You dont have javascript enabled! Please enable it!

দাদার পেয়াদা দাদাকেই 

(স্টাফ রিপাের্টার) ২০শে নভেম্বর, গফরগাঁও। আজ ঈদের নামাজের পূর্বে তথাকথিত থানা শান্তি কমিটির সেক্রেটারী, পাক সরকারের কুখ্যাত দালাল আনিসুর রহমান (মুর্শিদাবাদী)-এর সাথে বাংলাদেশ থেকে লুট করা। মালামাল ও টাকার হিসাব নিয়ে পাক হানাদারদের দর-কষাকষি হয়। ফলে হানাদাররা আনিসুর ও তার সাথের দাললদেরকে কোন মাল বা টাকার ভাগ তাে দেয়নি, বরং সকলকে বেদম মারপিট করে। প্রকাশ করা যেতে পারে যে, কুখ্যাত দালাল আনিসুর বর্তমানে শয্যাশায়ী।

জাগ্রত বাংলা ॥ ১ : ৭ ॥ ২৮ নভেম্বর ১৯৭১

দালালীর উদ্দেশ্যে রাজা ত্রিদিব সিংহল গেলেন কলম্বাে, ২৬শে নভেম্বর-তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ বহির্ভূত জাতীয় পরিষদ সদস্যের একজন রাজা ত্রিবিদ রায় শ্রীমতী শ্ৰীরিমাভাে বন্দর নায়কের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে “পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা বােঝানাের জন্যে ইয়াহিয়া খার সুযােগ্য দূত হিসেবে সম্প্রতি কলম্বাে গেছেন। রাজা ত্রিদিব রায় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী বন্দর নায়ক, প্রাক্তন সংযুক্ত জাতীয় পার্টি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ডাডালি সেনানায়ক এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও সিংহলের দুটি বৌদ্ধ কেন্দ্রের মহানায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।  তিনি এখানে বিশেষ জোর দিয়ে বােঝাতে চেষ্টা করবেন যে, বাংলাদেশে ৫ লক্ষ বৌদ্ধ নিরাপদে আছেন এবং পাক শাসকচক্র তাদের সঙ্গে বড় ভাল মানুষী করছেন।  বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়, কিন্তু পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের দরুণ তা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ব্যর্থ দালালি

চট্টগ্রামের চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শাক্য বংশগৌরবের সুযােগ নিয়ে সিংহলের বৌদ্ধ অধিবাসীদের। কাছে ইয়াহিয়ার দালালী করতে গিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সিংহলের সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া দরকার। ইয়াহিয়ার এই সর্বশেষ দালালিটির প্রচেষ্টা যে কিভাবে ব্যর্থ হয়েছে তা টাইমস উইক এন্ডারের রাজনৈতিক ভাষ্যকার কয়েকটি কথায় চমৎকারভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন—একটা ত্রিদিব। রায়তাে দূরে থাক, শত শত ত্রিদিব রায়ও সিংহলবাসীদের ইয়াহিয়ার অনুকূলে নিয়ে যেতে পারবে না। ইয়াহিয়ার এই প্রয়াস অনেকটা দালাই লামাকে তিব্বতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে চৌ এন লাইর কাছে। দরবার করার মতােই হাস্যকর। বাংলাদেশে জঙ্গীশাহীর নির্মম অত্যাচার সিংহলের অধিবাসীদের তীব্র । ক্ষোভ আন্দাজ করতে পেরে সিংহল সরকার ত্রিদিব রায়কে তেমন আদর আপ্যায়ন করতে ভরসা পান। নি। সিংহল বেতার থেকে তার সফর ও মােলাকাতের সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি। এমন কি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী বন্দর নায়কের সঙ্গে ত্রিদিব রায়ের সাক্ষাতের কথাও বেতার থেকে প্রচার করা হয়নি। ত্রিদিব রায় সিংহলের বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১ : ৭ ॥ ২ ডিসেম্বর ১৯৭১।

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!