You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাপের চেয়েও ভয়ংকর

নিজস্ব সংবাদদাতা 

‘ইয়াহিয়ার মিলিটারি তাড়া করলে জঙ্গলে রাতের পর রাত কাটাতে হয়েছে। কখনও সঙ্গী হয়েছে বনের পশু আবার কখনও বা বিষধর সাপ। বিপন্নকে এরা কখনও আক্রমণ করেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পাক হানাদারদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেল না।’ চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন বরিশালের শ্রীমতী উষারাণী দে। স্বামী ডা. অমলচন্দ্র দে ছিলেন বরিশাল শহরের নামকরা দন্ত চিকিৎসক। পাকিস্তানী মিলিটারির হামলায় তিনি স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে শহর থেকে দূরে গৌড়নদী থানার বাকলি গ্রামে আশ্রয় নেয়। সেখানেও তারা উৎপীড়ন, অত্যাচার চালিয়েছে। ভয়ে অধিকাংশ সময় কাটাতে হয়েছে জলে-জঙ্গলে।

কিন্তু দু’-মাস এমনিভাবে কাটিয়েও তিনি নিস্তার পেলেন না। পাটের ক্ষেতে শুয়ে পড়ে যখন একদিন দূর থেকে আসা গুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করছিলেন তখন একদল মিলিটারি আর ‘শান্তিবাহিনীর চেলারা সেখানে হাজির হয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।  সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনা বলতে গিয়ে শ্রীমতী দের সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। স্বামীর প্রাণটুকু ভিক্ষা করে সেদিন তিনি মিলিটারির শান্তিবাহিনীর হাতে-পায়ে ধরেছিলেন। কিন্তু তারা তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। শেষে কেড়ে নেয় তার সােনা-গয়না। এমনি শুধু তাদের একার হয়নি। ওই এলাকার ঘরে ঘরে একই করুণ কাহিনী। শ্রীমতী দে স্বামীকে হারিয়ে বিভীষিকার জগৎ থেকে বাইরে আসার জন্য ছােট ছেলেমেয়েদের হাত ধরে, পথে বেরিয়ে পড়েন। দশদিন পায়ে হেঁটে, কখনও নদী পেরিয়ে আসেন ভারতে।

Reference:

২৪ জুলাই ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!