এক দেশের বিরুদ্ধে, যাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’

নিক্সনের এই চিঠি বিশ্লেষণে এমন ইঙ্গিত মেলে যে, পূর্ব পাকিস্তান নয়, এখন ভারত পশ্চিমের দিকে হাত বাড়ানাের ফলে তারা বেশি শঙ্কিত। লক্ষণীয়, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিগত কোনাে বাধ্যবাধকতার কথা এভাবে রুশ নেতাদের কাছে উল্লেখ করেননি। আমরা জর্ডান, ইরান, সৌদি আরব ও তুরস্ককে বলেছি ভিন্ন চ্যানেলে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিতে। তাদের বলেছি, তােমরা অস্ত্র দিলে আমাদের কিন্তু প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু এটা হবে লােক দেখানাে। আমরা কিন্তু উচু গলায় সােচ্চার হব না। আজ জর্ডানের চারটি বিমান রওনা দেবে। সপ্তাহান্তে আরাে ২২টি যাবে। অদূরভবিষ্যতে তুরস্ক দেবে ছয়টি বিমান। উপরন্তু আমাদের বেশকিছু রণতরী পশ্চিম প্যাসিফিক থেকে ভারত মহাসগরের দিকে যাত্রা শুরু করছে। চারটি ডেস্ট্রয়ার ও একটি ট্যাঙ্কারসহ একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং একটি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ও দুটো ডেস্ট্রয়ার। মার্কিন নৌ সমরসজ্জার কাছে সােভিয়েত শক্তি যে কত নগণ্য তাও কিসিঞ্জার পুনঃপুন উল্লেখ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে পাক সামরিক শক্তি ধূলিসাৎ এবং পশ্চিম পাকিস্তানে বড়জোর দুই সপ্তাহের জ্বালানি রয়েছে বলে কিসিঞ্জার উল্লেখ করেন।  কিসিঞ্জার চীনা প্রতিনিধিদের এ সময় ম্যাপ দিয়ে দেখিয়ে অধিকতর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেন। তবে চীনা রাষ্ট্রদূত কোনাে উৎসাহ প্রকাশ করেননি। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান ভারত দখল করে নিলেও তারা সামরিকভাবে আদৌ জড়াবে কি না সে ব্যাপারে কোনাে আভাস দেননি। তবে পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের আগ্রাসনকে তিনি। চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ‘মাঞ্চুকো’র সঙ্গে তুলনা করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড মাঞ্চকো জাপানি সহায়তায় নামমাত্র স্বাধীনতা লাভ করে। এটি টিকে থাকে ১৯৩১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত।

মার্কিন নথি অনুযায়ী একটি গােপন সূত্রমতে (নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে অনুমান করা চলে ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ কোনাে সূত্রে সিআইএ ইন্দিরার কিচেন কেবিনেটের খবর পেত।), চীন ঢাকার পতনের আগমুহূর্তে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে-এ ধরনের একটি উক্তি করেছেন ইন্দিরা। এদিকে ইয়াহিয়া আজ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে ধরা গলায় বলছেন, দেখুন, ভারত যা চাইছে, ঠিক তাই। পূরণ করছে রাশিয়া। কিন্তু ফারল্যান্ড তাকে নতুন কিছুই জানাতে পারেননি। জাতিসংঘে পাক স্থায়ী প্রতিনিধি ইকবাল আখুন্দ লিখেছেন, আমি আজ কেনেডি এয়ারপাের্টে জানলাম, জেনারেল রাও ফরমান আলীর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পেয়েছে জাতিসংঘ। এই বার্তার মূল কথা, তারা আত্মসমর্পণে প্রস্তুত। একটু আগে নিউইয়র্কে পেীছে ভুট্টো এ কথা জেনে রীতিমতাে হতবাক।’ হামুদুর রহমানের রিপাের্ট মতে, এই বার্তায় আত্মসমর্পণ না বলে যুদ্ধবিরতি এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, বাঙালিরা তাদের। ভূখণ্ডে আর এক মুহূর্তের জন্যও ভারতীয় সৈন্য দেখতে চায় না।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন