You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972 | ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু নিক্সনের অর্থমন্ত্রীকে কী বলেছিলেন? - সংগ্রামের নোটবুক
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু নিক্সনের অর্থমন্ত্রীকে কী বলেছিলেন?
নিক্সনের অর্থমন্ত্রী জন বি, কোনালিকে শেখ মুজিবুর রহমান তথ্য দেন যে, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকাকালে একাত্তরের ডিসেম্বর ও বাহাত্তরের জানুয়ারিতে ‘সমঝােতার জন্য ভুট্টো এসেছিলেন তার কাছে। দুবারই তিনি ভুট্টোকে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি নিজেই যেখানে বন্দি, সেখানে তিনি তার জনগণের পক্ষে কথা বলার অধিকার রাখেন না। তিনি যুক্তি দেন, ভারতের ভূমিকায় তার মুক্তির পথ সুগম হয়েছে। কিন্তু বাঙালিই ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের স্বাধীনতা। এক প্রশ্নের জবাবে কোনালিকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ভারতসহ অনেকের কাছেই কৃতজ্ঞ থাকবে। কিন্তু চাইলেও কখনাে কোনাে শক্তি তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। নিক্সনের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই মার্কিন অর্থমন্ত্রী কোনালি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন। ডেমােক্র্যাট দলীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক কোনালি প্রথম মন্ত্রী হন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের। টেক্সাসের সফল গভর্নর হিসেবে খ্যাত জন কোনালি নিক্সন মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। ১৯৬৩ সালে কেনেডি হত্যার সময় তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন। টেক্সাসের গভর্নর কোনালি এ সময় মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৯৯৩ সালের ১৫ জুন তিনি মারা যান। কোনালি ঢাকায় তার সফরের বিবরণ তেহরান থেকে এক গােপন টেলিগ্রামে প্রেরণ করেছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টে। তার নিজের বয়ানে সেই আলােচনার বৃত্তান্ত এসেছে এভাবে শেখ মুজিব তার বক্তব্যের শুরু থেকেই গত ১৮ মাসে বাঙালিদের ওপর বয়ে যাওয়া ঘটনার দীর্ঘ বিবরণ দেন। আমার কাছে এ প্রসঙ্গ উপস্থাপনের জন্য তিনি অন্তত চারবার দুঃখ প্রকাশ করেন।
মুজিব বলেন, তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে দেশে ফিরে দেখেন সমস্যার পাহাড়। তিনি তার জীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, আমি জানি আমাকে বাঁচানাের জন্য আপনারা অনুযাচনা করেছেন এবং আমি সেজন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। (I know that you interceded to save me and I am very grateful.) তিনি বলেন, যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অসংখ্য মানুষ হয়েছে গৃহহীন। তাদের খাদ্য ছিল না। এমন কোনাে পরিবার নেই যারা কোনাে না কোনােভাবে নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এরপর তিনি নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন এবং বলেন, সত্যি বলতে কী বাঙালিদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম সূচনা ঘটে ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। মি. কোনালি উল্লেখ করেন, আমি তাকে এ পর্যায়ে বললাম আপনার আবেগ ও অনুভূতি আমাকেও গভীরভাবে আলােড়িত করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু সমস্যার সমাধানে তিনি এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে কোনাে যৌক্তিক আলােচনায় যেতে প্রস্তুত আছেন কি না। তিনি বললেন, তিনি রাজি আছেন বটে, তবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত ভুট্টোর সঙ্গে তিনি আলােচনায় যেতে পারেন না। আমরা মুক্ত। আমরা কোনােভাবেই আর পাকিস্তানের অংশ নই। এটাই বাস্তবতা। তাকে অবশ্যই এটা মানতে হবে। বিশ্ব এটা মেনে নিয়েছে এবং তাকে তা স্বীকার করতে হবে।’ আমি বললাম, বিরাজমান সমস্যা ও ইস্যুগুলাের মধ্যে আমরা নিজেদের জড়াতে চাই না। তবে সুনির্দিষ্টভাবে আপনি এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে কোন সমস্যার সমাধান চান। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিলেন যে, এটা একেবারে চরম গুরুত্বপূর্ণ না হলেও বর্তমানে তিনি পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফিরে আসা দেখতে আগ্রহী। তিনি বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ২০ হাজার বাঙালি সৈন্য রয়েছে।
সব মিলিয়ে তাদের দেশে পাঁচ লাখ বাঙালি রয়েছে, যাদের অনেকেই সিভিল সার্ভেন্ট ও ব্যবসায়ী। তারা এমন সব শিবিরে অবস্থান করছে যেখানে খাদ্য ও যত্নের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। অনেকে আবার নির্যাতনের শিকার। আমি বললাম, এই বাঙালিরা কি দেশে ফিরতে আগ্রহী বলে নিশ্চিত হতে পেরেছেন? তিনি জবাব দিলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নেয়া হয়েছে। জীবনধারণের কোনাে ব্যবস্থা নেই। সৈন্যরা কারাবন্দি। আমলাদের চাকরি নেই। তারা বাঙালি, ফিরে আসার সুযােগ দিলে তারা অবশ্যই ফিরে আসবে। আমি বললাম, যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে তার কী পরিকল্পনা। প্রেস রিপাের্ট অনুযায়ী তিনি বিচার চাইছেন। মুজিব বলেন, “আমরা অবশ্যই তাদের বিচার করব। তাদের অবশ্যই অপরাধের জন্য মূল্য দিতে হবে। হয়তাে পুরাে ১৫০০ জনকে নয়, সংখ্যাটি হতে পারে ৩০০, ২০০ অথবা ১০০। কিন্তু আমরা অবশ্যই কিছু বিচার দেখতে চাই। তারা যেহেতু এই মাটিতেই অপরাধ সংঘটিত করেছে, তাই তাদের বিচার অবশ্যই এই মাটিতে হতে হবে।’ আমি তাকে বললাম, তিনি প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে চান কি না। তার জবাব, কারাগারে থাকাকালে ভুট্টোর সঙ্গে তিনি দুদফা কথা বলেছেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ভুট্টোকে তার কাছে পাঠানাে হয় এবং যুদ্ধবন্দিদের মতাে উদ্ভুত কিছু সমস্যা নিয়ে ভুট্টো তার সঙ্গে আপােস রফার উদ্যোগ নেন। জবাবে মুজিব ভুট্টোকে জানিয়ে দেন, তিনি নেগােশিয়েট করতে পারবেন না। কারণ তার সেই অবস্থানগত ক্ষমতা নেই। আর তিনি নিজেই যেখানে একজন যুদ্ধবন্দি। কোনালির বর্ণনায়, ভুট্টোকে যখন মুজিবের কাছে প্রথম পাঠানাে হয় তখনও তিনি এ কথাই বলেছিলেন।
দ্বিতীয়বার যখন ভুট্টোকে তার কাছে পাঠানাে হয়, মুজিব ঠিক একই কথার পুনারবৃত্তি করেন। তিনি ভুট্টোকে বলেন, আমি আমার জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারি না। কারণ তিনি নিজেই যেখানে কারাগারে এবং একজন বন্দি। কোনালি লিখেছেন মুজিবের সাথে আমার আলােচনা ছিল খুবই খােলামেলা ও প্রাণবন্ত। তার অনুভূতিও আমি বেশ অনুভব করতে পেরেছি। আমি জানতাম তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যার সঙ্গে আমি কথা বলেছি তিনিসহ অনেকেই বিশ্বাস করতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়েছে। সম্ভবত মুজিবও এমনটাই ভেবে থাকবেন। তিনি বললেন, তিনিও তা-ই মনে করেন তবে যা হওয়ার হয়ে গেছে। অতীত অতীতই। আমি জবাবে বললাম, বিশ্বাস করুন যুক্তরাষ্ট্রে বসে আমরা কিন্তু অনুভব করতে পারিনি যে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়েছে। আমি আরও বললাম, আমি তার অনুভূতি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি আশা করব, তিনি এই সত্য গ্রহণ করবেন যে, আমরা সত্যিই ধারণা করতে পারিনি আমরা তার বিরুদ্ধাচরণ করেছি। আমরা একটি দ্রুত অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমাদের সাধ্যমতাে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করেছিলাম, আমরা যুদ্ধ এড়াতে পারব। আমরা ভেবেছিলাম যুদ্ধের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এটা অবশ্য ঠিক যে, আমরা একটা পারস্পরিক সমঝােতার চেষ্টায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলাম। পাকিস্তানিরাও কিন্তু মনে করছেন, আমরা তাদের সমর্থন দিতে সফল হয়নি। একজন মধ্যস্থতাকারীর চেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়, যুদ্ধ বাধে, তখন তার অবস্থা এমন দুর্ভাগ্যজনকই হয়।
মি. কোনালি আলােচনার এ পর্যায়ে মুজিবকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আপনার কাছে। বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছুই আশা করে না এবং আমরা আপনার মঙ্গল চাই । আমি তাকে বললাম, উপমহাদেশে তার জাতি ও অন্য কোনাে দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র কোনােভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে চায় না। আমরা আশা করি, এ ধরনের প্রভাব অন্য কোনাে। শক্তিও বিস্তার করতে চাইবে না। জবাবে তিনি বললেন, কেউ এমন কিছুর আশা। করুক বা নাই করুক তারা এতে সফল হবে না। মুজিব এ পর্যায়ে বলেন, তার নিজের মুক্তিলাভে ভারত ছিল পরিত্রাণকারী। কিন্তু বাঙালিরা তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং তারা সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে যাচ্ছে। তাদের কৃতজ্ঞতাবােধ থাকবে। কিন্তু তা নিশ্চয় তাদের ভারত কিংবা অন্য কারাে তাঁবেদারে পরিণত করবে না । আবেগাপ্লুত মুজিব বলেন, এই বাংলার বাতাস তাদের পায়ের নিচের মাটি, পরিবেষ্টিত সমুদ্র তাদেরই ছিল। এই বাতাস, মাটি এবং সমুদ্র নিয়েই হলাে বাংলাদেশ এবং তাকে রক্ষা করতে তাদের সংগ্রাম চলবে। কিন্তু তারা নিরপেক্ষ এবং নন-এলাইন্ড বা জোটনিরপেক্ষ থাকতেই বদ্ধপরিকর। তেহরান থেকে ৮ জুলাই ১৯৭২, সকাল ৭টা। ৩২ মিনিটে স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেরিত এই টেলিগ্রাম বার্তায় কোনালি লিখেছেন, এই পর্যায়ে আমি তাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, আমরা তার নিরপেক্ষ ও জোটনিরপেক্ষ থাকার এই অভিলাসকে স্বাগত জানাই। মুজিব বললেন, আমরা বাঙালিরা কোনাে মেজর পাওয়ারের কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে সম্পৃক্ত হতে চাই না। আমাদের দেশ গঠনে আমরা আমাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি কিছু করতেই প্রস্তুত। আমরা কারাে সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না।
আমরা দরিদ্র । আমরা দুর্বল। মুজিব বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যেসব কারণে সমস্যা হয়েছে তার অন্যতম কারণ হলাে পাকিস্তান তার বাজেটের ৬০ শতাংশ ব্যয় করেছে প্রতিরক্ষা খাতে। এটা এক অবিশ্বাস্য অপচয়। বাংলাদেশ ছিল এক দরিদ্র জাতি এবং নিশ্চয়ই এই বিপুল ব্যয়ভার তার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। এটা ছিল পাকিস্তানিদের ‘ক্রিমিনাল’ তৎপরতা। মানুষ যেখানে গৃহহীন, ক্ষুধার্ত সেখানে সামরিক লক্ষ্যে এই অর্থ ব্যয়ের কোনাে মানেই ছিল না। পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফিরে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অনেক লােক ছিল, যারা। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি অনুগত ছিল না, তারা চেয়েছিল বাড়িতে যেতে এবং পাকিস্তানের প্রতি যাদের আনুগত্য ছিল। তাদের চলে যেতে অনুমতি দেয়াই উচিত। আমি জানতে চাইলাম তিনি বিহারিদের কথা বলছেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক তার দেশের প্রতি অনুগত ছিল না। তিনি আশা করেন, প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তাদের ফিরিয়ে নেবেন। তারা যদি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি আনুগত্যহীনতা না দেখায় এবং তারা যদি আমাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে, তাহলে আমরা কিন্তু তাদের এখানে রেখে দিতেই সন্তুষ্ট থাকব। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদে রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস। | কোনালি মন্তব্য করেন, মুজিবের সঙ্গে আলােচনায় এটা স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে যে, তিনি তার প্রশাসনিক সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন। পাকিস্তানে আটকেপড়া বাঙালিদের প্রত্যাবর্তনে তার প্রবল আগ্রহ থেকে আমার মনে হয়েছে তিনি ২০ হাজার সৈন্যের ফিরে আসা দেখতে চান। কারণ তারাই হবে তার সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভাগের নিউক্লিয়াস। তার প্রশাসনের জন্যও চাই দক্ষ সিভিল সার্ভেন্ট। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে পেশাজীবীদের। তিনি এটা অবশ্য শক্ত ভাষায় বলেননি। তবে এর তাৎপর্য বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি।
তিনি মেধাবী ও দক্ষ লােকবল পেতে দারুণভাবেই উদগ্রীব। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পদ ও দায়-দেনা নিস্পত্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুজিব বলেন, ট্রেজারিতে ‘তাদের’ বলে যা কিছুই থাকুক কেন, তা এখন আমাদের। কারণ আমরাই সরকার নিয়ন্ত্রণ করছি। আমরা নির্বাচন করেছি এবং আমরাই তাতে জয়ী হয়েছি। আমরাই সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ন্ত্রণ করছি। তাই সরকারের সম্পদ আমাদের এবং এটা আমাদেরই থাকত, যদি সামরিক শাসন এবং নির্বাচনী ফলাফলকে শক্তি দিয়ে বানচাল না করার চেষ্টা চালানাে হতাে। মুজিব নির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে মার্কিন উদ্যোগ কামনা। করেন। আমি বললাম, আমরা অন্যান্য অনেক দেশের জন্য যেভাবে করেছি সেভাবে।
আপনাদেরও সমর্থন দিতে কোনাে বাধা দেখি না। আমার এই জবাব তাকে সন্তুষ্ট করেনি। তিনি দ্রুততার সঙ্গেই বললেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সমর্থনের চেয়েও বেশি কিছু আশা করি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন স্পন্সর করবে। তার কথায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারে। বললাম, আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না কারণ অন্য দেশ ভেটো দিতে পারে। তিনি বলেন, চীন হয়তাে ভেটো প্রয়ােগ করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি উদ্যোগ নেয় আর যদি চীন ভেটো দেয় তাহলে তিনি অন্তত এটা বুঝতে পারবেন যে, সে ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনাে দোষ নেই। যদি চীন ভেটো দেয়। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমি এই অভিযােগ তুলব যে, জাতিসংঘ থেকে চীনকে বহিষ্কার করা হােক। কোনালি সামাদ আজাদের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করেন। সামাদ তাকে বলেন, বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ, বে অব বেঙ্গলে, জাতিসংঘের সদস্য পদ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলাের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযােগিতা সে আশা করে। কোনালি সামাদের এসব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েও একটি ক্ষেত্রে বলেন যে, একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তনিপন্থি ছিল- শুধু এই ধারণাটি মেনে নিতে তিনি অপারগ।

সূত্র:  ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন