You dont have javascript enabled! Please enable it! ভারত ভাঙনের প্রথম পদক্ষেপ বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক
ভারত ভাঙনের প্রথম পদক্ষেপ বাংলাদেশ
নিক্সন ও কিসিঞ্জার ১৯৬৯ সালেই জানতেন বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক সমীক্ষায় এ কথাই বলা হয় যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয় হবে। ভারতীয় ইউনিয়ন খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে প্রস্তুত ১৯ পৃষ্ঠার এক মার্কিন দলিলে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে পাকিস্তান আরাে বিপর্যয়ের মুখােমুখি হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে একটি ডামাডােলপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতার বিশ্বাসযােগ্য হুমকি, আইয়ুব সরকারের পতন এবং সামরিক আইন দিয়ে আবারাে সরকার প্রতিষ্ঠা পাকিস্তানকে এক ভয়ানক ক্রান্তিকালের মুখে দাড় করিয়েছে। অনেক বিজ্ঞ পাকিস্তানি ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অঘটন দিন দিন যেভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে তাতে এর পরিণামে, এমনকি আগামী অল্প কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তান ভেঙে যেতে পারে। আর যদি তা-ই ঘটে সেক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানে একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী সরকারের উত্থানের সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল। এই সরকারের উপর চীনা কমিউনিস্টদের প্রভাব অত্যধিক হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। একটি বিচ্ছিন্ন-পূর্ব পাকিস্তান হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তার পূর্বাঞ্চলীয় অংশগুলাের কাছে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এক শক্তিশালী চুম্বক। একটি বিচ্ছিন্ন-পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পথে হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
এই দলিল তৈরি করেছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এটি অনুমােদন করে এবং ১৯ নভেম্বর এর কপি কিসিঞ্জারের কাছে পাঠানাে হয়। এ সময়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ বজায় ছিল। দলিলে বলা হয়েছে, ভারতের ওপর উল্লেখযােগ্য। চীনা আক্রমণ অত্যাসন্ন প্রতীয়মান হয় না। এশিয়ার অন্যতম কমিউনিস্ট শক্তি চীনের। বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক সামর্থ্য শক্তিশালী থাকার ক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। আরেকটি চীনা আক্রমণের ভয়ে ভারত যেন ভীত না থাকে সেদিকেও আমাদের খেয়াল দিতে হবে। এতে আরাে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া ইতােমধ্যেই দুই পরাশক্তির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে গেছে। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়ন কম-বেশি সমানতালে পা ফেলতে পারে। যদিও কমিউনিস্ট চীন এক্ষেত্রে এক সক্রিয় প্রতিযােগী । দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাে এখনাে পর্যন্ত সােভিয়েত অথবা চীনা শাসন পদ্ধতির প্রভাবের উর্ধ্বে থাকতে পেরেছে। এই মুহূর্তে এই অঞ্চলের সব দেশ অ-কমিউনিস্ট সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু কমিউনিজমের প্রতি স্থানীয় ঝোক ভারতের গণতান্ত্রিক পরীক্ষার প্রতি এক বিরাট হুমকি এবং চীনা কমিউনিস্টরা পূর্ব পাকিস্তানের অসন্তোষ থেকে ফায়দা নিতে উদগ্রীব, যা কিনা পাকিস্তান বিভক্তি ও একইসঙ্গে ভারতীয় জঙ্গিদের প্রতি সমর্থনদানের জন্য এক অশনি সংকেত।
১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের অবস্থা মূল্যায়ন করতে গিয়ে আরেকটি দলিলে বলা হয়েছে, ‘সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে পূর্ব পাকিস্তানে। সেখানকার বেশিরভাগ লােক মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। সাম্প্রতিক অসন্তোষ কার্যত বিচ্ছিন্নতাবাদের আন্দোলনকেই নতুন গতি দিয়েছে এবং প্রায় সব বিরােধীদলীয় রাজনীতিক কোনাে কোনাে মাত্রায় স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সােচ্চার। পশ্চিম পাকিস্তানেও একই অনুভূতি বিরাজমান। কিন্তু তা ততটা শক্তিশালী নয়। আইয়ুবের অধীনে পাঞ্জাবি ও পাঠানরা পাকিস্তানের রাজনীতিতে যেভাবে কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে তা তারা মােটেই সুনজরে দেখছে না। মে, ১৯৬৯ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে আধঘন্টার এক আলােচনায় মিলিত হন। এই বৈঠকের বিবরণ দিয়ে রজার্স এক টেলিগ্রাম পাঠান। এতে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বললেন, তিনি বুঝতে পারছেন যে, আমরা চীনাদের সঙ্গে আলােচনা শুরু করতে চাচ্ছি। ভারত মনে করে, চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণ নেই। ইন্দিরা আশা প্রকাশ করেন যে, এমন একদিন আসবে, চীনারা বদলে যাবে। তিনি ইঙ্গিত দেন, চীনের প্রতি ভারতের অবস্থান অনমনীয় নয়। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন, চীনারা ভারতের কতিপয় বৈরী উপজাতী গােষ্ঠীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে। চীনারা কতিপয় ভারতীয় রাজনৈতিক ও সমাজবিরােধী চক্রের সমর্থন পাচ্ছে বলেও ইন্দিরা উল্লেখ করেন। ইন্দিরার কথায়, ‘চিনপন্থি কমিউনিস্ট গ্রুপ সহিংসতায় বিশ্বাস করে এবং এমনকি তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট সরকারের বিরােধিতায়ও লিপ্ত। সংখ্যায় তারা অল্প। কিন্তু তাদের প্রতি নজরদারি প্রয়ােজন। বৈঠক শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চিঠি ইন্দিরার কাছে হস্তান্তর করেন। ইন্দিরা তার শুভেচ্ছা প্রেসিডেন্টকে পৌছে দিতে অনুরােধ জানান।
২৫ এপ্রিল, ১৯৬৯ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়েলার্ট তার টেলিগ্রাম বার্তায় লিখেছেন, আমরা জানি না এই মুহূর্তে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার কোনটি। তবে প্রশ্ন হলাে, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব গ্রহণের চেয়ে দুই অংশের বিভক্তিকে মেনে নেবেন? বাঙালিরা বিচ্ছিন্নতার পথ বেছে নেয়ার পরিবর্তে কতটা রাজনৈতিক ক্ষমতা আশা করে? দুই অংশের জন্য কী বিকল্প রয়েছে? দুর্বল কেন্দ্র ও বর্ধিত স্বায়ত্তশাসন কী ফল বয়ে আনবে? পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা তার ঘাটতি পরিস্থিতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে? রাষ্ট্রদূত এই পর্যায়ে মন্তব্য করেন, একটা বিষয় আমাদের অনুকূল বলে মনে হচ্ছে। আর তা হলাে, নতুন সামরিক শাসক (ইয়াহিয়া) ব্যক্তিগতভাবে সম্ভবত তার পূর্বসূরির চেয়ে অধিকতর মার্কিনপন্থি। তবে পাকিস্তান সরকার তার পররাষ্ট্র নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র, সসাভিয়েত ও চীনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যতক্ষণ বৈরিতা থাকবে, ততক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাশিয়ার চেয়ে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতেই তার স্বাভাবিক ঝোক থাকবে। ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন জারি সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানে যে সামরিক শাসন জারি হলাে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার বজায় রাখা, পশ্চিম পাকিস্তানের বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামাে সংরক্ষণ এবং জনসংখ্যার অনুপাতে জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে স্তব্ধ করে দেয়া। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। আমরা অবশ্যই সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের অনুসৃত নীতি ও তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করব। কিন্তু দুই অংশের সম্পর্কের প্রশ্নে আমরা কোনাে পক্ষ নিতে যাব না। এক্ষেত্রে কোনাে বিকল্প বেছে নেয়া হলে, তার বিপদ হবে এই যে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ দেখবে আমরা স্পষ্টতই এবং প্রকাশ্যে ঔপনিবেশিক শক্তিকে সমর্থন দিচ্ছি। অথচ এই শক্তি পূর্ব ।
পাকিস্তানে ভবিষ্যতে কখনাে গ্রহণযােগ্যতা পাবে তার কোনাে নিশ্চয়তা নেই। ২৫ এপ্রিল, ১৯৬৯ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়েলার্ট আরেকটি বার্তায় (৪১৬৯ নং টেলিগ্রাম) উল্লেখ করেন, আমরা মনে করছি দুই অংশের বিচ্ছিন্নতার চেয়ে অখণ্ড পাকিস্তানই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য অধিকতর অনুকূল। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে সম্ভবত সেটি হবে দুর্বল, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং সরকারে থাকবে বামপন্থিরা। তখন সেই সরকারের ওপর পশ্চিমবঙ্গ ও চীন থেকে সহজেই প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হবে। এমনকি সেই অবস্থায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান হতে পারে সােভিয়েতপন্থি ও চীনাপন্থি কমিউনিস্টদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এক ব্যাটেলগ্রাউন্ড বা রণক্ষেত্র। তাই একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকার এবং অধিকতর স্বায়ত্তশাসন সংবলিত পূর্ব পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য বেশি সহায়ক হবে। মােট কথা, একেবারে দুটুকরাে হওয়ার চেয়ে আর যে কোনাে ব্যবস্থাই হওয়া। উচিত আমাদের কাম্য। রাষ্ট্রদূত একই টেলিগ্রামে উল্লেখ করেন যে, আজকে যারা সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের মধ্যে আছেন, তাদের সম্ভবত কেউ দায়িত্ব নিয়ে পূর্ব। পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে কথা বলার অবস্থানে নেই। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, তাদের বর্ধিত সম্পদ বণ্টন, প্রদেশগুলাের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার সমীকরণ, ন্যাশনাল এসেম্বলিতে প্রাদেশিক প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের মনােভাব কিন্তু স্পষ্ট নয়। তবে আমরা অনুমান করতে পারি, পাকিস্তানের বর্তমান কর্তৃপক্ষ অধিকতর মূল্য ও ঝুঁকি নিয়ে হলেও শক্তিশালী কেন্দ্র এবং অখণ্ড পাকিস্তানসহ বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামাে সংহত রাখবে। তারা পূর্ব। পাকিস্তানে রাজনৈতিক ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত হস্তান্তর প্রয়াসও প্রতিরােধ করবে।
২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের গােয়েন্দা ও গবেষণা শাখার পরিচালক একটি গােয়েন্দা। নােট দিয়েছেন। এর শিরােনাম- ধ্বংসের মুখে পাকিস্তান’। এতে বলা হয়, পাকিস্তানের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বহু স্থানে নৈরাজ্য চলছে। আইয়ুব ও বিরােধী দলের মধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত গােলটেবিল বৈঠক ভেঙে যাওয়ার পরে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অধিকতর নাজুক হয়ে পড়েছে। এটা ক্রমেই এমন এক অবস্থায়। পৌছতে চলেছে যা আর বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামাের মধ্যে সুরাহা হবে না। কথায় ও কাজে ভুট্টো, ভাসানী এবং মুজিব স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, শাসক দলের সঙ্গে আপােসের সময়সীমা পার হয়ে গেছে। আইয়ুবকে তাদের দাবির পুরােটাই মানতে হবে। এসব দাবি-দাওয়া প্রচণ্ড গতি পাচ্ছে এবং ইতােমধ্যেই এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সিস্টেম ভেঙে যাবে। সবচেয়ে কঠিন দাবির একটি হচ্ছে, মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে রেহাই দেয়া। পূর্ব পাকিস্তানিরা এই মামলায় মুজিবের বিচারকে তাদের ওপরে পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করছেন। তবে সেনাবাহিনী, যারা যে কোনাে রাজনৈতিক পরিবর্তনের অনুঘটক, তারা মুজিবকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর ওপরে রয়েছে ভুট্টোর দাবি। রাজপথ প্রকম্পিত স্লোগানে ‘আইয়ুবকে যেতেই হবে’। পরিস্থিতি বাগে আনতে হলে ন্যূনতম সমাধান হচ্ছে শেখ মুজিবের সঙ্গে সমঝােতায় পৌছা এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানানাে।
২৫ মার্চ, ১৯৬৯। হেনরি কিসিঞ্জার আইয়ুব খানের পদত্যাগ শীর্ষক এক স্মারক প্রেরণ করেন প্রেসিডেন্টের কাছে। এতে তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়াকে সামরিক আইন প্রশাসক নিয়ােগ করে আইয়ুব খান আজ পদত্যাগ করেছেন। আইয়ুব বলেছেন, আমি আমার দেশ ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করতে পারি না। এখন প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ এই সামরিক আইন ঘােষণাকে আদৌ গ্রহণ করে কি না? যদি গ্রহণ করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। নতুন সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ আইয়ুবের রেখে যাওয়া সমঝােতা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হবে। এর লক্ষ্য থাকবে দেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামাে তৈরি। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান যদি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি হবে অত্যন্ত ভয়ংকর। কারণ এই সামরিক আইনকে তারা পশ্চিম পাকিস্তানি স্টাবলিশমেন্ট কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে কার্যত এক অভ্যুত্থান হিসেবে গণ্য করতে পারে। এই পশ্চিম পাকিস্তানিরাই দীর্ঘকাল ধরে তাদের ওপরে প্রভুত্ব করেছে। সুতরাং সেক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা আগের চেয়ে আরাে ব্যাপক ও প্রকট হতে পারে। বিদেশীদের বিশেষ করে কমিউনিস্ট চীনাদের প্রভাব আরাে বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং এই মুহূর্তে পরিস্থিতি কোন দিকে মােড় নেয় তা বলা কঠিন। যাই হােক, সাম্প্রতিককালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মিলিটারি মুভমেন্টের খবর পাওয়া গেছে। আইয়ুব এবং তার সেনাবাহিনী সম্ভবত ধারণা করেছে যে, সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি মােকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন