বাংলাদেশ হবে ভারতের ক্যান্সার চৌ-কিসিঞ্জার
১৯৭২ সালের ২২ জুন চীনের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী চৌএন লাইয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হেনরি কিসিঞ্জার। এ সময় চীনের পক্ষে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিয়াও কুয়ান হুয়া, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চ্যাং ওয়েন চীন ও ওয়াং হাই জুং এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দুই ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল স্টাফ উইন স্টোন লর্ড ও জোনাথন টি হাউই উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের আলােচনা শুরু হয়েছিল এভাবে।
চৌঃ আমার ধারণা ইন্দিরা গান্ধী তার বাবার মতােই ডিসকভারি অব ইন্ডিয়ার পথ অনুসরণ করছেন। ওটা ছিল নেহেরুর উচ্চাকাক্সক্ষা। বলা যায় ওই বইটি ছিল তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার আবিষ্কার।
কিসিঞ্জারঃ তার আসলে ওটা এগিয়ে নেয়ার সামর্থ্য ছিল না। তিনি ছিলেন বড় বেশি তাত্ত্বিক।
চৌঃ যাই হােক, তার আকাক্ষা নির্দেশনা দেখিয়েছেন।
কিসিঞ্জারঃ আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের কৌশল হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানকেও খণ্ড-বিখণ্ড করা। যেমনটা তারা করেছে পূর্ব পাকিস্তানে। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা আছে। মিসেস গান্ধী যখন নভেম্বরে ওয়াশিংটন এলেন তখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলােচনায় তিনি স্পষ্ট করেই বললেন, পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে তিনি আর কোনাে কথাই বলতে চান না। তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসঘাতকতার কথা উল্লেখ করেন। সুতরাং, সমস্যা হলাে পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব কিনা। আর তার পরের কথা হলাে- অন্য আর সবাইকে। গলধঃকরণে তাকে অবাধে বিচরণ করতে দেয়ার প্রশ্নে উপমহাদেশে ভারতের কিছু ক্ষমতা হ্রাস করা দরকার। দেখুন, আমি যে এই কথা বলছি এটা কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায়, এটাই আমাদের বিশ্লেষণ। পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করতে দুটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমত অর্থনৈতিক ও দ্বিতীয়ত সামরিক। আমরা দেড়শ’ মিলিয়ন ডলার সরাসরি ও আরাে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দিয়েছি।
চৌঃ সেটা সাম্প্রতিক, যুদ্ধের পরে?
কিসিঞ্জারঃ সামরিক ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলাে আমাদের। গণতান্ত্রিক কংগ্রেস এটা প্রতিহত করছে।
চৌ: আমরা পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ করিনি। এটা অব্যাহত রয়েছে। আর আমরা পাকিস্তানকে যে ট্যাংক দিয়েছি তা কিন্তু হালকা (লাইট ট্যাংকস)। পাকিস্তানকে যে যুদ্ধ বিমান আমরা দিয়েছি তাও কিন্তু তেমন সুবিধার নয়। মিগ-১৯ একটু ঝালাই করে নতুনত্ব দিয়েছি। সত্যি বলতে কি আপনার সঙ্গে দিব্যি করে বলছি, ভিয়েতনামকে আমরা যত সংখ্যক মিগ-১৯ দিয়েছিলাম তার চেয়ে পাকিস্তানকে সরবরাহকৃত মিগ সংখ্যায় বেশি। কিন্তু আবার বলছি এ সবই রেনােভেটেড । আমরা ভিয়েতনামকে খুব বেশি মিগ কিন্তু দেইনি। সুতরাং, আপনিই বলুন আমরা কোন দুঃখে ইন্দোচীনের যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের অস্ত্র পরীক্ষা করব?
কিসিঞ্জারঃ আমি একমত। আমরা ইন্দোচীনে যুদ্ধ অব্যাহত থাকা দেখতে চাইনি।
চৌঃ আমরা এটা নিয়ে পরে কথা বলব। ভিয়েতনামে যদি যুদ্ধ থেমে যায় তাহলে আমরা আমাদের অস্ত্রশস্ত্র পাকিস্তানকে আরাে বেশি পরিমাণে দিতে পারব। আমরা ইতােমধ্যেই তাদের অনেক কিছু দেব বলে অঙ্গীকার করেছি যা আমরা আজো পূরণ করতে পারিনি। দুঃখের কথা কি জানেন, পূর্ব পাকিস্তানে দুই ডিভিশন সৈন্য তাদের অস্ত্রশস্ত্র খােয়াল অথচ তারা যুদ্ধেই অংশ নিল না।
কিসিঞ্জারঃ ঠিকই বলেছেন। ওটা ছিল একটা গর্দভ মার্কা সৈন্য মােতায়েনের সিদ্ধান্ত।
চৌঃ কিন্তু আমরা কিছুই বলিনি। কারণ আমরা এটা স্পষ্ট করেছি যে, আমরা যখন তাদের ওই অস্ত্র দিয়েছি তখন এটাও নিশ্চিত করেছি যে, সেসব অস্ত্র তারা তাদের ইচ্ছেমতাে ব্যবহার করবে। তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের কোনাে অধিকার আমাদের নেই। আর এটাও ঠিক, আমরা সেখানে একমাত্র উপদেষ্টা নই। তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের কোনাে অধিকারই আমরা রাখতে চাই না।
কিসিঞ্জারঃ আরে, আমাদেরও কোনাে আগ্রহ নেই পাকিস্তান নিয়ে। আমরা শুধু এটুকু চাই তার স্বাধীনতা টিকে থাকুক। এছাড়া সেখানে আমাদের অন্য কোন লক্ষ্য নেই।
চৌঃ উপমহাদেশ নিয়ে আপনি উদাসীন থাকতে পারেন না। কারণ সােভিয়েত ইউনিয়ন সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।
কিসিঞ্জারঃ হঁ্যা, সে কারণেই আমরা চেষ্টা করছি …
চৌঃ ব্রিটেন ইতােমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
কিসিঞ্জারঃ কিন্তু ব্রিটেন তাে এই ডিসেম্বরেই অবদান রেখেছে।
চৌঃ আমরা কিন্তু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস হােমকে বলেছি, আপনারা কেন এটা এত দেরিতে উপলব্ধি করলেন।
কিসিঞ্জারঃ এটা খুবই মজার হতে পারত আপনি যদি আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে ইউরােপীয়দের অবহিত করতেন। কারণ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ডিসেম্বরের অবস্থা ভালােই জানেন। তারা আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলত।
চৌঃ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের একশ’ চার ভােটের মধ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স কিন্তু অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমাদের ভাইস মিনিস্টার সেজন্য তাদের সমালােচনা করেছেন প্রকাশ্যে। অথচ ২০ ও ২১ ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তারা সম্মত হলেন। ঢাকার পতনের পর তারা রাজি হলেন যুদ্ধ বিরতির নিয়মনীতি বিষয়ক সিদ্ধান্তে। তখন সেটা সত্যিই খুব বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ পরিষদে ৭ ডিসেম্বরে ভােটাভুটি হয়। প্রকৃতপক্ষে সেই সময় যদি অ্যাকশন নেয়া সম্ভব হতাে তাহলে ঢাকাকে বাঁচানাে সম্ভব ছিল।
চিয়াও নিরাপত্তা পরিষদে চরম মুহূর্ত এসেছিল ১১ও ১২ ডিসেম্বরে।
কিসিঞ্জারঃ আমি ঠিক এ কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম। ব্রিটিশরা খুবই খারাপ। ভাইস ফরেন মিনিস্টার তা ভালােই জানেন।
চৌঃ পরিস্থিতি তখন কিছুটা পরিষ্কার হয়ে এসেছিল। কিন্তু তাও ঢের বিলম্ব ঘটেছিল।
কিসিঞ্জারঃ পররাষ্ট্রনীতির কলা (আর্ট) হচ্ছে কোনাে কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই সঠিক সিদ্ধন্তে পৌছা ।
চেী : ঠিক বলেছেন। আপনার দূরদর্শিতা থাকতে হবে। আসলে কি জানেনব্রিটিশরা ভাবে তারা এখনাে সেই লর্ড মাউন্টব্যাটেনের দিনগুলােতেই আছে। কিন্তু সেসব দিন কতদিন হলাে পেরিয়ে গেছে।
কিসিঞ্জারঃ এবং তারা বিকল্প কিছু প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা তাতে সফল হবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান নিক্সন প্রশাসনেরও তাই বিশ্বাস যে, সােভিয়েত পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের যে সংযােজন ঘটে গেছে তার অতি ভয়ানক প্রভাব সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পড়বে। গত পাঁচ বছরে ভারত সােভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে একশ’ দুই কোটি ডলারের সামরিক সরবরাহ লাভ করেছে।
চৌঃ এটা খুবই ব্যয়বহুল।
কিসিঞ্জারঃ হঁ্যা, সােভিয়েতরা একশ’ কোটি ডলারের অস্ত্র নিজেদের জন্য তৈরি করেছে। একই সময়ে পাকিস্তান পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্রও পায়নি। এ কথার আমি কি বলব। আপনারাই তাে ভালাে জানেন। বেশিরভাগটা তাে আপনারাই দিয়েছেন।
চৌঃ আচ্ছা ভারত কি সােভিয়েতের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য ঋণ আকারে পেয়েছে?
কিসিঞ্জারঃ হ্যা, খুবই কম সুদের ঋণ। আমি ভাইস চেয়ারম্যানকে ইতােমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেব। বলুন কখন, কোথায়। এ নিয়ে বসতে চান।
কিসিঞ্জারঃ আগামী সপ্তাহেই আমি এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব। আপনি তাে। জানেন সােভিয়েতরা মিগ-২১ ভারতেই তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
চৌঃ মিগ-২১ এর শক্তি সামর্থ্য তেমন ভালাে নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তার কার্যকারিতা। মিগ-১৯ এর চেয়েও খারাপ। এই কেলিবারের যে বিমান আপনার দেশে রয়েছে তার চেয়েও ওটা নিকৃষ্ট বলতে হবে।
কিসিঞ্জারঃ সেটা ঠিকই বলেছেন। আমরা ইরানকে অধিকতর আধুনিক যুদ্ধবিমান দিতে চাইছি। যাতে তারা তাদের বিমান বহর থেকে অন্তত কিছু পাকিস্তানকে দিতে পারে। সেগুলাের অবস্থা এখনাে খুব ভালাে। অবশ্য তারা কিছু এফ-১৪ ও এফ-১৫ উৎপাদন করছে। আমরা এজন্য চাপ দিচ্ছি যাতে তারা তাদের কিছু এফ-৪ বিমান পাকিস্তানকে দিতে পারে। উপমহাদেশ সম্পর্কে এটাই হলাে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
চৌঃ পাকিস্তান কি এখনাে সেন্টোর সদস্য আছে? কিসিঞ্জার হ্যা, টেকনিক্যাল অর্থে। কিন্তু উল্লেখযােগ্য স্ট্রাটেজি হচ্ছে পাকিস্তানকে যথেষ্ট শক্তিশালী করা, যাতে সে পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে সক্ষম না হয়। অন্যথায় পাকিস্তান পরিণত হবে ভারতের একটি ভ্যাসেল’ এ। সেক্ষেত্রে ভারত হবে মুক্তবিহঙ্গ। সে বিচরণ করবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অথবা অন্য ভূখণ্ডে।
চৌঃ আপনাদের কূটনৈতিক প্রতিনিধি কি পূর্ব পাকিস্তানে গেছেন? কিসিঞ্জার হঁ্যা।। চৌ পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি ভালাে নয়।
কিসিঞ্জারঃ পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দীর্ঘমেয়াদে, আমি মনে করি এটা হবে ভারতের জন্য এক ক্যান্সার।
চৌঃ আমিও তাই মনে করি।
কিসিঞ্জার : কারণ হচ্ছে পরিস্থিতি যদি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ থাকে তাহলে এটা ভারতীয় সম্পদে ভাগ বসাবে। আর যদি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে তাহলে এটা হবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক চুম্বক (চৌ-এর হাসি)। কিন্তু আমাদের ধারণা হলাে ঢাকার সরকার এতটাই অযােগ্য যে প্রশাসনের কার্যকর নিয়ন্ত্রণভার এখনাে রয়ে গেছে ভারতীয়দের হাতেই।
চৌঃ তাদের সত্যিই ঔপনিবেশিক শাসনের আমেজটা রয়ে গেছে।
কিসিঞ্জারঃ হা।
চৌঃ এবং প্রকৃতপক্ষে কিছু ভারতীয় সৈন্য এখনাে পাকিস্তানে রয়ে গেছে। কিসিঞ্জার পুলিশ হিসেবে। চৌ এবং কর্মকর্তারাও।
কিসিঞ্জারঃ এবং তারা আসলে ভারতীয় সৈন্যদের দ্বারা পরিবেষ্টিত।
চৌঃ তাহলে এই হলাে উপমহাদেশের চালচিত্র। উপমহাদেশের স্বার্থেই আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় সমর্থন দিয়ে যাব। এটা এমন এক দায়িত্বশীলতা যা আমরা অব্যাহতভাবে পালন করব ভবিষ্যতের দিনগুলােতেও। একই সময়ে আমরা এটাও চাইব যে, পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন থাকবে। সত্যি বলতে কি, ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আমদের বন্ধুত্বের মেয়াদ দীর্ঘতম কিন্তু পাকিস্তানিরা কিছুটা উদ্বেগ অনুভব করছেন। কারণ গত মাস তিনেক ধরে মিসেস গান্ধী সর্বত্র বলছেন যে, তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চান। স্বাভাবিকভাবেই, আমরা তার প্রতি কোনাে প্রকার মনােযােগ দেখাইনি। ভারতের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের বিষয়টি আমরা বরং কিছুটা বিলম্বিত করতে পারি। এ পর্যন্ত ভারতই একমাত্র দেশ, যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রদূত নিয়ােগ করা হয়নি। ভারতীয়দের কিছু কূটকৌশলের জন্যই এটা ঘটেছে।
কিসিঞ্জারঃ সােভিয়েত সামরিক সহায়তার ওপর তাদের নির্ভরশীলতার কারণেই তাদের কাজের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
চৌঃ ভারতীয়দের অবশ্য বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ জটিলতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন এখানে সফরকালে বলেছেন, বিশ্বব্যাংকসহ ভারতের মােট ঋণের পরিমাণ প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং ভারত ঋণ পরিশােধ না করার নীতি গ্রহণ করেছে।
কিসিঞ্জারঃ কথাটা হয়তাে এখনাে সেভাবে খাটে না। কিন্তু আমি নিশ্চিত ইন্দিরা ঠিক তাই করতে যাচ্ছেন। (চৌয়ের হাসি)
সূত্র: ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন