মােশতাকের অনুরােধ প্রত্যাখ্যান
ওয়াশিংটন ১৩ আগস্ট, ১৯৭১ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্টাফ হেরাল্ড সেন্ডার্স কিসিঞ্জারকে দেয়া এক স্মারকে বলেন, আপনি জানেন যে, ভারতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা সম্প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে একটা সমঝােতায় পৌছতে নয়াদিল্লি ও কলকাতায় মধ্যম পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যােগাযােগ করেছেন। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয়, তারা সত্যিই কী মাছ শিকার করতে চাইছে। কলকাতায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী’র তরফে কথিত আকাক্ষা হচ্ছে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার চেয়ে কিছু কম পেয়ে সমঝােতা চান। অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব’ পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্নে ঠিক। বিপরীত আকাক্ষা ব্যক্ত করেছেন। এই প্রশ্নে আগামীকাল কলকাতায় আরেক দফা। আলােচনার দিনক্ষণ স্থির হয়েছে। এই নথির ফুটনােটে লেখা হয়েছে ৮ আগস্ট নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর বাংলাদেশ আন্দোলনের পররাষ্ট্র সচিব এম. আলমের (মাহবুব আলম চাষী) বৈঠক করেন। আলম রাষ্ট্রদূত কিটিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ ব্যক্ত করেন। কিন্তু যখন তাকে জানানাে হয় যে, কিটিংয়ের পদমর্যাদার কারণে তার পক্ষে কোনাে বাংলাদেশ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করা সম্ভব নয়। পরে তিনি। পলিটিক্যাল কাউন্সিলরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রাজি হন।
আলম যা বলেছেন, তার সার কথা হচ্ছে- বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেজন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন। (টেলিগ্রাম ১২৬৯৮, নয়াদিল্লি, ৯ আগস্ট, ন্যাশনাল আরকাইভস, আর জি ৫৯, সেন্ট্রাল ফাইলস, ১৯৭০-৭৩, পল। ২৩-৯ পাক)।] কিসিঞ্জারের কাছে প্রদত্ত স্মারকে সেন্ডার্স একটি টেলিগ্রাম বার্তার খসড়া উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সমঝােতা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি ও কলকাতার মার্কিন মিশনে সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে এতে কিসিঞ্জারের অনুমােদন প্রার্থনা করা হয়। এই ক্যাবলটি ১৪ আগস্ট স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। পাঠানাে হয়। এটি অবশ্য মুদ্রিত হয়নি। তবে যেসব সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে কিসিঞ্জারের অনুমােদন চাওয়া হয় তা ছিল নিম্নরূপ: – স্টেট ডিপার্টমেন্টকে না জানিয়ে বাংলা দেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভবিষ্যতেরকোনাে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রশ্নে কোনােভাবেই কথা দেয়া যাবে না। ইতােমধ্যেই আগামীকাল যে বৈঠকের আয়ােজন করা হয়েছে তাতে আমাদের তরফে কোনাে উৎসাহ দেখানাে যাবে না। শুধু শুনে যেতে হবে। স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে আওয়ামী লীগ সমঝােতায় আসতে ইচ্ছুক কি না তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এটা অবশ্য অনুমােদিত (ফুটনােট কলকাতায় কনস্যুলেট জেনারেলের একজন কর্মকর্তা ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাইউমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কাইউম পুনরায় নিশ্চিত করেন যে, তিনি যা কিছুই বলছেন তা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশক্রমেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্ণ স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছু পেলেও সমঝােতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাইউম গুরুত্ব আরােপ করেন যে, পূর্ববাংলার জনগণের পক্ষে শুধু মুজিবুর রহমানই সমঝােতায় পৌছাতে পারেন এবং তিনিই শুধু জনসাধারণকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে সক্ষম (টেলিগ্রাম ২৩২১, কলকাতা থেকে ১৪ আগস্ট)।
আমরা অবশ্যই এমন কোনাে অবস্থান নেব না, যেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের যােগাযােগ নিয়ে ইসলামাবাদ বা তাদের মধ্যে ভুল বােঝাবুঝি সৃষ্টি না হয় (ফুটনােট ইসলামাবাদের দূতাবাস ১২ আগস্ট সতর্ক করে দিয়েছে, পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল। দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে যে, এ ধরনের যােগাযােগকে যতটা সম্ভব লাে-প্রােফাইলে এবং বেসরকারি চরিত্র দিতে সমস্যার প্রতি আমাদের করণীয় সম্পর্কে এ পর্যন্ত এরকমের একটা অবস্থান নেয়াই উত্তম। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটা অনানুষ্ঠানিক যােগসূত্র বজায় রাখা আমাদের স্বার্থের অনুকূল। তবে একই সঙ্গে এ ব্যাপারে অগ্রসর হতে হলে অবশ্যই ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলােচনা অব্যাহত রাখব।
ক্যাবলের বক্তব্য হচ্ছে, পররাষ্ট্র দফতরের উচিত হবে এসব ঘটনাবলি সম্পর্কে ইয়াহিয়াকে অবহিত করা। কিছু জানা মাত্রই কালবিলম্ব না করে তাকে জানিয়ে দিতে হবে। এই স্মারকে এ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয় যে, যাতে কোনাে ভ্রান্তির অবকাশ না থাকে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট ক্যাবলটি আপনি অনুমােদন করতে পারেন। আপনি চাইলে সিসকোকে (সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মৌখিকভাবে বলতে পারেন। এ ব্যাপারে পরে কোনাে বার্তা প্রেরণ করতে হলে তা যেন আপনাকে দেখিয়ে নেয়া হয়।’ ১৪ আগস্ট নিক্সন ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত তার চিঠিতে উল্লেখ করেন। আপনি ২৮ জুন যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় রিকনসিউলিশনের যে উদ্যোগ নেয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন তা সংকট নিরসনে সহায়ক হবে। এরপর ১৯ আগস্ট ৭১ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০ আগস্ট প্রেরিত এক টেলিগ্রামে তিনি এ বিবরণ জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার পরিকল্পনা ব্যক্ত কোনাে বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রশ্নে কোনােভাবেই কথা দেয়া যাবে না।ইতােমধ্যেই আগামীকাল যে বৈঠকের আয়ােজন করা হয়েছে তাতে আমাদের তরফে কোনাে উৎসাহ দেখানাে যাবে না। শুধু শুনে যেতে হবে। স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছুতে আওয়ামী লীগ সমঝােতায় আসতে ইচ্ছুক কি না তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এটা অবশ্য অনুমােদিত (ফুটনােট কলকাতায় কনস্যুলেট জেনারেলের একজন কর্মকর্তা ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাইউমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কাইউম পুনরায় নিশ্চিত করেন যে, তিনি যা কিছুই বলছেন তা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশক্রমেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্ণ স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছু পেলেও সমঝােতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।
কাইউম গুরুত্ব আরােপ করেন যে, পূর্ববাংলার জনগণের পক্ষে শুধু মুজিবুর রহমানই সমঝােতায় পৌছাতে পারেন এবং তিনিই শুধু জনসাধারণকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে সক্ষম (টেলিগ্রাম ২৩২১, কলকাতা থেকে ১৪ আগস্ট)। আমরা অবশ্যই এমন কোনাে অবস্থান নেব না, যেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের যােগাযােগ নিয়ে ইসলামাবাদ বা তাদের মধ্যে ভুল বােঝাবুঝি সৃষ্টি না হয় (ফুটনােট ইসলামাবাদের দূতাবাস ১২ আগস্ট সতর্ক করে দিয়েছে, পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল। দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে যে, এ ধরনের যােগাযােগকে যতটা সম্ভব লাে-প্রােফাইলে এবং বেসরকারি চরিত্র দিতে সমস্যার প্রতি আমাদের করণীয় সম্পর্কে এ পর্যন্ত এরকমের একটা অবস্থান নেয়াই উত্তম। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটা অনানুষ্ঠানিক যােগসূত্র বজায় রাখা আমাদের স্বার্থের অনুকূল। তবে একই সঙ্গে এ ব্যাপারে অগ্রসর হতে হলে অবশ্যই ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলােচনা অব্যাহত রাখব।
ক্যাবলের বক্তব্য হচ্ছে, পররাষ্ট্র দফতরের উচিত হবে এসব ঘটনাবলি সম্পর্কে ইয়াহিয়াকে অবহিত করা। কিছু জানা মাত্রই কালবিলম্ব না করে তাকে জানিয়ে দিতে হবে। এই স্মারকে এ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয় যে, যাতে কোনাে ভ্রান্তির অবকাশ না থাকে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট ক্যাবলটি আপনি অনুমােদন করতে পারেন। আপনি চাইলে সিসকোকে (সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মৌখিকভাবে বলতে পারেন। এ ব্যাপারে পরে কোনাে বার্তা প্রেরণ করতে হলে তা যেন আপনাকে দেখিয়ে নেয়া হয়।’
১৪ আগস্ট নিক্সন ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত তার চিঠিতে উল্লেখ করেন। আপনি ২৮ জুন যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় রিকনসিউলিশনের যে উদ্যোগ নেয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন তা সংকট নিরসনে সহায়ক হবে। এরপর ১৯ আগস্ট ৭১ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০ আগস্ট প্রেরিত এক টেলিগ্রামে তিনি এ বিবরণ জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার পরিকল্পনা ব্যক্ত করে বলেন, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনে বাঙালিদের সম্পৃক্ত করতে চান। এজন্য ৮৮ জন সাবেক এমএনএ’কে তিনি দায়মুক্ত ঘােষণা করছেন। প্রশ্নের জবাবে ইয়াহিয়া এ কথাও বলেন, অবশিষ্ট নির্বাচিত এমএনএ’দের বিরুদ্ধে অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযােগ রয়েছে। অবশ্য তারা চাইলে নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা ন্যাশনাল এসেম্বলিতে যােগদানের সুযােগ পাবেন। ইয়াহিয়া তথ্য দেন যে, এই ৮৮ এমএনএ-র মধ্যে বর্তমানে ঢাকায় ১৫ বা ১৬ জন উপস্থিত রয়েছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তায় সরকার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। অবশিষ্ট ৭২ জন এমএনএ হয় গ্রামাঞ্চলে অথবা ভারতে অবস্থান করছেন। ইয়াহিয়া অবশ্য জানেন না, এদের মধ্যে কতজন এসেম্বলিতে যােগদানে এগিয়ে আসবে। তিনি অবশ্য বলেন, এসেম্বলিতে যােগদানের ক্ষেত্রে আমি একটা সময় সীমা বেঁধে দেব। ইয়াহিয়ার সঙ্গে ফারল্যান্ডের এই বৈঠককালে মরিস উইলিয়ামস উপস্থিত ছিলেন।
তিনি ১৭-২৩ আগস্ট পাকিস্তান সফর করেন। মরিস আলােচনার এ পর্যায়ে মত প্রকাশ করেন, আওয়ামী লীগকে তাে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৮৮ জন ছাড়া অন্যদের যদি ক্লিন করা হয় তাহলে তিনি দলটিকে পুনর্জীবিত করতে পারেন। এবং পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ৮৮ সদস্যের সঙ্গে তিনি আলােচনা করতে পারেন। ফারল্যান্ড লিখেছেন এ প্রসঙ্গটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। এতে ইয়াহিয়া এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয় যে, শুদ্ধিকরণ যেমনই হােক না কেন, তিনি আওয়ামী লীগের নাম শুনতেও রাজি নন। (ফুটনােট ইসলামাবাদ থেকে ২০ আগস্ট ১০৩১ টেলিগ্রামে ফারল্যান্ড কিসিঞ্জারকে জানান, উইলিয়ামস নিষিদ্ধ ঘােষিত আওয়ামী লীগকে পুনরায় বৈধতাদানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; কিন্তু বাস্তবতা এমনই যে, ইয়াহিয়া এমন কথা কানে তুলতেই রাজি নন। তার এই সংবেদনশীলতা সম্পর্কে কিসিঞ্জার ঠিকই অনুমান করতে পেরেছিলেন)।
ইয়াহিয়া মনে করেন ৮৮ জন আওয়ামী লীগার হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে সমঝােতা করবেন। তিনি বরং এই ৮৮ জনকে এসেম্বলিতে বসতে দিতে রাজি হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানে কঠোর সমালােচনার সম্মুখীন হয়েছেন। ২৪ আগস্ট ১৯৭১। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যােগাযােগের ব্যাপারে ইয়াহিয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফারল্যান্ড টেলিগ্রাম পাঠান সিসকোর কাছে (ফুটনােট ২২ আগস্ট ইসলামাবাদে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রেরিত ১৫৪০৭৮ নম্বর টেলিগ্রামে এই ইস্যুতে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাসকে পাক পররাষ্ট্র সচিব সুলতান খানের সঙ্গে আলােচনার অনুমতি দেয়া হয়। এতে সম্মতি দেন সিসকো, আরউইন এবং কিসিঞ্জার । এতে উল্লেখ করা হয়, কাইউমের প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝােতার একটা ক্ষীণ আলাের রেখা দেখা যাচ্ছে।’ দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, মার্কিন কর্মকর্তারা নিজেরা যেন জড়িয়ে না। পড়েন। কাইউমের কথা তারা শুনবেন, কিন্তু সে ব্যাপারে তারা তাদের নিজেদের মতামত প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন। মনে রাখতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চায় না। শুধু বন্ধু হিসেবে সাহায্য করতে আগ্রহী)।
এতে লেখা হয়েছে, কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের বিশেষ করে কাজী জহিরুল কাইউমের (কলকাতার কনসাল জেনারেল স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে প্রেরিত বার্তায় প্রথমে ভুলক্রমে কুমিল্লার সাবেক আইনজীবী খান আবদুল কাইউম খানের কথা উল্লেখ করেছিলেন) কাছ থেকে সংকেত পাওয়া গেছে। এই সংকেত থেকে দৃশ্যত ইঙ্গিত মিলছে যে, কলকাতায় এবং অন্যত্র অবস্থানরত উল্লেখযােগ্যসংখ্যক এমপিএ এবং এমএনএ পাকিস্তানের সঙ্গে আপােস চাইছে। তারা এমন এক সমঝােতা চায় যাতে পাকিস্তান অখণ্ডতা ও ঐক্য। বজায় থাকে। তবে তা তথাকথিত ৬ দফার সাধারণ মতবাদের আলােকে এবং মুজিব বিচারাধীন সত্ত্বেও সমঝােতা হতে হবে মুজিব ও ইয়াহিয়ার মধ্যেই। আমি ইয়াহিয়াকে বললাম আমরা এ কথা উল্লেখ করছি বটে। তবে আপনাকে স্পষ্ট বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে উদ্যোগ নিতে উৎসাহী নয়। পাকিস্তান সরকার কিংবা বেআইনি ঘােষিত আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনােভাবেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় যেতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকার অব্যাহতভাবে এই কূটনৈতিক অবস্থান রক্ষা করে চলেছে যে, আমরা এ ব্যাপারে জড়িত নই। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কোনাে যােগাযােগে যেতেও রাজি নই। আমি অবশ্য ইয়াহিয়ার সঙ্গে এ সংক্রান্ত নানা আলােচনার ফাঁকে বলেছি, এ ধরনের একটা সমঝােতায় পৌছানাে সম্ভব হলে তিনি জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ সংক্রান্ত তথ্য আপনার কাছে পৌছে দেয়াটা কর্তব্য মনে করেছে শুধুই শান্তি স্থাপনের আশায়।
সূত্র: ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন