You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.12 | কিউবার উদ্বাস্তুদের সঙ্গে তুলনা দেন ইন্দিরা - সংগ্রামের নোটবুক
কিউবার উদ্বাস্তুদের সঙ্গে তুলনা দেন ইন্দিরা
২২ অক্টোবর, ১৯৭১
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে দেয়া এক স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল। কোন পক্ষ আগে শুরু করবে সে ব্যাপারে কোনাে তথ্যই আমাদের হাতে নেই। ২৪ অক্টোবর থেকে তিন সপ্তাহব্যাপী প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর প্রস্তাবিত সফর হতে পারে উত্তেজনার পর্যায় নির্ধারণী সম্ভাব্য সূচক। আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের জন্য অনুরােধ জানিয়েছি। বিশেষ করে আমরা তাদের বলেছি, তারা যেন সীমান্ত থেকে নিজেদের সৈন্য সরিয়ে নেয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘরােয়াভাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ভারত বলেছে, তারাও প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করবে। তবে পাকিস্ত নিকে আগে শুরু করতে হবে। এখন আমরা চিন্তা করছি, যদি রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড রাজি হন তাহলে ইয়াহিয়াকে আমরা সুপারিশ করতে পারি। উত্তেজনা হ্রাস এবং ভারতের প্রস্তাবে ইয়াহিয়ার সাড়া নিশ্চিত করতে সীমিতভাবে একতরফা সৈন্য প্রত্যাহার কার্যকর করা যায় কি না। আমাদের বিশ্বাস, ইয়াহিয়া তার সামরিক অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ। করেই এতে সায় দিতে পারেন। এর ফলে ভারত তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে একটা চাপ অনুভব করবে। এটা অনস্বীকার্য যে, গ্রহণযােগ্য রাজনৈতিক সমঝােতার অভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অব্যাহতভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ডকে বলেছি- তিনি যদি উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে ইয়াহিয়াকে। বলে দেয়া হচ্ছে যে রাজনৈতিক সমঝােতা চাইলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা এক্ষেত্রে যে বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি তা হলাে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ইয়াহিয়ার সংলাপ শুরু করা। কারণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ইতােমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করতে চান। তবে এখনাে পর্যন্ত বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ এটা স্পষ্ট করে চলেছেন যে, স্বাধীনতা ছাড়া সমঝােতা বৃথা এবং বাংলাদেশের কোনাে প্রতিনিধি দলের পক্ষে শুধু মুজিবই কথা বলবেন। ৯ অক্টোবর জাতিসংঘ মহাসচিব ইউথান্ট ইয়াহিয়া ও গান্ধীর মধ্যে একটি সমঝােতার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এই উদ্যোগ সমর্থন করি। এই মুহূর্তে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারতের বিরােধ যাতে আলােচিত না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। নভেম্বর ৪ ও ৫ তারিখে গান্ধী যখন নিউইয়ক সফর করবেন, তখন এবং এই সময়ের ভেতরে আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে ঘরােয়াভাবে আলাপ-আলােচনা চালিয়ে যাব। মিসেস গান্ধীর সফরকালে কিছু ভুল বুঝাবুঝি নিরসনে আপনার উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে বলেই আশা রাখি। তবে একই সঙ্গে বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মধ্যে সংলাপের ব্যাপারে আমরা তার সহযােগিতার জন্য চেষ্টা করে যাব। তাকে বােঝাতে হবে, পূর্ব পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য তার সহযােগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা বিশ্বাস করি, পূর্ব পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ভারতকে অবশ্যই ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে ভারতভিত্তিক গেরিলা তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে দিল্লির কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুযােগ রয়েছে। (ফুটনােট জাতীসংঘ মহাসচিব ইউথান্ট ১৯ অক্টোবর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারত ও পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গান্ধী ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে তার লেখা চিঠি হস্তান্তর করেন। এই চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব দুদেশের সীমান্তে অবনতিশীল পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে তার সেবা করার মনােভাব ব্যক্ত করেন ।) ২৭ অক্টোবর ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জন্য প্রস্তুত এক সার সংক্ষেপে বলা হয়- পূর্ব পাকিস্তানে একটি ব্যাপকভিত্তিক দুভিক্ষ এড়ানাে সম্ভব হয়েছে। ডেপুটি এইড এডমিনিস্ট্রেটর মরিস উইলিয়ামস পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষের বিপদ সম্পর্কে তদন্ত করেছিলেন।
তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দুর্ভিক্ষ এড়ানাে সম্ভব হলেও আগামী মার্চ আবার বিপদ ডেকে আনতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখনাে এমন পর্যায়ে যে, ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে খাদ্য সরবরাহ আরাে জটিল হয়ে পড়বে। ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ ওয়াশিংটনে নিক্সন ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে বৈঠক হয়। এ সময় ভারতীয় পক্ষে পরমেশ্বর নারায়ন হাকসার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ড. হেনরি কিসিঞ্জার উপস্থিত ছিলেন। এই আলােচনায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা উল্লেখ করেন যে, ভারতকে গেরিলা তৎপরতায় সমর্থন দানের জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি মােটেই পরিষ্কার নয়। তিনি এ প্রসঙ্গে ফ্লোরিডাভিত্তিক কিউবার উদ্বাস্তুদর মার্কিন সরকারের সহায়তা দানের কথা উল্লেখ করেন। কিউবার মেইনল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই উদ্বাস্তুরা এক সময় আন্দোলনে যােগ দিয়েছিল।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন