You dont have javascript enabled! Please enable it! দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ কৌশলের প্রশংসা - সংগ্রামের নোটবুক
দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ কৌশলের প্রশংসা
একাত্তরের ৮ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধবিষয়ক ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপের বৈঠকের দলিল থেকে জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতা চিহ্নিত করতে একটি মানচিত্র তৈরি করেছিল। এ বৈঠকে নির্দিষ্টভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিযােদ্ধাদের যুদ্ধ কৌশলের প্রশংসা করেন মােরিস জে উইলিয়ামস। তিনি ছিলেন এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের ডেপুটি এডমিনিস্ট্রেটর এবং ইন্টারডিপার্টমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইস্ট পাকিস্তান ডিজেস্টার রিলিফের চেয়ারম্যান। ১৭ থেকে ২৩ আগস্ট তিনি ঢাকা ও ইসলামাবাদ সফর করেন। কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক তৎপরতার বিষয়ে ভারতকে আবারাে সতর্ক করে দেবে। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা ভারতে সম্ভাব্য চীনা আক্রমণে ভারতীয়দের পাশে দাঁড়ানাের নিশ্চয়তা দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলব। আবার তাদের প্রতি কোনাে হুমকি দেয়া থেকেও বিরত থাকব। কিসিঞ্জার আমার ধারণা আমরা ত্রাণ পরিস্থিতি বিষয়ে মােরি উইলিয়ামসকে একটি রিপাের্ট পেশ করতে অনুরােধ জানাতে পারি। আমি এটা ভেবে অবাক হচ্ছি, আমাদের যদি পারমাণবিক যুদ্ধযাত্রার জন্য একটি বেসবল ব্যাট ব্যবহার করতে বলা হয়, তখন আমাদের করণীয় কী হবে? 
উইলিয়ামস : আপনি জানেন ১৭ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইসলামাবাদ ও ঢাকায় আমি আলাপ-আলােচনা করেছি। ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমরা এই সবুজ সংকেত পেয়েছি যে, তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহের বিষয়টি দেখবেন। তিনি একমত হয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানে সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য দক্ষতার সঙ্গে ত্রাণ সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইয়াহিয়া মনের ভেতরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত রেখেও রাজি হয়েছেন, জাতিসংঘের প্রথম মাঠ পর্যায়ের মিশনে ৪০ জন লােক থাকবে। ইয়াহিয়া অবশ্য বলেছেন, তার নীতি হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের বেসামরিকীকরণ। এর অর্থ হচ্ছে, তিনি সামরিক কর্তৃপক্ষের প্রভাব হ্রাস করতে চান। তিনি এখন বাঙালি ড. এম মালিককে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়ােগ করেছেন। রাজনৈতিক সমঝােতার প্রশ্নে ইয়াহিয়া যে সাধারণ ক্ষমা ঘােষণা করেছেন তা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয়। জেনারেল এসেম্বলির নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে শুধু ৮৮ জন এবং প্রাদেশিক এসেম্বলির ৯৪ জন লীগ সদস্যের নাম তিনি অপরাধীদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে, তারা সাধারণ ক্ষমার সুযােগ লাভ করেছেন। তবে জেনারেল এসেম্বলির ৮৮ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৬ জন ঢাকায় অবস্থান করছেন। অবশিষ্ট জেনারেল এসেম্বলির ৭৯ সদস্য, প্রাদেশিক এসেম্বলির ৬০ জন সদস্য বিচারের সম্মুখীন হবেন। পাকিস্তানের সঙ্গে দাতাগােষ্ঠী কনসাের্টিয়ামের প্রশ্নে আমরা এমন মতৈক্যে পৌছেছি যে, অক্টোবরের গােড়ায় এ বৈঠক অনুষ্ঠানে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ সময় ওয়াশিংটনে আইবিআরডি’র নির্বাহী পরিচালকদের বৈঠকও হবে। আমরা পাকিস্তানিদের স্বার্থে প্রস্তাব দিয়েছি যে, (ক) পূর্ব পাকিস্তানিদের ত্রাণ সুবিধাসহ অধিকতর আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদান; (খ) সাধারণ দাতাদের কর্তৃক ঋণ মওকুফ, (গ) কৃষির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ। গতকাল পর্যন্ত এসব ব্যাপারে ম্যাকনামারাকে সম্মত থাকতেই দেখা গেছে।
কিসিঞ্জার : পাকিস্তানিরা কি খুশি?
সিসকো : হ্যা, তারা আমাদের সাহায্যের জন্য অনুরােধ করেছে এবং তারা এটা ভেবে সন্তুষ্ট যে, আমরা তাদের হয়ে বােঝা লাঘবের চেষ্টা করছি। উইলিয়ামস তারা রীতিমতাে উৎফুল্ল। তাদের জন্য এ বছরে ঋণ। পুনঃতফসিলিকরণের পরিমাণ ৭৫ মিলিয়ন ডলার। পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলতে হয়, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে গেরিলা তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। আর এসবই মূলত পরিবহন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের জন্য পরিচালিত হচ্ছে।  কিসিঞ্জার : এটা কি ভারতীয় সীমান্তের সমান্তরাল?
উইলিয়ামস হ্যা, এটা আসলে লাইফ লাইনের জন্য লড়াই। গেরিলাদের সাহায্যে তারা রেল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করছে। ব্রিজ দিচ্ছে উড়িয়ে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানিরা নৌপথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলে অবশ্য গেরিলারা দৃশ্যত স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দক্ষিণাঞ্চলে গেরিলা গ্রুপের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৬০০টি হবে। তারা বেশ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং তারা নৈপুণ্য প্রদর্শন করছে। সাধারণভাবে তাদের টার্গেট হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থা, ব্রিজ, পুলিশ স্টেশন ও প্রশাসনিক কাঠামাে। উর্দুভাষী বিহারি মন্ত্রী হত্যার মধ্য দিয়ে সম্ভবত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রথম সূচনা ঘটে। আর পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে পৌছলে পরিস্থিতি রূপ নেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। এতে কতজন হতাহত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। কিন্তু মৃতের সংখ্যা যে কয়েক হাজার হবে, তা ধারণা করা যায়। কিসিঞ্জার : অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই কি হিন্দু?
উইলিয়ামস : না, ঠিক তা নয়। তবে উর্দুভাষী এবং গােড়া মুসলিমরা পাকিস্তান সরকারের প্রতি অধিকতর অনুগত। গ্রাম পর্যায়ে তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে। এর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে শান্তি কমিটি”। নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা বলতে তাদের কিছুই নেই । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তারাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত । এসব লােকজন হিন্দুবিরােধী হিসেবে পরিচিত। সে কারণেই হিন্দুদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটেছে এবং তারা অধিক মাত্রায় দেশ ছাড়ছে। ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থাই মুখ্য। আমরা এজন্য ২৫টি কোস্টাল স্টিমার দিয়েছি। ইয়াহিয়া এতে খুবই খুশি হয়েছেন। এগুলাে পৌছামাত্রই খাদ্য সরবরাহের কাজে লাগানাে হবে। তবে এসব স্টিমারের নিরাপত্তা এক বিরাট প্রশ্ন। কারণ, গেরিলারা খাদ্য ও ত্রাণ বােঝাই জাহাজে আক্রমণ পরিচালনা করছে। পাকিস্তানিরা এসব জাহাজের নিরাপত্তা সশস্ত্র লােকদের যারা নিশ্চিত করতে চাইছে। আমরা জাতিসংঘ এবং ঢাকার সামরিক অধিকর্তাদের বােঝাতে চেষ্টা করেছি, যাতে এসব জাহাজে তারা জাতিসংঘের প্রতীক ব্যবহার করে। তারা এ প্রস্তাবে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তবে মুখে বলেছে, আচ্ছা তা-ই হবে। তারা স্পষ্ট করেছে, খাদ্যের অবস্থান যুদ্ধের ওপরে। কিন্তু জাতিসংঘ যদি এ ব্যাপারে ভালােভাবে মােকাবেলা করতে না পারে, তাহলে এই অপারেশন ব্যর্থ হবে।
কিসিঞ্জার (সিসকোর দিকে তাকিয়ে) আপনি কি ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ঝাকে মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতা সংক্রান্ত মানচিত্র দেখিয়েছেন? আমরা কিন্তু এই ম্যাপ নিউইয়র্ক টাইমসকেও সরবরাহ করতে পারি। কিন্তু মুশকিল হলাে তারা এটা ছাপবে না। উইলিয়ামস জাতিসংঘের সঙ্গে ত্রাণ কর্মসূচির সমন্বয় কোনাে পিকনিক ইস্যু নয়। তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ওকে থাকলেই শুধু এটা মােকাবেলা করা সম্ভব হবে। সাহায্যের প্রশ্নে ইয়াহিয়া ২৫০-৩১৫ মিলিয়ন ডলার চেয়েছেন। এর সঙ্গে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৭৫ শতাংশ হিস্যা। অর্থাৎ ১৬০-২৩৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে পিএল-৪৮০-এর আওতায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার। মার্কিন মালিকানাধীন ২৫ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত রুপি এবং ১০০ মিলিয়ন ডলারের স্পেশাল কনটেনজেন্সি ফান্ড। (কিসিঞ্জারের প্রতি) আপনি জানতে চেয়েছিলেন, ১০০ মিলিয়ন ডলার যথেষ্ট কিনা? জবাব হলাে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য এটাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে আমার দুটো নির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে। প্রথমত, আমাদের উচিত হবে ভারতীদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে কথা বলা। এর উদ্দেশ্য হবে, পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ ঠেকানাের অভিন্ন স্বার্থ অর্জন। এছাড়া উদ্বাস্তুদের চাহিদা নিরূপণ করতে তাদের সঙ্গে বসে উদ্বাস্তুদের সঠিক সংখ্যা ঠিক করতে হবে। ভারতীয়দের দাবি এই সংখ্যাটি হবে ৮০ লাখ। পাকিস্তানিরা বলছে ২০ লাখের বেশি। আমাদের দরকার তৃতীয় কোনাে পক্ষের দ্বারা নিরপেক্ষভাবে এ সংখ্যা যাচাই করে নেয়া।
কিসিঞ্জার আপনি কী ভেবেছেন?
উইলিয়ামস সম্ভবত ৬০ লাখের কাছাকাছি হবে। প্রশ্ন হলাে, উদ্বাস্তুদের প্রবাহ কিভাবে বন্ধ করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, বিশেষ করে ভারতে অবস্থানরত উদ্বাস্তুদের জন্য কংগ্রেসের কাছে কিভাবে আমরা সাহায্যের আবেদন জানাব। যদি সত্যিই উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮০ লাখ হয় তাহলে তাদের সাহায্যের দরকার হবে ৮৩০ মিলিয়ন ডলার।
কিসিঞ্জার : আমরা ভারতীয়দের কিভাবে এ নিয়ে প্রস্তাব দিতে পারি?
আরউইন আমরা এটা দুভাবে পারি। এখানে রাষ্ট্রদূত ঝা’র সঙ্গে আমি কিংবা নয়াদিল্লিতে আমাদের রাষ্ট্রদূত কিটিং ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
কিসিঞ্জার সবচেয়ে ভালাে হয় আপনি যদি এখানেই ঝা’র সঙ্গে কথা বলেন। আরউইন আমি একমত । হয়তাে আমরা উভয়মুখী পদক্ষেপ নিতে পারি।
কিসিঞ্জার : আমরা কিভাবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে উদ্বাস্তু সংখ্যা নির্ণয় করতে পারি? ভারত কি আবার তাতে রাজি হবে?
আরউইন : জাতিসংঘের উপস্থিতি তারা মানবে না। আমরা এটা সীমান্তে করতে পারি। শিবিরে সরজমিনে সংখ্যা গণনা উত্তম পদক্ষেপ।
কিসিঞ্জার কিটিং জানিয়েছেন ভারতীয়রা ভ্রাম্যমাণ টিমের সঙ্গে থাকতে রাজি হয়েছে।
উইলিয়ামস : হা, কিন্তু তারা তাে খুব দূরে যেতে পারবে না।
কিসিঞ্জার আমরা সংখ্যা গণনা করে যা নির্ধারণ করব তা তারা নাকচ করে দেবে কোন যুক্তিতে? তারা কি শিবিরগুলাে লােকজন দিয়ে ভরে ফেলবে? আমরা কিভাবে বুঝব কারা প্রকৃত পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তু?
হান্না ২০ লাখ এবং ৮০ লাখের মধ্যবর্তী কোনাে একটি সংখ্যা আমরা ঠিকই পেয়ে যাব।
কিসিঞ্জার আচ্ছা আমরা ভারতের সঙ্গেই আগে কথা বলি। ভারতে যাতে উদ্বাস্তুরা আরাে ভিড় না জমায় সে জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা একটা অভিন্ন কর্মপন্থা বের করি। তারপর একবার নিরপেক্ষ গণনা। ভারতে অবস্থানরত উদ্বাস্তুদের সহায়তা দিতে ভারত যখন অনুরােধ জানিয়ে চলেছে; আচ্ছা ভালাে কথা, আমরা কেন গেরিলা তৎপরতা বিষয়ক মানচিত্র তাদের দেখাচ্ছি না? আমরা তাে এটা বলতে পারি, যেসব গেরিলা যােদ্ধা একেবারে পূর্ব পাকিস্তানের পেটের ভেতরে অবস্থান করে। তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে তােমাদের হয়তাে তেমন কিছু করণীয় নেই। কিন্তু যারা ভারতের সীমান্তের কাছে রয়েছে তাদের কেন নিয়ন্ত্রণ করছ না? আপনাদের কি মনে হয় এতে কোনাে কাজ হবে?
আরউইন : ঠিক এভাবে আমরা কিন্তু তাদের আংশিকভাবে হলেও বলেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। আমরা অবশ্য আবার চেষ্টা করতে পারি। কিসিঞ্জার আমরা যদি দৃঢ়তার সঙ্গে কথা না বলি তাহলে ভারতীয়রা আমাদের প্রতারণাপূর্বক মরণ ফাঁদেও ফেলতে পারে।
সিসকো কথা বলতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে ও নির্দিষ্টভাবে। আমরা ঝা’কে বলতে পারি, আমরা ৭০ লাখ ডলার সাহায্য দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা তা দিতেও চাই। কিন্তু আমাদের ভারতের কাছ থেকে অন্তত ন্যূনতম সহযােগিতার আশ্বাস পেতে হবে। আমাদের যদি সহযােগিতা দানে কোনাে নিশ্চয়তাই না দেয়া হয়, তাহলে।
আমরা একতরফাভাবে কিভাবে সক্রিয় হতে পারি। আমাদের তাে এমন দায় ঠেকেনি। যে, খামােখা টাকা জলে ফেলে দেব।
হান্না কংগ্রেস বর্তমানে আবণ্টনের পর্যায়ে। তাদের বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারই চলবে। কিন্তু এখন তাে দেখছি ভারতের পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের জন্য আরাে বেশি দরকার। ৮০ লাখ উদ্বাস্তুর জন্য প্রতিদিন ২৫ সেন্ট ধরেও দৈনিক প্রয়ােজন ২০ লাখ ডলার।
কিসিঞ্জার যদি উদ্বাস্তুদের ব্যাপক প্রবাহ অব্যাহত থাকে তাহলে ভারত কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার অজুহাত হিসেবে এটা ব্যবহার করবেই। আর সেক্ষেত্রে আমাদের চীনা। নীতি হবে ধ্বংস। তারা ইতােমধ্যেই প্রেসের মাধ্যমে আমাদের জবাই করছে এবং লবি করছে কংগ্রেসের সঙ্গে। আমাদের অবশ্যই দৃঢ়চিত্ত থাকতে হবে। আমরা নিজ থেকে এটা দেখাতে পারি, তবে এটা তাে ঠিক যে এ বিষয়টা স্টেট ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
আরউইন আপনি ঠিকই বলেছেন। কিসিঞ্জার আমরা তাদের বলছি না যে, আবশ্যকীয় কিছু বিসর্জন দিতে।
সিসকো এটা কিন্তু একটা আশার আলাে সৃষ্টি করতে পারে। ধারণা হতে পারে, পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে একত্রে আমরা বাংলাদেশকেও পেতে পারি।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন