পাকিস্তানিরা গর্দভ, ভারতীয়রা ধূর্ত নিক্সন
২৩ জুলাই, ১৯৭১
সিসকো আমরা যে করেই হােক আওয়ামী লীগের প্রতি ঝুঁকতে ইয়াহিয়াকে রাজি করাব। হেলমস : কিন্তু মুক্তিযােদ্ধারা যতক্ষণ গুলি চালাতে থাকবে, ততক্ষণ কিন্তু এসবে কাজ হবে না।
আরউইন আওয়ামী লীগারদের কেউ কি পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন? যার সঙ্গে ইয়াহিয়া কথা বলতে পারেন!
কিসিঞ্জার ইয়াহিয়ার দাবি ১৬৭ জন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের মধ্যে ৪৫ থেকে ৬০ জনকে তিনি তার দলে পাবেন।
ভ্যানহােলেন এই অনুমান সত্যি খুব বাড়াবাড়ি।
আরউইন এটা কাজে আসতে পারে, তবে তিনি যদি তেমনি কিছু আওয়ামী লীগারকে খুঁজে পান, অখণ্ড পাকিস্তানের প্রতি যাদের কিছু আনুগত্য এখনাে অবশিষ্ট রয়েছে। কিসিঞ্জার ইয়াহিয়া বলছেন, তিনি এমন ৪৫ থেকে ৬০ জনকে পাবেন। অবশিষ্ট আসনগুলােতে তিনি দিতে চান নির্বাচন। আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি, ১৬৯ সদস্যের এসেম্বলির ১৬৭ জনকেই তিনি দাঁড়াতে দিলেন না। অথবা আমরা তাকে এমন কিছু ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলতে পারি, যা তার পক্ষে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।
আমি সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম তিনি ইয়াহিয়ার চেয়েও কট্টরপন্থি।
সিসকো আমি একমত যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইয়াহিয়ার পূর্ণ ক্ষমতা নেই।
কিসিঞ্জার আমি বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু আমি মনে করি, পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দিকেই গড়াতে পারে। ভারত উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানাে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অজুহাত হিসেবে তাদের ব্যবহার করার সুযােগ কাজে লাগানাের প্রশ্নে সন্দেহের দোলাচলে দুলছে। পাকিস্তান উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনতে খুবই নমনীয়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রশ্নে তারা বড়ই অনমনীয়।
উইলিয়ামস : আমি মনে করি, এটা বড়ই নিরঙ্কুশ একটা অবস্থা। আমি মনে করি যে, রাজনৈতিক সমঝােতা প্রশ্নে কিছু অগ্রগতি ছাড়া উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ইয়াহিয়াও মুজিবের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম সুযােগেই পরিহার করতে পারবেন। হেলমস কিন্তু সর্বাগ্রে দরকার ভারতকে পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ক তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত করা।
উইলিয়ামস যখন দুবৃত্ত অবস্থা বৃদ্ধি পাবে তখন উদ্বাস্তুর সংখ্যাও বাড়বে।
কিসিঞ্জার হেলমসের কথাটাই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ, ভারতীয়রা যদি সত্যি আন্তরিক হয়, তাহলে উচিত হবে মুক্তিযােদ্ধাদের সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকা। আরউইন ঝায়ের বক্তব্য থেকে বােঝা যাচ্ছে, সার্বিক লড়াই থেকে গেছে, কিন্তু উদ্বাস্তু আগমন অব্যাহত রয়েছে। তার দাবি, পাকিস্তান পরিকল্পিতভাবে এমন অবস্থা সৃষ্টি করছে, যার ফলে উদ্বাস্তুরা দলে দলে আসছে। এটা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে গেরিলাদের সাহায্যদান ছাড়া ভারতের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করাই বড় কথা। এর লাগাম টেনে ধরতে পারলে ভারতীয়দের পক্ষে অজুহাত দেয়া সম্ভব হবে না। এটা সত্যি একটা মুরগি ও আণ্ডা পরিস্থিতি।
সিসকো এটা হলাে গােড়ার দিনগুলােতে পাকিস্তানিদের শক্তি প্রয়ােগের ফল। একই সঙ্গে অব্যাহত গেরিলা তৎপরতা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ যােগাযােগ বিচ্ছিন্নতার পরিণতি। ভারত যখন সীমান্তে প্রশিক্ষণ শিবির খুলেছে, তখন আমরা ইয়াহিয়াকে তার সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে বলতে পারি না। ভারত সত্যিই আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দিচ্ছে।
হেলমস (সিসকোর প্রতি) আপনি একটি সম্ভাব্য রুশ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। আমি কখনাে রাশানদের সঙ্গে নিজেদের জড়ানাে পছন্দ করি না। তবে তাসখন্দে তারা একটা ভালাে কাজ করেছে। সিসকো জাতিসংঘে উপস্থিতির প্রশ্নে আমরা স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের সমর্থন আশা করব। রাশিয়া অবশ্যই ভারতীয়দের প্রভাবিত করতে পারে। আমরা সত্যি রাশানদের দূরে সরিয়ে রেখে আরেকটি ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু সঙ্কট পরিচালনা করতে পারি না। আমাদের তাদের দরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয়ভাবেই। ভারত যদি জাতিসংঘের সীমিত উপস্থিতি ও বিরােধিতা করে তাহলে রাজনৈতিক সমস্যা সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়বে। ইয়াহিয়া বলেছেন, তিনি চার মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি কি এটা দুমাসের মধ্যে নিশ্চিত করতে পারেন? তারা কি আওয়ামী লীগারদের ফিরিয়ে আনতে এখনই উদ্যোগ নিতে পারেন না?
উইলিয়ামস পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যতক্ষণ যুদ্ধ করছে, দেশ শাসন করছে, ততক্ষণ তাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে। বেসামরিক প্রশাসন থেকে সেনা সম্পৃক্ততা একেবারেই ঘুচিয়ে দেয়া।
৬ আগস্ট, ১৯৭১
স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ভারতের মার্কিন দূতাবাসে একটি টেলিগ্রাম প্রেরণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স। তিনি বলেন, আমি সরকারি এবং গােয়েন্দা সূত্রে অব্যাহতভাবে এই ইঙ্গিত পাচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তানের সরকার উভয়ই ভাবতে শুরু করেছে, যুদ্ধ। সম্ভবত অবশ্যম্ভাবী এবং এটা তারা ধরে নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছে। উভয় দেশের বিমান সেনারা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানানাে হয়েছে যে, ১৫ আগস্টের পরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল নাও থাকতে পারে। বাংলাদেশের গেরিলারা আশাবাদী হয়ে উঠেছে। যে, তারা সেপ্টেম্বরে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনায় সক্ষম হবে। ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা আন্তঃসীমান্ত বােমাবর্ষণ বৃদ্ধি করেছে। ইতােমধ্যে মুক্তিযােদ্ধারাও তৎপরতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে তারা লিপ্ত ছিল শুধু নাশকতামূলক তৎপরতায়। এখন তারা পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর সরাসরি হামলা চালাচ্ছে। ভারত জাতিসংঘের উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করায় অনুমান করা চলে এই এলাকার তৎপরতার জন্যই তাদের এত সংবেদনশীলতা। এই পটভূমিতে আপনি ভারত সরকারকে জানিয়ে দেবেন যে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে তারা যেন সংযম প্রদর্শন করে এবং বাঙালি মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি তারা যাতে প্রভাব খাটায়; কারণ মুক্তিযােদ্ধারা যেভাবে আক্রমণ তীব্র করছে তাতে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ সহসাই এসে পড়তে পারে দোরগােড়ায়। আমরা ভারত সরকারের কাছে আশা করি, তারা যেন প্রকাশ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। একই সঙ্গে তারা যেন এমনভাবে সেনা মােতায়েন না করে যা উস্কানিমূলক বলেই প্রতীয়মান হতে পারে। আপনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানাতে পারেন । ইসলামাবাদকে আমরা সংযত হতে বলেছি।
১০ আগস্ট, ১৯৭১ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স একদিন দুদফা বৈঠক করেন জাতিসংঘ মহাসচিব ইউফান্টের সঙ্গে। জাতিসংঘ মহাসচিব এ মর্মে উদ্যোগ প্রকাশ করেন যে, গেরিলা নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ কর্মীদের যে কোনাে উপস্থিতির বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। তাদের শর্ত হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র সমাধান হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝােতায় পৌছাতে হবে। ফান্ট উল্লেখ করেন, শান্তির প্রতীক মারাত্মক হুমকির বিবেচনায় তিনি জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের সমস্যার দিকে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। এ সপ্তাহে তিনি ঘােষণা করবেন সম্ভবত বুধবারেও হতে পারে। তিনি অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ঢাকায় সেপ্টেম্বরের গােড়ায় ৩৮ জন জাতিসংঘ কর্মকর্তা অবস্থান নেবেন। তারা ত্রাণ তৎপরতাকে ত্বরান্বিত করবেন। তার কর্মসূচির মধ্যে এটা বিবেচনাধীন যে, পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে প্রায় দেড়শ’ অতিরিক্ত কর্মী প্রেরণ করবেন। রজার্স নিক্সনকে লেখার এক স্মারকে এই বিবরণ দিয়ে এ কথা উল্লেখ করেন যে, নিরাপত্তা পরিষদে প্রয়ােজনে তিনি ভারত-পাকিস্তানের বিষয়টি তুলবেন। ফান্টকে খুবই আন্তরিক মনে হয়েছে। তিনি তার ভালাে স্বাস্থ্যের কথাও উল্লেখ করেন। এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি যে, তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব পদে পুনঃবহাল থাকতে দারুণ আগ্রহী।
১১ আগস্ট, ১৯৭১
ওয়াশিংটনে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের বৈঠকে কিসিঞ্জার বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভারতের কাছে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, যদি দুই ডিভিশন পাকিস্তানি গেরিলা (মুক্তিযােদ্ধা) সীমান্ত অতিক্রম করে তাহলে আমাদের সম্পর্ক নিরঙ্কুশ সংকটে পড়বে। সিসকো বলেন, আমি এটুকু নিশ্চিত যে, কোনাে আনুষ্ঠানিক ভারতীয় আক্রমণ ঘটবে।
কিন্তু তারা সম্ভবত সীমান্ত অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এটা আমাদের মস্কোর সঙ্গে সম্পাদিত দিল্লির নতুন চুক্তির আলােকে যত্নের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হবে।
একই দিনে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের আরেকটি বৈঠক হয় নিক্সনের উপস্থিতিতে। কিসিঞ্জার বলেন, প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সবাই অংশ নেবেন। নিক্সন বৈঠকের শুরুতেই উল্লেখ করেন যে, প্রথমত দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। যদি প্রকাশ্য সংঘাতে উভয়ে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে মার্কিন স্বার্থ দারুণভাবে বিঘ্নিত হবে। আমাদের অবশ্যই সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে কোনাে পক্ষই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে না পারে। গণমাধ্যম প্রশ্নে তিনি বলেন, ভিয়েতনাম নিয়ে এখন আর কেউ কিছু লিখছে না। এখন পত্রিকাগুলাের বড় বড় শিরােনাম হচ্ছে পাকিস্তান নিয়ে। ডেমােক্রেট ও রিপাবলিকানরা এই ইস্যু নিয়ে শুরু করেছেন হুলস্থূল। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার। এই পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৬৯ সালের নাইজেরিয়ার বিরাট পার্থক্য রয়েছে। বায়াফদ্ধার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততায় রাজনৈতিক দিকটি ছিল না। আমরা পূর্ব পাকিস্তানে। মানুষের দুর্ভোগ এবং ভারতের উদ্বাস্তু পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক সমস্যার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে নিক্সন বলেন, তিনি খুব শক্তভাবে তার অবস্থানকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারছেন না। কতিপয় ভারতীয়দের মতে, ভারতের স্বার্থ সবচেয়ে ভালােভাবে রক্ষিত হবে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে। অন্যদিকে পাকিস্তানিদেরও অনেকে নিশ্চয়ই যুদ্ধে জড়াতে চাইবে।
আমি জানি না সােভিয়েত ইউনিয়ন কী চায়? কিন্তু এটা ঠিক যে, একটি যুদ্ধের দ্বারা মার্কিন স্বার্থ রক্ষিত হবে না। চীনের সঙ্গে। সম্পর্ক দানা বেঁধেছে তাতে ধস নামবে। সম্ভবত আর কখনাে জোড়া লাগবে না এবং সােভিয়েতের সঙ্গে আমাদের এ সম্পর্ক খুবই জটিল রূপ নেবে। এখন আমাকে একটা। কথা স্পষ্ট করে বলতে হবে যে, ১৯৫৩ সাল থেকে আমার ভারত সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রত্যেক রাষ্ট্রদূত যারাই ভারতে গেছে তারাই ভারতের প্রেমে পড়েছে। কিছু রাষ্ট্রদূতের অবশ্য পাকিস্তানেও একই ঘটনা ঘটেছে; কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশি নয়। কারণ পাকিস্তানিরা ভিন্ন প্রজাতির। তারা স্পষ্টবাদী এবং অনেক সময় দারুণভাবে গর্দভ। অন্যদিকে ভারতীয়রা অধিকতর ধূর্ত। অনেক সময় তারা এমনই চৌকস হয়ে ওঠে যে, আমরা বিভ্রান্ত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেই । নিক্সন এ সময় আরাে উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কোনােক্রমেই পাকিস্তান ভাঙার জন্য উদ্বাস্তুদের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার হতে দেবে না। কেউ কেউ মনে করেন চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের কারণেই রাশিয়া ইসলামাবাদকে শাস্তি দিতে চায়। নিক্সনের মতে, ১৯৬৭ সালের জুনের আগে রাশিয়া যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা দেখেছে আজ তারা একইভাবে পাক-ভারতের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। কিন্তু বিপদ হচ্ছে তারা শক্তি প্রয়ােগকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করতে কেউ সক্ষম থাকবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারতীয়রা যদি পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে বাচ্চাদের মতাে খেলতে শুরু করে’ অথবা গেরিলা প্রেরণ করে তাহলে পাকিস্তানিরা কিন্তু যুদ্ধে জড়াবেই। এমনকি তারা যদি এটা জানেও যে, এই যুদ্ধ হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী।
নিক্সন এ সময় সিসকো ও আরউইনের দিকে লক্ষ্য করে বলেন, আমাদের অবশ্যই স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মরত ভারতপন্থিদের ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। (ফুটনােট ১০ আগস্ট ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ। কিটিং নয়াদিল্লিতে একটি টেলিগ্রাম প্রেরণ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক এখন ‘বিষে জর্জরিত।’ তিনি যুক্তি দেন যে, ভারতের প্রতি যুক্তিরাষ্ট্রের নীতি একেবারেই উল্টে দিতে হবে। ভারতীয়রা সাধারণভাবে মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে কর্তৃত্ববাদী, অন্তর্গতভাবে ভঙ্গুর; তৃতীয় স্তরের পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক, তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ও আঞ্চলিকভাবে ক্ষমতাধর ভারতের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে। নিক্সন বলেন, আমরা ভারতকে সাহায্য করতে চাই, তাই। বলে পাকিস্তান ভাঙতে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা পক্ষ হতে পারি না। যদি যুদ্ধ হয়, আমি জাতীয় টেলিভিশনের সামনে দাঁড়াব, কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানাব, ভারতকে সব সাহায্য বন্ধ করে দিতে। তারা একটি ডলারও পাবে না।
সূত্র: ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন