You dont have javascript enabled! Please enable it!

পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে সেটা ইন্দিরার জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। এদিকে আমেরিকা যেতেও তাকে পার্টি নিষেধ করছে। ইন্দিরা এরকম পরিস্থিতি দেখেছেন যখন তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খারাপ সময়ে লন্ডনে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্সের সাথে ইন্দিরার বৈঠক হয়। মুজিবের সাথে ইয়াহিয়ার বৈঠকে ভারত কী রাজী হবে? কঠিন সিদ্ধান্ত বটে। মুক্তিযুদ্ধের পেছনের আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছিলো চমক দেবার মত।
Yes, Indira experienced the worst situation at her stay in England during the WWII. However, things are roaring just over her neck now. She couldn’t decide of visiting US as the party members are protesting. There was a meeting with Mr Rogers (US Secretary of State) where she had to decide whether it would be a better decision to accept Mujib-Yahya meeting if arranged.
(Intro by: Dr Razibul Bari)

মুজিব-ইয়াহিয়া সংলাপে ভারতের সম্মতি

পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠক হয় ৫ নভেম্বর, ১৯৭১। রজার্স বৈঠকের শুরুতে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে ইন্দিরার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চান। ইন্দিরা বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলির কারণে ভারতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এই হুমকি কেবল ভারতের সীমান্তে পাক-সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে নয়, এটা ব্যাপকভিত্তিক উদ্বাস্তু স্রোত এবং এটা যাতে আরাে তীব্র হয়, সে লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন থেকে উদ্ভূত। এটা শুধু ভারতের ওপর অর্থনৈতিক বােঝা সৃষ্টি করেনি। এটা রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যারও জন্ম দিয়েছে। এটা এমনকি ভারতীয় স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে। ইন্দিরা উল্লেখ করেন যে, এই সংকট তার ওপর এক বিরাট চাপ বয়ে এনেছে। এমনকি তার মন্ত্রিসভার মধ্যেও এই অনুভূতি রয়েছে যে, দুর্বল নীতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ভারতের নিরাপত্তাকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। ইন্দিরা স্মৃতিচারণ করে বলেন, যুদ্ধের কিছু অভিজ্ঞতা আমারও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ মূহূর্তগুলােতে তিনি লন্ডনে ছিলেন। সুতরাং তিনি অনুধাবন করতে পারেন কোনাে সংঘাতের বৃহত্তর প্রভাব কী হতে পারে।

কিন্তু ভারতকে সংঘাতের দিকে ধাপের পর ধাপ ঠেলে দেয়া হয়েছে। তার অধিকাংশ সহকর্মী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই অভিমত দিয়েছেন যে, এই মুহূর্তে তার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, তিনি যদি এই সফর বাতিল করতেন তাহলে উত্তেজনা আরাে বৃদ্ধি পেত। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সফর তিনি সম্পন্ন করবেন। তিনি তার সেনাবাহিনীকে বলে এসেছেন, যদি হতাহতের ঘটনা ঘটে তাহলে যেন পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া থেকে তারা বিরত থাকে। কিন্তু এ কথা পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তিনি দিল্লিতে প্রতিদিন বার্তা পাঠাচ্ছেন। ইন্দিরা বলেন, পার্লামেন্টে যদিও তার বিরাট সংখ্যা গরিষ্ঠতা, কিন্তু এই ইস্যুতে সবকিছুই তার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে নেই। রজার্স জবাবে বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত যে, উত্তেজনা প্রশমন ঘটাতে হবে। যদি পাক-ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাধে, তাহলে তা হবে বিশ্বের জন্য এক ট্রাজেডি । আমরা ভারতের সমস্যা বুঝি। এ সমস্যা আসলে অন্যের দ্বারা সৃষ্ট। আমরা সত্যিই কিছু পদক্ষেপ নিতে চাই। আশা করি, তাতে ভারতের সম্মতি থাকবে। প্রথমত, পাকিস্তানকে আমরা অস্ত্রের সরবরাহ বন্ধ করে দেব। পাকিস্তানের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের অস্ত্র এখন নিউইয়র্কের ডকে পড়ে আছে।

তাদের অস্ত্র দেয়ার কথা আমরা ভাবছি না। এ বিষয়ে আমরা আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দকে এবং পরে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাই। দ্বিতীয়ত, আমরা এই অবস্থান গ্রহণ করছি। যে, ভারত ও পাকিস্তানকে একপাল্লায় ওজন দেয়া ঠিক হবে না। সত্যি বলতে কী, এটা আমরা কখনাে করিওনি। আর এটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা ইয়াহিয়াকে বলেছি, তার পক্ষে একতরফা সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে কি না? তিনি বলেছেন, তিনি এটা করবেন। তৃতীয়ত, আমরা এটাও স্বীকার করি যে, এটা নেহাৎ কোনাে সামরিক সমস্যা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা। আমরা ইয়াহিয়া এবং আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে সক্রিয় আলােচনায় নিয়ােজিত রয়েছি। ইয়াহিয়া এই মর্মে সম্মতি জানিয়েছেন যে, মুজিব কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দেয়া বাংলাদেশের কোনাে নেতার সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন। আমরা মনে করি, এটা একটা উৎসাহব্যঞ্জক ইঙ্গিত। এ রকমের আলােচনার প্রক্রিয়ায় সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক সমঝােতার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এই প্রক্রিয়া যাতে শুরু হয়, সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আপনাকে এতক্ষণ যা। বললাম, তা-ই শুধু আমরা করতে পারি। আমরা ইয়াহিয়াকে এটা বলতে পারি না যে মুজিবকে মুক্তি দিন। এটা বললেও কাজ হবে না। আমরা আশা করি, ইয়াহিয়া যদি সত্যি একতরফাভাবে সৈন্য প্রত্যাহার কার্যকর করেন তাহলে ভারত যেন সমরূপ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বিবেচনা করে। ইন্দিরা জবাবে বলেন, ইয়াহিয়া হয়তাে পশ্চিম সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।

কিন্তু ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে হাকসার এই সময় ব্যাখ্যা করেন যে, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস থেকে স্বপক্ষ ত্যাগের ঘটনায় পাকিস্তান সরকার সীমান্তে নিয়মিত সেনাবাহিনী মােতায়েন করেছে। আর এটা স্পষ্টভাবেই বিধির লঙ্ঘন। এই সৈন্যবাহিনী ক্রমাগতভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে। কাউল উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের ঘাঁটিগুলাে সীমান্তের কাছাকাছি এবং সে কারণেই তাদের পক্ষে অধিকতর সহজে প্রত্যাহার করে নেয়া। সম্ভব। রজার্স ও সিসকো ইঙ্গিত দেন যে, সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে আমরা কিন্তু ইয়াহিয়ার সঙ্গে বিস্তারিত আলােচনায় যাইনি। তবে আপনারা যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা বােধগম্য। আমরা আশা করি, ভারতীয়রা এ ব্যাপারে পাকিস্তানের কাছে সহযােগিতা পাবেন । উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযােগ্য কোনাে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়েও আলােচনা হতে পারে। এ পর্যায়ে আরাে কিছুক্ষণ সমঝােতার প্রস্তাব নিয়ে আলােচনা হয়। সিসকো ইতি টানেন এই বলে, আমরা যে প্রস্তাব রেখেছি ভারতীয়রা যদি তা গ্রহণযােগ্য মনে। হয়, তাহলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পরে আলােচনা করা যেতে পারে। সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে কাউল অবশ্য উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক সমঝােতা ছাড়া। প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটলে এই ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যে, সংকট বুঝি নিয়ন্ত্রণে। এসে গেছে। রজার্স উল্লেখ করেন, আসন্ন যুদ্ধের হুমকির মুখে রাজনৈতিক সমঝােতায় পেছা কঠিন।

যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব না-ও হতে পারে। উপরন্তু রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া যুদ্ধের সূচনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ও ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, ইয়াহিয়া আসলেই রাজনৈতিক সমাধান চান কি না? রজার্স ও সিসকো উল্লেখ করেন যে, আমাদের বিশ্বাস, ইয়াহিয়া এ ধরনের একটি সমাধানে সত্যিই আন্তরিক। এ সময় ইয়াহিয়ার তরফে যে সমাধানের কোনাে ইচ্ছা নেই এটা বোেঝাতে ভারতীয় প্রতিনিধি দল পূর্ব পকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিস্তারিত উল্লেখ করেন। তারা প্রশ্ন রাখেন, আচ্ছা। বলুন তাে, আপনাদের হাতে কি এমন প্রমাণ আছে, যা থেকে বােঝা সম্ভব ইয়াহিয়া সত্যিই রাজনৈতিক সমাধান চান? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাবে বলেন, আমরা আপনাদের এটা স্পষ্ট করে বলতে পারি, এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইতােমধ্যেই যা করার তা সম্পন্ন করেছে। হাকসার এই সময় উল্লেখ করেন, এটা কিন্তু এমন কোনাে বিরােধ নয়।

ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভারতের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়া কিন্তু অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সমালােচনা হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। বরং এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা বােঝাপড়ার জন্য এ বিষয়টা স্পষ্ট হওয়ার দাবি রাখে। এল কে ঝা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, এমন কেউ আছেন, যিনি বলবেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরাে বেশি কিছু করা উচিত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলােচনার শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন বিশ্বের বহু স্থানে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা এটা বুঝতে পারছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণে ভারতের ঘাড়ে বিপদ চেপেছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের বিপদ এড়াতে সম্ভব সব চেষ্টা করছে। এই আলােচনার বিবরণী ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ এক টেলিগ্রামের মাধ্যমে ভারতের মার্কিন দূতাবাসে প্রেরণ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স স্বাক্ষরিত এই টেলিগ্রামের শেষ পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে কাউল সিসকোকে বলেন, ভারত সরকার যদি এ মর্মে নিশ্চয়তা পায় যে মুজিবের সঙ্গে যােগাযােগ করা হয়েছে এবং মুজিব কোনাে প্রকারের চাপ ছাড়াই ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝােতার জন্য একজনকে নিয়ােগ করেছেন, তাহলে তেমন প্রস্তাবের প্রতি ভারত তার সতর্ক সমর্থন ব্যক্ত করতে পারে।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!