You dont have javascript enabled! Please enable it!
৭ মার্চের ভাষণ শুনতে ওয়াশিংটনের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা
শেখ মুজিব ৭ মার্চে কী বলতে যাচ্ছেন তার দিকে তীক্ষ দৃষ্টি রাখে ওয়াশিংটন। শুধু মুজিব কী বলতে পারেন আর সে পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতে পারেতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতে উঠেন হেনরি কিসিঞ্জার ও তার হােয়াইট হাউসের পারিষদবর্গ। কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের এই বৈঠক বসে ওয়াশিংটনে ৬ মার্চ, ১৯৭১। সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে কিসিঞ্জার, স্টেট ডিপার্টমেন্টের এলেক্স জনসন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেভল ব্রেট, সিআইএ-র রিচার্ড হেলমস, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের ভাইস অ্যাডমিরাল জন ওয়েনেল। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কর্নেল রিচার্ড কেনেডি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কিসিঞ্জার আলােচনার শুরুতেই বলেন- যাক আমাদের কি করণীয় হবে তা রাত পােহালেই একটা ধারণা হবে। জনসন বলেন, মুজিবের ভাষণেই অনেক কিছু স্পষ্ট হবে। ইয়াহিয়া যে ভাষণ দিয়েছেন, তাকে আমাদের দূতাবাস মিঠেকড়া হিসেবে বর্ণনা করেছে। মুজিব যদি আমাদের কাছে আসেন এবং বলেন, তিনি এক তরফা স্বাধীনতার ঘােষণা দিতে চলেছেন, আর সে ক্ষেত্রে জানতে চান আমাদের মনােভাব কি হবে? তখন কিন্তু আমরা একটা ফাপরে পড়ব। সেজন্য আমাদের একটা অবস্থান ঠিক করতে হবে। ইয়াহিয়া যদি তার ঘােষণা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে শক্তি প্রয়ােগের  সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আমরা মনে রাখব, সেখানে ইয়াহিয়ার সৈন্য সংখ্যা ২০ হাজার। এরমধ্যে ১২ হাজার নিয়মিত সৈন্য। আর সবচেয়ে বড় কথা সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি বৈরী জনসংখ্যা।
এর পরিণতি হবে একটি রক্তস্নান। আর কোনাে দিনই পশ্চিম পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে না পূর্ব পাকিস্তানের ওপর। সেক্ষেত্রে আমরা তাড়াতাড়ি সংঘাত নিরসনে উদ্যোগী। হব। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে নেতৃত্ব আমাদের হাতে না অন্যদের কাছে চলে যাবে তা এখনই বলা মুশকিল। আমরা পরিস্থিতি নিয়ে আজ অপরাহত ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলেছি। মুজিবের রয়েছে অতুলনীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। গত নির্বাচনে ১৬২ আসনের মধ্যে মুজিব পেয়েছেন ১৬০ এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন । অন্যদিকে ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুরােদস্তুর বৈরী । যদিও আমরা আশা করছি যে, দুই অংশ একসঙ্গে থাকবে। রক্ষা করা যাবে পাকিস্তানের অখণ্ডতা। কিন্তু আমার মনে হয় সেই সম্ভাবনা এখন একেবারেই ক্ষীণ। এটা আসলে শুধু সময় ও পরিস্থিতির বিষয়। তারা কিভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে। সেই বিভক্তিটা কেমন হবে? সম্পূর্ণ নাকি একটা লােক দেখানাে কনফেডারেল ব্যবস্থা থাকবে? আমি আজ ঢাকা ও ইসলামাবাদে।
আমাদের লােকদের কাছে সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে একটা ধারণা সম্বলিত বার্তা পাঠাতে যাচ্ছি। ঢাকাকে বলব, তাদের কাছে মুজিব যদি প্রস্তাব পাঠায় তাহলে তারা যেন নিজেরা কোনাে সিদ্ধান্ত না নেয়, দ্রুত অবহিত করে ওয়াশিংটনকে। আমরাই তখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা সিদ্ধান্ত দেব। সাধারণভাবে আমরা পাকিস্ত েিনর অখণ্ডতা দেখতে চাই। যদি তা না হয়, তাহলে চেষ্টা করব যাতে যতটা সম্ভব। কম রক্তক্ষয় ও বিশৃখলা সৃষ্টির। মুজিব যদি আমাদের বলেই বসেন আমরা তখন একটা টান টান রশির ওপর দিয়ে হাঁটব। আমরা এমন একটা ভাব দেখাব যে, এ ব্যাপারে আমাদের মনােভাব শীতল। যদি আদৌ কোনাে সমঝােতার সম্ভাবনা অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমরা চেষ্টা করব ভাঙনের দিকে না যেতে। আমরা তাকে নিরুৎসাহিত করব। এ পর্যায়ে ক্রিস্টোফার ভ্যান হােলেন বলেন, আগামীকাল মুজিবের সামনে সম্ভবত তিনটি বিকল্প খােলা। প্রথমত, একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘােষণা, এর চেয়ে কম কিছু সম্ভবত দুটি সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানানাে। তৃতীয়ত, ২৫ মার্চে ইয়াহিয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির যে বৈঠক ডেকেছেন তাতে যােগ দিতে রাজি হওয়া।
কিসিঞ্জার : মুজিব কি অ্যাসেম্বলি নিয়ন্ত্রণ করছেন না? হােলেন : হ্যা। কিন্তু ইয়াহিয়াকে ছাড়া তিনি অ্যাসেম্বলির বৈঠক আহ্বান করতে পারেন না।  কিসিঞ্জার : ২৫ মার্চে অ্যাসেম্বলি ডাকা কেন পূর্ব পাকিস্তানের কাছে গ্রহণযােগ্য নয়? তারাই তাে অ্যাসেম্বলি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের বাদ দিয়ে তাে কোনাে কিছু পাস করা সম্ভব নয়।  হােলেন তারা এটাকে ইয়াহিয়ার আরেকটা কূটকৌশল হিসেবে গণ্য করতে পারে। কিসিঞ্জার তারা যদি একটি অ্যাসেম্বলি বৈঠকের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে তাহলে তাে আমাদের কোনাে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সমস্যা নেই।
জনসন : আমি একমত। তাপমাত্রা নামবে। কিসিঞ্জার : স্বাধীনতার ঘােষণার পেছনে কি মতলব থাকতে পারে?
হেলেন : পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলন সেদিকেই যাচ্ছে। ইয়াহিয়া ৩ মার্চে ডাকা অ্যাসেম্বলির বৈঠক স্থগিত করে তার গতি তীব্র করেছেন। বাঙালিরা ইয়াহিয়ার গতকালের বৈঠককে কঠোরভাবেই নিয়েছেন। কারণ, ঐ ভাষণে পরিস্থিতির জন্য মুজিবকে দায়ী ও শক্তি প্রয়ােগের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিসিঞ্জার : আমি একমত যে, শক্তির হমকি দেখিয়ে লাভ নেই। হেলেন : ঠিক। কিন্তু তারা সেই চেষ্টাই করতে পারবে। হেলমস আমরা এ কথাটা মনে রাখতে পারি যে, ইয়াহিয়া বলেছেন, তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙনের প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন না। কিসিঞ্জার তাদের সৈন্য সংখ্যা কত? হেলমস ২০ হাজার সৈন্য। কিসিঞ্জার পূর্ব পাকিস্তান কি রুখে দাঁড়াবে? তাদের জনসংখ্যা কত? জনসন সাড়ে সাত কোটি এবং তারা প্রতিহত করবেই। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারতের ওপর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসার অনুমতি হারাবে।
কিসিঞ্জার এটা হবে একটা অসম্ভব ব্যাপার। সৈন্য সংখ্যা বাড়াতে হলে তাদের নৌপথ ব্যবহার করতে হবে।
| জনসন তাদের কিছু সি-১৩০ বিমান রয়েছে। যেগুলাে সিলন (শ্রীলংকায়) জ্বালানি সুবিধা নিয়ে ঢাকায় আসতে পারবে। |কিসিঞ্জার সিলন হয়তাে সে সুযােগ প্রত্যাহার করতে পারে। তারা তা করবে কি?
হােলেন তারা এখন অনুমতি দেবে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে তারা মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে ।
জেমস নয়েস (স্টেট ডিপার্টমেন্টের) সিলন যাতে প্রত্যাখ্যান করে ভারত সেজন্য চাপ দেবে।
জনসন পাকিস্তানিরা তাদের জেট ট্রান্সপাের্ট ব্যবহার করতে পারে। নয়েস তাদের মাত্র ১১টি আছে। তার ধারণক্ষমতাও সীমিত। কিসিঞ্জার তাদের নিশ্চয় কিছু লজিস্টিক্স ব্যাকআপ রয়েছে।
নয়েস তাদের তিনটি জাহাজ আছে। যা দিয়ে এক সপ্তাহের মেয়াদে আট হাজার লােক স্থানান্তর করতে পারে।
হেলেন এসব সমস্যা সত্ত্বেও আমাদের ইসলামাবাদ দূতাবাস অনুমান করছে। ইয়াহিয়া শক্তি প্রয়ােগের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নয়েস ঢাকায় তাদের ১৫ হাজার সৈন্য রয়েছে।
কিসিঞ্জার : আপনি বলতে চাইছেন, তাদের ২০ হাজার সৈন্যের মধ্যে ১৫ হাজার এখন ঢাকায়? তারাই ঢাকা কজা করতে পারবে?
জনসন : আসলে পরিস্থিতি এমন নয় যে, ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করা সম্ভব।… পশ্চিম পাকিস্তান যদি শক্তি প্রয়ােগ করে, তাহলে রক্তস্নান অথবা অন্তত পূর্ব পাকিস্তানে আগুন জ্বলে উঠবে। যদি এর দ্রুত অবসান ঘটে তাহলে কোনাে সমস্যা নেই। কিন্তু এটা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সমস্যা হবে। কারণ, ভারতীয়রা এবং সম্ভবত অন্যরাও তখন। হস্তক্ষেপের চিন্তা করতে পারে। কিন্তু স্বল্পকালীন সময়ের জন্য এমন সম্ভাবনা নেই।  কিসিঞ্জার পশ্চিম পাকিস্তানিরা যাতে শক্তি প্রয়ােগ না করে, এজন্য তাদের নিরুৎসাহিত করতে আমাদের কি করা উচিত। ইয়াহিয়াকে কি আমরা বলব যে, আমরা কিন্তু এটা সমর্থন করব না?
জনসন আমাদের প্রথমেই ব্রিটিশদের কাছে পেতে হবে। তাদেরকেই বলব। আপনারাই নেতৃত্ব দিন। আমাদের নেতৃত্ব নেয়া ঠিক হবে না। হেলমস : আমেন! কিসিঞ্জার : হস্তক্ষেপ করা হবে প্রায় আত্মপরাজয়ের শামিল।
জনসন পরিস্থিতির প্রতি আমাদের কোনাে নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রভাবও খুবই সামান্য। কিসিঞ্জার মুজিব কখন ভাষণ দেবেন? হেলমস আগামীকাল। গ্রিনিচ মান সময় ১৬০০।
হােলেন নেতৃত্ব দিতে আমাদের না জড়ানাের আর একটি কারণ হলাে পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের সন্দেহ করে। তারা ভাবে আমরা একটি পৃথক পূর্ব পাকিস্তান সমর্থন করছি। আমরা যদি এখন ইয়াহিয়াকে বলি শক্তি প্রয়ােগ করা ঠিক হবে না। তাহলে এতে শুধুই সন্দেহের আগুনে ঘি ঢালা হবে।  কিসিঞ্জার : প্রেসিডেন্ট এমন কিছু করতে খুবই শীতল মনােভাব দেখাবেন। যাকে ইয়াহিয়া ব্যক্তিগতভাবে দোষে নিতে পারেন।
ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভুট্টোকে নাচাতে সক্ষম হবেন। যদি পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানকে ভুট্টো করায়ত্ত করতে পারবেন।…
জনসন আমরা কাল ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলব । নিজেরাও আবার বৈঠকে বসব। দেখি মুজিব তার ভাষণে কি বলেন? যদি তিনি স্বাধীনতার ঘােষণা দেন আমরা কি তাহলে অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের অনুরােধ পাব?
জনসন : সম্ভবত। কিন্তু আমরা কিন্তু তাড়াহুড়া করব না। আমাদের দেখতে হবে মুজিব আমাদেরকে কিভাবে এপ্রােচ করেন? আমরা কিন্তু প্রথম স্বীকৃতি দাতাদের দলে থাকব না। আমরা ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলব। কারণ, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে তাদের স্বার্থ রয়েছে।  হােলেন জাপান, সম্ভবত পশ্চিম জার্মান ও ফদ্ধান্সের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে।
জনসন শেষ পর্যন্ত আমরা স্বীকৃতি দেব। কিন্তু প্রথম দেশ হব না।
কিসিঞ্জার : আচ্ছা স্বীকৃতির অনুরােধ যদি ঢাকায় আমাদের কনসাল জেনারেলের কাছে প্রথম আসে? তখন তিনি কি বলবেন? হােলেন কেন? তিনি তখন বলবেন আচ্ছা, আমি ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দিচ্ছি।
জনসন আমি আজই তাদের এ কথা জানিয়ে দেব। অবশ্যই আমাদের না জানিয়ে তারা তাে কিছু বলবে না।
কিসিঞ্জার আমাদের তৃতীয় বিকল্পে বলা হয়েছে, যদি সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলব। আমি অবাক হচ্ছি এটা কি
বলা ঠিক হবে? আমি বরং বলি কি, যদি ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি থাকে, তাহলে বরং রতকে আমরা এটা বলি যে, দেখ এমনটা করা কিন্তু ঠিক হবে না।
হােলেন, : একেবারে গােড়াতেই ভারতীয় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। কিসিঞ্জার : চীনা সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও কিন্তু খুবই কম।
হােসেন যদি সত্যিই একটি প্রকৃত রক্তস্নানের ঘটনা ঘটে। আর আমরা বায়াফদ্ধা পরিস্থিতি দেখতে পাই তাহলে আমরা গােটা বিষয়টি রিভিউ করতে পারি। সেক্ষেত্রে এই সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে।
জনসন । যাই ঘটুক না কেন? পশ্চিম পাকিস্তানকে কোনাে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হুমকি। দেব না।… আচ্ছা মুজিবের ভাষণ সম্পর্কে আমরা কখন শুনতে পারব।
নয়েস : সকাল প্রায় ৫টায়।
স্যান্ডার্স (এনএসসি স্টাফ) দশ ঘন্টার ব্যবধান। কিন্তু আমাদের এটা জানতে হবে খুব সকালেই। ইয়াহিয়ার ভাষণ গতকাল আমরা শুনেছি সিবিএস এর আটটার। খবরে।
জনসন মুজিবের ভাষণের জন্য আমাদের অপারেশন সেন্টারে সতর্ক অবস্থা জারি থাকবে।
কিসিঞ্জার : মুজিবের ভাষণ সম্পর্কে যখনই আমরা জানতে পারব, তখনই আমরা পরস্পরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!