You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাজ্জাদ হােসেন খতম

(বিশেষ প্রতিনিধি) পিন্ডির সামরিক প্রভূদের পা-চাটা শিক্ষাবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলার ড: সাজ্জাদ হােসেনকে বাংলার অতন্দ্র প্রহরী মুক্তিযােদ্ধারা গত মাসে খতম করিয়াছেন। প্রকাশ, পাঞ্জাব হইতে আমদানীকত ঢাকা জেলার ডেপুটি কমিশনার এবং জেলা খাদ্য বিভাগীয় কন্ট্রোলার ও মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।  ইহারা গত মাসে নদী পথে লঞ্চযােগে কিছু রাজাকার ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ প্রহরাধীনে ঢাকা জেলার কাপাশিয়া থানা অভিমুখে যাইতেছিল। কাপাশিয়ায় এক সভায় তাহাদের বক্তৃতা দানের কথা ছিল । কিন্তু সভা পর্যন্ত গিয়া ইহারা পৌছিতে পারে নাই। মাঝপথেই বীর মুক্তিযােদ্ধারা ইহাদের উপর। প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। ফলে শীতলক্ষ্যা বক্ষেই ইহাদের মৃত্যু হয়। ঢাকা সদর উত্তর মহকুমার এস, ডি, ও এই লঞ্চে ছিল। সে মুক্তিযােদ্ধাদের গুলিতে আহত হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক অধ্যক্ষ ড: সাজ্জাদ হােসেন ডিকেড়ী দুঃশাসনের আমলে আইয়ুব এবং তাহার পদলেহী দালাল মােনম খানের পদলেহন করিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের চাকুরী পায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হইতে সে সংগ্রামী ছাত্র জনতা কর্তৃক কিল্ড আউট হওয়ার মুখে বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার হানাদার সৈন্যদের নরমেধ যজ্ঞ শুরু হয়।  তখণ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষাবিদ মহলের কলঙ্ক দালাল কুলমনি এই ড: সাজ্জাদ হােসেন জল্লাদ টিক্কাখানের পা চাটিতে শুরু করে। অত:পর টিক্কাখান ইসলামাবাদ চক্রের এই বিশ্বস্ত দাসানুদাসকে দখলীকৃত এলাকার ছাত্র ছাত্রীহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত করে। তার আগে সে একবার বিদেশে গিয়া জল্লাদী কুকীর্তির সাফাই গাহিয়া ফিরিয়া আসে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ যােগ্য যে, ইতিপূর্বে এই পথেই শীতলক্ষাবক্ষে রূপগঞ্জ থানার পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ অফিসারসহ কয়েকজন পুলিশ ও রাজাকার মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।

বাংলার বাণী # ৬ সংখ্যা ॥ ৫ অক্টোবর ১৯৭১

দালাল হালাল চলছে

দখলীকৃত বাংলাদেশের চাই দালাল পাতিদালাল এবং দালাললের সামরিক অপচ্ছায়াকেই তাদের রক্ষাকর্তা ভেবে পরম নিশ্চিন্তে দেশদ্রোহীতার মহান ব্রত পালন করে চলেছিল। কিন্তু মহাসমারােহে দালাল নিধনের কাজ চলতে দেখে তাদের চোখে মুখে এখন মৃত্যুর আতংক দেখা দিয়েছে। সামরিক জান্তার বাহু আর তাদের রক্ষা করতে পারছে না। এমনকি মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের আক্রমণ থেকে ইয়াহিয়া খানের খাস নফর ডাক্তার মালিকের তাবেদার মন্ত্রিসভার সদস্যেরও রেহাই নেই। এই আক্রমণ কখন কোন দিক থেকে আর কিভাবে আসবে বুঝতে না পেরে তাদের আতংক আরও শতগুণে বৃদ্ধি পেরেছে। পাকিস্তানের সামরিক সরকার এই তাঁবেদারদের জন্যে পাহারাদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোরতর করা সত্ত্বেও দালালরা আত্মরক্ষা করতে পারছে না।  সম্প্রতি ডাক্তার মালিকের তাবেদার মন্ত্রিসভার সদস্য জামাতপন্থী মওলানা ইসহাক এবং তার গাড়ীর ড্রাইভার বােমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছে। পাকিস্তানী বেতারের খবরে এই ঘটনাটিকে মেয়াদী বােমার বিস্ফোরণ বহুল অনুমান করা হয়েছে। শুধু ইনিই নন। চট্টগ্রামে কুখ্যাত ফ, কা, চৌধুরীর গুণধর পুত্র স্বঘােষিত ব্রিগেডিয়ার নূরুল কাদের চৌধুরী সম্প্রতি বােমার আঘাতে আহত এবং তার ড্রাইভার নিহত হয়েছে। ফ, কা, চৌধুরীর এই গুণধর নন্দনটি নির্বাচনের পর চট্টগ্রামে’ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সামরিক অভিযান শুরু হবার পর চট্টগ্রামে হাজার হাজার লােককে এই ব্যক্তি হত্যা করেছে। কিন্তু মুক্তি বাহিনীর গেরিলা তৎপরতায় পাশার দান উল্টে যাওয়ায় পুত্র স্নেহাতুর পিতা ফ, কা, চৌধুরী পুত্র নুরুল কাদেরকে ওয়াশিংটনের নিরাপদ দূরত্বে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন।  ওয়াশিংটনে নির্বাসন যাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রামের দালাল একটি সম্বর্ধনা সভার আয়ােজন করেছিল। কিন্তু কপালের ফেড় সেই সম্বর্ধনা সভা থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বােমার শিকারে পরিণত হতে হয়।

জয়বাংলা (১) ॥ ১ : ২২ ॥ ৮ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!