পাকিস্তানকে হতাশ করেছিল রিয়াদ-আম্মান-তেহরান
আরব বিশ্ব পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের কেউই শেষ পর্যন্ত যথাসময়ে অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে সদ্য। প্রকাশিত আমেরিকার গোপন দলিল থেকে প্রমাণ মেলে না। ইরানের শাহ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরােধ মেটাতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে কিসিঞ্জার ও পাকিস্তানের। পররাষ্ট্র সচিব সুলতান খানের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলােচনায় প্রকাশ পায়। ৮ জুলাই ১৯৭১ রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পাক পররাষ্ট্র সচিব। অবহিত করেন যে, ইরানের শাহ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে প্রস্তাব দেন যে, দুদেশের বিরােধ মেটাতে তার দেশ নিরপেক্ষ স্থান হিসেবেই বিবেচ্য হতে পারে। গান্ধী শােনামাত্রই তা প্রত্যাখ্যান করেন। শাহ এতটাই ক্রুদ্ধ হন যে, তিনি তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। ৩০ জুলাই ‘৭১ ওয়াশিংটনে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের বৈঠকে সিআইএ’র পরিচালক হেলমস বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ। হতে ইরানের শাহকে কাজে লাগানাের ব্যাপারে আমরা কি কিছু চিন্তাভাবনা করেছি? (একটি বাক্য অবমুক্ত করা হয়নি) তিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন। এই ব্যক্তি কে তা দলিল থেকে বােঝা যাচ্ছে না। এ পর্যায়ে কিসিঞ্জার বলেছেন, আমি মনে করি, আমরা যদি শুধু উদ্বাস্তু সমস্যার দিকে নজর দেই তাহলে ইয়াহিয়া অনেক ভূমিকা রাখতে পারেন। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগকে অন্তত একটি ইন্সটিটিউশন বিবেচনায় ইয়াহিয়া কথা বলতে চাইবে না। তিনি সম্ভবত ব্যক্তিগতভাবে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
আরউইন বলেন, রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড কিন্তু মনে করেন না, ইয়াহিয়া আদৌ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হবেন। ভ্যান হােলেন মন্তব্য করেন, ইয়াহিয়ার সমস্যা আসলে তার সামরিক নেতাদের নিয়ে। তিনি আলােচনায় ততদূরই যেতে পারেন যতটা সামরিক নেতারা অনুমতি দেন। ৭ অক্টোবর ১৯৭১ ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সােভিয়েত ইউনিয়নকে বলা হবে, ভারতকে সংযত হতে আহ্বান জানাতে। একই আহ্বান রাখা হবে শাহের মাধ্যমে ইয়াহিয়া খানের কাছে। এই বৈঠকে জনসন মন্তব্য করেন, একটা উল্লেখযােগ্য নতুন অগ্রগতি ঘটেছে। সেটা উৎসাহব্যঞ্জক। ইরানের শাহ ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং রাজনৈতিক সমঝােতায় পৌছতে প্রবল। চাপ সৃষ্টি করেছেন। ভ্যান হােলেন বলেন, শাহ ইয়াহিয়াকে বলেছেন, আপনারা যদি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান তাহলে মিলিটারি শােডাউনের কোনাে সুযােগ নেই, রাজনৈতিক সমঝােতার পথই বেছে নিতে হবে। জনসন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা যােগাযােগ বজায় রেখে চলেছি, সংলাপে উৎসাহিত করছি কিন্তু বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত স্বাধীনতার জন্য চাপ দিচ্ছেন। স্যান্ডার্স এ পর্যায়ে প্রশ্ন করেন, আমরা কি রাষ্ট্রদূত ম্যাক আর্থারকে শাহের সঙ্গে পুনরায় আলাপ করতে বলব? শাহ যাতে বিষয়টি নিয়ে আবার ইয়াহিয়ার সঙ্গে কথা বলে। ৮ অক্টোবর স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে পাকিস্তান দূতাবাসে প্রেরিত টেলিগ্রামে তথ্য দেয়া হয়, তেহরানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে তিনি অনতিবিলম্বে শাহের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাকে জানিয়ে দেবেন বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা ভয়ানক উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রদূত শাহকে এ কথাও বলবেন, বর্তমান। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক সমাধানের শাহ এবং আমাদের স্বার্থ অভিন্ন।
শাহকে যদি না পাওয়া যায় রাষ্ট্রদূত সেক্ষেত্রে আলমের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেবেন। রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শ দেয়া হয়, শাহ অথবা আলমের সঙ্গে আলােচনায় আপনি এই তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন, বর্তমান মাসেই ৪০ হাজারের বেশি মুক্তিবাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ওয়াশিংটনের নির্দেশক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ করা হয়নি) শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই কর্মকর্তা শাহকে উৎসাহিত করেন, তিনি যেন পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেন। জবাবে শাহ বলেন, আমি পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে পারলে খুবই বাধিত হব। তবে আমি যা কিছু পাকিস্তানকে দেব তা কিন্তু আপনাদের অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করে দিতে। হবে। একই দিন আম্মানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডিন ব্রাউন বাদশা হােসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাদশা এ সময় তাকে ইয়াহিয়ার প্রেরিত একটি টেলিগ্রাম দেখান। ইয়াহিয়া বাদশার কাছে ৮/১০টি এফ-১০৪ যুদ্ধ বিমান চেয়েছেন। বাদশা হােসেন বলেন, এসব বিমান যেহেতু আপনাদের তাই মতামত জানতে চাইছি। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ একজন ঊর্ধ্বতন দূতাবাস কর্মকর্তা তেহরানে শাহের সঙ্গে দেখা করেন। আলােচনার বিষয়বস্তু ছিল পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেয়া। শাহ বলেন, তিনি তেহরানে পাকিস্তানি রাষ্টদূতকে জানিয়েছেন, সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের মৈত্রী চুক্তির ফলে তিনি পাকিস্তানকে ইরানীয় বিমান ও পাইলট দিতে অপারগ। কারণ তিনি সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে পারেন না ।
শাহ একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জর্ডানকে অনুরােধ করুক যে, পাকিস্তানকে এফ-১০৪ যুদ্ধ বিমান দিতে। জর্ডান এতে রাজি হলে তিনি জর্ডানকে দুই স্কোয়াড্রন বিমান সরবরাহ করবেন। জর্ডানের প্লেন ও পাইলটরা পাকিস্তানে মুসলিম ভ্রাতাদের সহযােগিতা দানকালে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা তখন পূরণ করতে সচেষ্ট থাকবে ইরান। দূতাবাস কর্মকর্তা ইঙ্গিত দেন, মার্কিন সামরিক সম্ভার স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওয়াশিংটনের পক্ষে এ ধরনের বােঝাপড়ার অনুকূলে কোনাে সবুজ সংকেত দেয়া সম্ভব নয়। শাহ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার আকাক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবে। একই দিনে নিক্সন এটর্নি জেনারেল মিশেল ও কিসিঞ্জার দক্ষিণ এশীয় সংকট নিয়ে আলােচনা করতে এক বৈঠকে মিলিত হন। কিসিঞ্জার ইরানের শাহের কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি বার্তা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মনােযােগ আকর্ষণ করেন, এতে শাহ বলেছেন, ভারত ও সােভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি থাকার কারণে তিনি পাকিস্তানকে যুদ্ধ বিমান দিতে পারবেন না। তাই তিনি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন, জর্ডান যেন পাকিস্তানে তাদের যুদ্ধ বিমান পাঠায়। এর আরেকটা সুবিধা হচ্ছে পাকিস্তানিরা জর্ডানীয় প্লেন চালাতে সক্ষম। নিক্সন বলেন, জর্ডান সম্পর্কে আমরা ইসরাইলের কাছ থেকে একটি অঙ্গীকার আদায় করতে পারি।’ নিক্সন ও কিসিঞ্জার একমত হন, ইসরাইল এ সময় যাতে সংযত থাকে তা আমরা আলাপ-আলােচনা করে ঠিক করে নিতে পারি।
নিক্সন এ সময় কিসিঞ্জারকে প্রধানমন্ত্রী গােল্ডা মায়ারের সঙ্গে আলােচনার জন্য পরামর্শ দেন। নিক্সন বলেন, হেনরি, আপনি গােন্ডা মায়ারকে বুঝিয়ে বলবেন, দেখুন এটা একটা রাশান ষড়যন্ত্র । ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১। কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বৈঠক। এতে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের অ্যাডমিরাল টমাস এইচ মুরার বলেন, আমরা একটা রিপাের্ট পেলাম, চীনা ট্রাক এগিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে কী রয়েছে তা আমরা জানি না। ইরান জ্বালানি সরবরাহের যৌক্তিক উৎস। আমি ন্যাটোতে তুর্কি চিফ অব স্টাফের সঙ্গে কথা বললাম। বুঝতে চাইলাম পাকিস্তানকে সহায়তা দিতে ইরান কতটা প্রস্তুত। তিনি বললেন, শাহ সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু তার এক চোখ স্থির ছিল ইরাকের ওপর। সুতরাং তিনি বিশ্বাস করেন না, শাহ উল্লেখযােগ্য কোনাে সহায়তা দেবে। এ সময়ের সিআইএ’র পরিচালক বলেন, আমরা আজকেই ডগ হেকের কাছ থেকে একটি উত্তম টেলিগ্রাম পেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, শাহ খুব ঠাণ্ডা মাথায় এবং ভেবে-চিন্তেই পরিস্থিতি নিয়ে খেলছেন। তিনি পুন সরবরাহের জটিলতার দিকে গুরুত্ব আরােপ করেছেন। কিসিঞ্জার মন্তব্য করেন, আসলে আমাদের জটিল দৃষ্টিভঙ্গিই যত সমস্যার মূলে। আমাদের কাছ থেকে তারা যদি ইঙ্গিত পেত তাহলে তাদের পক্ষে পাকিস্তানকে সাহায্য করা সম্ভব হতাে। কিন্তু জর্ডানের সঙ্গে আমরা যা করেছি তা তারা নিশ্চয় বিবেচনায় নিয়েছে। তারা আসলে আমাদের কাছ থেকে পাকিস্তানকে সহায়তা না দেয়ারই সংকেত পাচ্ছে।
কথাটা সরাসরি না হলেও অন্তত অবচেতনগতভাবে তাে বটেই ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট নিক্সন কিসিঞ্জারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নিক্সন জানতে চান, বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ কতদূর? কিসিঞ্জার তাকে নিশ্চিত করেন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতাে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি আরাে বলেন, পাকিস্তানের পথে ইতােমধ্যেই চারটি প্লেন রওয়ানা হয়ে গেছে, আরাে ২২টি আসছে। আমরা সৌদি আরব ও তুরস্কের সঙ্গে কথা বলেছি। মনে হচ্ছে তুরস্ক পাঁচটি প্লেন দেবে। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি হুয়াং হুয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন কিসিঞ্জার ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জর্জ বুশ (সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বুশের পিতা জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশ)। কিসিঞ্জার এ সময় বলেন, মি. হুয়াং হুয়া আপনাকে এটা বুঝতে হবে, আমাদের পক্ষে এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করা সম্ভব নয়। আইন আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। শুধু তাই নয়। আমরা এমনকি মার্কিন অস্ত্র রয়েছে এমন কোনাে বন্ধু দেশকেও বলতে পারি না, তােমরা এখন পাকিস্তানকে আমাদের অস্ত্র দাও। সে কারণে আমরা কিছু বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ইতােমধ্যে কথা বলেছি জর্ডান, ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে।
আমরা কথা বলব তুরস্কের সঙ্গে। রাষ্ট্রদূত বুশ সাধারণভাবে এসব আলােচনার জন্য যেসব চ্যানেলে কথা বলে পরিচিত সে পথে আমরা যাব না। আমরা। বলছি, তারা যদি তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে আমেরিকান অস্ত্র পাকিস্তানে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তার প্রতিবাদ ছাড়া আমাদের পথ খােলা নেই। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই বিষয়টি বুঝতে সক্ষম থাকব। আমরা প্রতিবাদ ঠিকই করব, কিন্তু একটু রেখে ডেকে । একেবারে গলা ফাটিয়ে নিশ্চয় নয়। আর আগামী বাজেটে তাদের সমস্যা পুষিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকব। এই বােঝাপড়ার ভিত্তিতে আজ জর্ডান থেকে চারটি প্লেন রওয়ানা দিচ্ছে। আর সপ্তাহান্তে আরাে ২২টি রওয়ানা দেবে। এছাড়া ইরান থেকে অন্যান্য সরঞ্জাম ও গােলাবারুদ যাচ্ছে। এই আলােচনা যখন হচ্ছিল। তখন ওয়াশিংটন সময় ছিল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট থেকে ৭টা ৫৫ মিনিট। রাষ্ট্রদূত হুয়াং বলেন, আপনি কি সপ্তাহজুড়ে বলছেন। কিসিঞ্জার বলেন, আমরা ঠিক জানি না সঠিক সময়। কিন্তু এটা যে অনতিবিলম্ব তা বুঝতে পারি। নিকট ভবিষ্যতে তুরস্ক থেকে ছয়টি প্লেন যাবে। দেখুন এটা কিন্তু খুবই গােপনীয়। জানা হােক তা আমরা চাই না। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এদিনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আমরা উম্মা লক্ষ্য করি। কারণ, নিজেরা তাে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিতেই পারল না, আর এতদিন ধরে মুসলিম রাষ্ট্রগুলাের পক্ষে সরবরাহের যে আশ্বস তারা পেয়েছিল তা বাস্তবে কাজে আসেনি। দেব, দিচ্ছি বলে কেউ কিছুই দেয়নি। এদিন কিসিঞ্জার নিক্সনের কাছে পরিস্থিতি। ব্যাখ্যা করেন এক স্মারকের মাধ্যমে। এই স্মারকের ওপর একটি স্ট্যাম্প রয়েছে, যার থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন এটা দেখেছিলেন।
এই স্মারকের শুরুতেই বলা হয়েছে, ঢাকায় যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানি কমান্ডার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা গত রাতে দিল্লিকে পৌছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সকাল ৮টা পর্যন্ত কোনাে সাড়া মেলেনি। নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তৎপরতা আজ সকাল পর্যন্ত চলবে। ভুট্টো দৃশ্যত পূর্ব পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দায়দায়িত্ব যাতে কোনােভাবে তার কাঁধে এসে না পড়ে, সে ব্যাপারে সতর্ক। সর্বশেষ ভারতীয় রিপাের্টগুলাে থেকে ইঙ্গিত মিলছে, ঢাকায় ভারি গােলাবর্ষণ হচ্ছে এবং তিনটি ভারতীয় সেনাদল ঢাকার কয়েক মাইলের মধ্যে পৌছে গেছে। তারা এখন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। | এমন পটভূমিতে কিসিঞ্জার নিক্সনকে আক্ষেপের সুরে জানাচ্ছেন, নভেম্বরের শেষাশেষি থেকে বিভিন্ন ধরনের রিপাের্ট পাচ্ছিলাম যে, অন্য মুসলিম দেশগুলাে পাকিস্তানকে সামরিক সরবরাহ ইতােমধ্যেই পাঠাতে শুরু অথবা পরিকল্পনা করছে। এসব দেশের মধ্যে ছিল তুরস্ক, জর্ডান, সৌদি আরব, লিবিয়া ও মিসর। কিন্তু এসব রিপাের্ট থেকে ইঙ্গিত মিলছিল, পাকিস্তানি এয়ারক্রাস্টের জন্য পেয়ার পার্টস এবং নতুন যুদ্ধ বিমান ও তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে। কিন্তু কোনাে বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই, (এখানে একটি বাক্যের কম অংশ অবমুক্ত করা হয়নি) যা দিয়ে আমরা এসব রিপাের্টের একটিরও সত্যতা যাচাই করতে পারি। আমরা সত্যি বুঝতে পারছি না, আসলে কেউ পাকিস্তানকে আদৌ কিছু পাঠিয়েছে কি না?
সূত্র: ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন