You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্ত অঞ্চলে শরণার্থী

রৌমারী ॥ ১৩ই সেপ্টেম্বর : আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধির পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলের হাজার হাজার লােক তাদের আত্মীয় স্বজন ও পরিজনসহ মুক্ত অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। রৌমারী থানা ও তদসংলগ্ন অন্যান্য বাংলার মুক্ত অঞ্চল গুলির মধ্যে প্রায় এক লক্ষ শরণার্থী আছে। কিন্তু তাদের আহার ও বাসস্থানের কোন সংস্থান নাই। বাংলার এই হতভাগ্য সন্তানদের থাকা খাওযা ও ঔষধ পত্রের ব্যবস্থা অচিরেই না হলে মৃতু তাদের সুনিশ্চিত।

অগ্রদূত ॥ ১ : ৩ ॥ ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

মুক্তাঞ্চলে হাসপাতাল

সিলেট, ১৫ই সেপ্টেম্বর। সিলেটের মুক্তাঞ্চলের কোন এক স্থানে ৪০ শয্যাবিশিষ্ট একটি দাতব্য হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এই হাসপাতালের প্রাথমিক ব্যয় ভার বহন করেছেন জনাব আব্দুল মুছাব্বির। প্রসঙ্গত: উল্লেখযােগ্য যে জনাব মুছাব্বির একজন বৃটিশ নাগরিক এবং সেখানে ব্যবসা করেন। দেশের দুর্দিনে সাহায্য দানের জন্য তিনি বাংলা দেশে আসেন। বর্তমানে তিনি দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর স্বার্থে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করছেন জনাব আব্দুস সােবহান। জনাব সােবহান লন্ডনে বসবাস করেন। নির্যাতনের নমুনা আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জুরিবাজার এলাকা থেকে ফয়েজ মিয়ার দুই মেয়ে (১৪ ও ১৮) এবং ভূপতি চৌধুরীর দুই মেয়েকে খান সেনারা জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। পরপর ৪ দিন তাদের উপর। পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে পঞ্চম দিনে উক্ত ৪টি মেয়েকে বিধ্বস্ত অবস্থায় ফেরত পাঠানাে হয়। বর্বর কাহিনী কর্তৃক বালাগঞ্জে নির্মম গণহত্যা বিয়ানী বাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব এম, এম, আজিজের প্রেরিত এক বিলম্বে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গিয়েছে যে, বেশ কিছুদিন পূর্বে বালাগঞ্জ থানার একটি গ্রামে হামলা চালিয়ে নরপিশাচ পাক সেনারা কমপক্ষে দেড় হাজার নিরীহ নাগরিককে কসাইয়ের মত হত্যা করে। পরে উক্ত এলাকার বিভিন্ন পুস্করিনীতে অসংখ্য মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য।

সিলেট জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আজ গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য। নীরব নিস্তব্ধ এই সব এলাকায় বর্তমানে এক ভয়াবহ শ্মশানের শান্তি বিরাজ করছে। রাজাকার ও পাক বাহিনীর অত্যাচারে এই সব জনবহুল গ্রামে আজ আর একটি জন-মানুষ কিংবা গৃহপালিত পশু পাখির সভা নেই। বিয়াশী বাজার এলাকার চোরাবই, বরদেল গাঁও, চুরখাই, শ্যাওলা, দুবাগ, চরিয়া, কাকরদি, শাহবাজপুর, সুখতলা এবং জুরি এলাকার চাল বন্ধ, পাইতলা, সাঙ্গা প্রভৃতি গ্রাম আজ একেবারেই জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে গেলেও হয়ত একটি মানুষের সঙ্গে দেখা হবে না।

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১: ১ ॥ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!