পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাঙলাদেশ
বাঙলাদেশের জয়যাত্রা
বাহিনী অনাবশ্যক ধ্বংস ও ক্ষয় ক্ষতি এড়াবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন কিন্তু স্বভাবতঃই সবটা এড়ানাে সম্ভব হয়নি। সুতরাং নতুন বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তােলার বিরাট দায়িত্ব আজ সামনে এসে পড়েছে। এছাড়া রয়েছে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে পুনর্বাসন দেবার সমস্যা।
এই পুনর্গঠনের সমস্যা বাদেও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে আগামী দিনের রাষ্ট্র কাঠামাের রূপ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রকে আদর্শ থেকে বাস্তবে রূপায়িত করার পথ চিহ্নিত করতে হবে।
সর্বোপরি একথা মনে রাখা দরকার, সাম্রাজ্যবাদ এবং তার তাঁবেদাররা পরাজিত হলেও তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যেতে ছাড়বে না। পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলির ভুট্টোর বক্তৃতায় বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়ে যাবার সুরই ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। শেখ মুজিবুর রহমান আজো পাকিস্তানের হাতে বন্দি। তাঁর মুক্তির জন্য সংগ্রাম আজো শেষ হয়নি।
এই অবস্থায় আজ স্বভাবতই প্রয়ােজন বাঙলাদেশের অভান্তরে সর্বব্যাপক ঐক্য ও সংহুতি। নতুন প্রশাসন সেই সংহতি ও ঐক্য সুদৃঢ় করার জন্য সমস্ত রকম উদ্যেগ নেবেন, বাঙলাদেশের বন্ধুস্থানীয় সমস্ত মানুষই এই আশা পােষণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বাঙলাদেশের মানুষ এক নতুন চেতনায় উন্নীত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ব্যাপক ঐক্য গড়ে উঠেছিল সেই ঐক্য ও নতুন চেতনার প্রতিপালন সংবিধান, প্রশাসন এবং জনজীবনের সর্বস্তরে দেখা গেলে তবেই মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য স্বাধীনতার পরবর্তী স্তরে সার্থক হয়ে উঠবে। নতুন বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে, সাম্রাজ্যবাদী এবং তাদের তাঁবেদারদের ভবিষ্যৎ চক্রান্ত ব্যর্থ করতে, মুজিবুর রহমানের মুক্তি সুনিশ্চিত করতে বাঙলাদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম সাম্প্রতিক অতীতের মতাে আগামী দিনেও সব চেয়ে বড় প্রয়ােজন।
মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে বাঙলাদেশের মানুষ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তেমনি আগামী দিনে নতুন দেশ গড়ে তােলার কাজেও তারা এক নতুন ইতিহাস রচনা করবেন এই বিশ্বাস আমাদের আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা অভিনন্দন জানাই স্বাধীন বাঙলাদেশের স্বাধীন মানুষকে শুভেচ্ছাই জানাই তাদের নতুন পথে যাত্রার শুভলগ্নকে।
সূত্র: সপ্তাহ, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১