You dont have javascript enabled! Please enable it!
মুজিবের মুক্তিতে কিসিঞ্জারের হস্তক্ষেপ
৮ অক্টোবর, ১৯৭১
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এল কে ঝা, হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে এদিন আলােচনা করেন, বিকেল ৪টা ১১ থেকে ৪টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে সামনে রেখে ঝায়ের অনুরােধে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হােয়াইট হাউসে কিসিঞ্জারের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের বিবরণ থেকে দেখা যায়, কিসিঞ্জার ঝাকে বলেছিলেন একটি রাজনৈতিক সমঝােতার জন্য এক বছরের একটা বিরতি দরকার। ঝা এ কথার জের ধরে বলেন- ভারত কিন্তু এ বছরের শেষ নাগাদ কিছু একটা সামরিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ১ কোটি বাঙালি উদ্বাস্তু ভারতের রাজনৈতিক সংহতি ভেঙে দেবে। তারা সবাই বাঙালি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোথাও যাবে না। আর পশ্চিমবঙ্গে তারা ক্ষমতার ভারসাম্য সম্পূর্ণরূপে মাওবাদী ঘরানার দিকে নিয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, যুদ্ধের চেয়েও অর্থনৈতিক ক্ষতি ভারতকে নিয়ে যাবে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। ড. কিসিঞ্জার জবাবে বলেন, আপনাদের একটা কথা বলে দিতে চাই, আপনারা যদি যুদ্ধ শুরু করেন, আমরা তাহলে সব ধরনের অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে দেব। সুতরাং যুদ্ধ শুরু করতে চাইলে এই খেসারতটা বিবেচনায় রাখবেন। এদিনের আলােচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রদূত ঝা হঠাৎ প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলেন, আমি একটি বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয়, তাহলে মুজিবকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানকে একটা আবেদন জানাবেন, মুজিব যাতে বাঙালির রাজনৈতিক জীবনে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করতে পারেন। ঝা ব্যাখ্যা দেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি উদারপন্থিদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতেই এটা প্রয়ােজন। কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (খন্দকার মােশতাক আহমেদ) ইতােমধ্যেই মাওবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন।
১১ অক্টোবর, ১৯৭১ করাচির কনসাল জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলােচনার বরাত দিয়ে জানাচ্ছেন, আমি প্রেসিডেন্টকে বললাম- রাজনৈতিক সমঝােতায় আপনার আগ্রহে আমি বেশ প্রীত বােধ করছি। কিন্তু নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ’ এর সঙ্গে আলােচনার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে এই সম্ভাবনা এখনাে উঁকি দেয় যে, বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের একটি সংলাপ সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে জটিল ও অব্যাহতভাবে আকর্ষণীয় তা হলাে শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ  তিনি এখনাে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের অনুপ্রেরণার উৎস। ইয়াহিয়া বললেন, তিনি কিন্তু এটা অস্বীকার করছেন না যে, মুজিব এখনাে পর্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গত বছরে নির্বাচনের সময় মুজিবের শক্তি সম্পর্কে তারা সম্ভবত খুব বেশি অনুমান করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের একটি উল্লেখযােগ্যসংখ্যক ভােটার ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভােট দেননি। যারা মুজিবের পক্ষে ভােট দিয়েছেন, তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের’, অর্থাৎ তারা হিন্দু। যারা ভােট দেননি তাদের অনেকেই পরে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। আরেকটি পৃথক টেলিগ্রামে দেখা যায়, মার্কিনিরা পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি মুজিবকে রাজনৈতিক সমঝােতার জন্য তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছিল। কনসাল জেনারেল লিখেছেন, আমি ইয়াহিয়ার কাছে নির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলাম- মুজিবকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে তার নতুন কোনাে পরিকল্পনা রয়েছে কি না? জবাবে ইয়াহিয়া বলেন, মুজিবের বিচার তাে এখনাে চলছে।
তিনি যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়াটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি তখন। তার কাছে আসবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তার থাকবে। ইয়াহিয়া এ কথা অবশ্য আমাদের আগেও জানিয়েছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করলেন যে, মুজিবের মৃত্যু তিনি নিশ্চিত হতে দেবেন না। আর যখন বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসবে অর্থাৎ ইয়াহিয়া রাজনৈতিক সমঝােতা সফল হওয়া সাপেক্ষে নতুন বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, সেই সরকারে সঙ্গত কারণে পূর্ব পাকিস্তানিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। আর তারাই মুজিবের দণ্ডের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ইয়াহিয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, সেই বেসামরিক সরকার নিশ্চিতভাবেই মুজিবকে রক্ষা করবে। আমি বললাম, আপনি যেসব সময়ের কথা বলছেন, তা তাে সুদূরপ্রসারী। কে জানে এমন দিন কত দূরে! কিন্তু আমার এখনই জানতে ইচ্ছা করছে, রাজনৈতিক সমঝােতা এবং মুজিবের ভূমিকার প্রশ্নে আপনার কাছে নতুন কিছু প্রকাশের মতাে আছে কি না? আমি তাকে আরাে স্মরণ করিয়ে দিলাম, আপনি বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলােচনা করতে চান ভালাে কথা। কিন্তু মুজিবের ভূমিকাই তাে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে কোনাে প্রত্যক্ষ আলােচনা শুরুর জন্য মুজিব ছাড়া তাে উপায় নেই। আমি ইয়াহিয়াকে আরাে মনে করিয়ে দিলাম, এ ধরনের আলােচনায় পাকিস্তান সরকারের অংশগ্রহণ প্রশ্নে তার প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি আমাদের ইতঃপূর্বে জানিয়েছেন। আমি তাকে বললাম, কলকাতায় বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের ওপর এই মূহূর্তে বহুমুখী চাপ। আলােচনার উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে তারা সক্ষম হতে পারছে না। এর মধ্যে একটি বড় কারণ হলাে এ ধরনের সংলাপে মুজিবের ভূমিকা থাকতেই হবে।
ইয়াহিয়া আমার কথা শুনে বললেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি তাে স্বাধীন নন, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের জনমত মুজিবের অনুকূলে নয়। তারা মুজিবের নিন্দায় উচ্চকিত। আজ যদি মুজিবকে আমি মুক্ত করে দেই তাহলে একজন পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাও পাওয়া যাবে না, যিনি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবেন। তার সঙ্গে তারা সংলাপেও বসবে না। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলাের প্রধানরাও মুজিবের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। সাম্প্রতিক মাসগুলােতে তিনি এসব দলের নেতাদের সঙ্গে আলােচনা করেছেন। ইয়াহিয়ার কথায় এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের শ্রদ্ধেয় প্রবীন নেতা নূরুল আমীনও। রয়েছেন। ইয়াহিয়া বলেন- দেখুন, মুজিব নিয়ে আমার ভাবনা আপনাকে আমি বলতে পারি। আজ আমি যদি মুজিবকে ক্ষমা করে দেই তাহলে জনগণ আমাকে চেপে ধরবে। তারা বলবে, কেন তাহলে এত দুঃখ ও ডামাঢোল। তারা প্রশ্ন তুলবে, তাহলে ইয়াহিয়া কেন গদিতে টিকে থাকবে? যদিও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতার প্রতি আমার কোনাে মােহ নেই, কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে জটিল সমস্যা মােকাবেলায় তার তাে কর্তব্য রয়েছে। তিনি বলেন, আমি একজন নিষ্ঠুর লােক নই, একজন স্বাভাবিক আদম সন্তান মুজিবের প্রতি আমার কোনাে ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাসের ঘটনাবলিকে আমি উপেক্ষা করতে পারি না।
 কনসাল জেনারেল রেনল্ডস এ পর্যায়ে মন্তব্য করেন যে, ‘যদিও বিশ্ব জনমতের দিক থেকে মুজিব প্রশ্নে ইয়াহিয়া সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীলতা সহ্য করেছেন  কিন্তু তিনি তার কথাবার্তায় কোনােভাবেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাননি। আমাদের আলােচনার এই অংশে তিনি কোনােভাবেই অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। বিপরীতক্রমে, তার ওপর এক্ষেত্রে যেসব চাপ এসেছে তিনি তা শান্তভাবে ব্যাখ্যা করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি তার অবস্থানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতেও ছিলেন উদগ্রীব। তিনি সম্ভবত আমাকে এমন ধারণা দিলেন যে, তিনি এখন যা করছেন তার সবটাতেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে না। তার সামনে বিকল্প সীমিত। কিন্তু তাকে চলতেই হচ্ছে। ১২ অক্টোবর, ১৯৭১ ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ও পররাষ্ট্র সচিব কাউলের সঙ্গে। কিটিং প্রেরিত টেলিগ্রামে বলা হয়, সিং দাবি করেছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহ বাঙালি জাতীয়তাবাদের শেকড়ে প্রােথিত। এটি তার নিজস্ব গতিতে বেগবান, ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়। পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যেই বিদ্রোহ ব্যাপক ও গভীরভাবে ক্রিয়াশীল। আন্তঃসীমান্ত তৎপরতার বিষয়টি অতিরঞ্জন ছাড়া কিছুই নয়। তবে এটাই বাস্তবতা যে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, ভারত সরকার কিছুতেই পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের ভারতে আগমণ বা প্রস্থানের সময় গুলি করে হত্যা করতে পারে না।
সিং উল্লেখ করেন যে, বিদ্রোহ কতদিন ধরে চলবে এবং তা কালক্রমে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি আক্রমণ নিশ্চিত করে কি না তা নির্ভর করছে পাকিস্তান সরকারের ওপর। তার কথায়, বিদ্রোহ বর্তমানে যে মাত্রায় চলছে তা। কার্যত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের প্রতি মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া মাত্র। কিটিং লিখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার ভালােভাবেই অবগত রয়েছে যে, মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের কাছে এই খবরও রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানি জেনারেল ও আওয়ামী লীগের কতিপয় লােকের মধ্যে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের আরজি হচ্ছে, কোনাে প্রকৃত রিকন্সিলিয়েশন। চাইলে তা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জনসমক্ষে আনা  কিন্তু যদি তারা আওয়ামী লীগের মধ্যে। ভাঙন ধরাতে চায় তাহলে তাদের পক্ষে তা হবে এক বিরাট ভুল। বর্তমান পরিস্থিতি খুবই সােজাসাপটা। ইয়াহিয়া চাইলেও মুজিব এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে । উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ তাদের হাতেই পূর্ব পাকিস্তানের সত্যিকারের।
কিন্তু পাকিস্তান যদি কোনাে অজুহাতে ভারতের সঙ্গে ঝামেলা পাকাতে আসে। তাহলে ভারত নিজেকে রক্ষা করবেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এমন ঘটনাবলি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সিং আরাে উল্লেখ করেন, দয়া করে আপনার সরকারকে জানিয়ে দিন, আমরা কোনাে প্রকার উত্তেজনা বা ভয়ের। বশবর্তী হয়ে কথা বলছি না। আমরা এই প্রশ্ন রাখছি- কেন ওয়াশিংটন এমনটা। ভাবতে বসেছে যে, পাকিস্তান যদি কিছু শুরু করে তাহলে তা কেন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? আমরা দুদেশের মধ্যে যে কোনাে ধরনের ভুল বুঝাবুঝির । অবসানের সম্ভব সব চেষ্টাই চালিয়ে যাব। এ বিষয়টি আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে সামনে রেখে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। মিসেস গান্ধী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির সম্পূর্ণ অবসান দেখতে আগ্রহী । কিন্তু তার পরেও যদি । কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে তার বােঝা বহন করা তার জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক।’ কিটিং লিখেছেন- আমি তাকে বললাম, আমি কখনােই বাংলাদেশের। প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি। যদিও আমার কতিপয় জুনিয়র কর্মকর্তা কলকাতা ও দিল্লিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে শ্রবণ করেছে তাদের কাহিনী ।
আমি এ সময় তার কাছে কমিউনিস্টপন্থি ‘পেট্রিয়ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযােগের দিকে তার মনােযােগ। আকর্ষণ করি। অভিযােগ হচ্ছে- আমি মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছি। আমি বললাম, আমাদের তাে  তেমন কিছু করার ক্ষমতা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করলাম, আমরা তেমন কিছুই। করিনি। তবে আমি স্বীকার করলাম যে, আমরা এই মর্মে কিছু বিরােধাত্মক কথাবার্তা জানতে পেরেছি শুনেছি, বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে মতবিরােধ দেখা। দিয়েছে। কিন্তু এমন কিছুর অবনতি দেখা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এটা জানা আছে যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপের চেষ্টা চলছে। পেট্রিয়ট পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি জানার কোনাে প্রয়ােজন মনে করে না ভারত সরকার। আমি তাকে বললাম, একটা সংলাপ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দৃশ্যত এখনাে বিরাজমান। কিন্তু উক্তরূপ মতবিরােধ থেকে ফায়দা লােটার কিছু নেই। যা হােক সিং বললেন, যুক্তরাষ্ট্র মুজিবকে বাইপাস করতে চাইছে। আমি তাকে বললাম, ওয়াশিংটনের নির্দেশনার ভিত্তিতে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস সবেমাত্র প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছে। আমি স্পষ্টতই মুজিবের কথা ইঙ্গিত করলাম। এর পরে আমি নির্দিষ্ট করে বললাম, ইয়াহিয়া যদি মুজিবের সঙ্গে সংলাপে বসেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হবে উৎফুল্ল।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!