দালালদের দ্বৈরথ
দখলীকৃত বাংলাদেশের তাবেদার মহলে ইতিমধ্যেই বীর বিশেষের খেয়ােখেয়ী শুরু হয়ে গিয়েছে। শােনা যাচ্ছে বার কাউন্সিল মুসলিম লীগের ক’জন সদস্যকে পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভায় গ্রহন করায় কাউন্সিল লীগ যৎপরােনান্তি ক্রুদ্ধ হয়েছে। খবরটি করাচীর ডন পত্রিকার। দলের অনুমতি না নিয়ে মল্লিক ডাক্তারের অধীনে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় যােগদান করায় মাইনকারচরের আবুল কাসেম এবং নওয়াজেস আহমদকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে বলে শােনা যাচ্ছে। আহা, বেচারা শফিকুল ইসলাম ও খাজা খায়ের উদ্দিন। হাড়ীর খবরে প্রকাশ, মন্ত্রীত্বের শিকে তাদের ভাগ্যে না হেঁড়ার ফলেই বঞ্চিত দল গোসা করেছে। বেচারারা এত দুর্নাম আর প্রাণবানীর বিপদ মাথায় নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করে দেশ প্রেমিকদের নিধনকার্যে জল্লাদদের সহযােগিতা করেছিল, অথচ দুদিনের জন্যে হলেও মন্ত্রীত্বের মসনদে বসতে পারলাে না, এ কি কম আফসােসের কথা । সেই জন্যেই এখন পূর্বাহ্নে অনুমতি গ্রহণের নিয়মতান্ত্রিক প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু শফিকুল। ইসলাম ও খাজা খায়েরুদ্দিন গােষ্ঠী যখন শান্তি কমিটির নেতৃত্ব গ্রহণ করে ইয়াহিয়ার অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপের প্রতি প্রত্যক্ষভাবে সহযােগিতা দান করতে এগিয়ে এসেছিল তখন কি তারা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলের অনুমতি গ্রহণ করেছিল? ইয়াহিয়া খান ও তার বর্বর বাহিনী যখন বাংলাদেশে বিশ্বের নৃশংসতম হত্যাকান্ড শুরু করেছিল, যখন নির্বাচিত গণ প্রতিনিধিদের ওপর নির্যাতন চালানােও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আস্থাভাজন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বেআইনী ঘােষণা করা হয়েছিল তখন তাদের রাজনৈতিক নীতিবােধ ও সাংগঠনিক নিয়মতান্ত্রিকতা কোথায় ছিল সে প্রশ্ন না হয় স্থগিতই থাক।
তবে ক্ষমতা ত্যাগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই যাদের আরােহনের সােপান তারা একে অপরের কাছ থেকে ল্যাং খেলে কামড়াকামড়ি শুরু করবে এতাে জানা কথা। কিন্তু এই বহিষ্কারের শাসানীতে কাসেম নওয়াজেসের ভয় পাবার কিছু নেই। পাকিস্তানের রাজনীতির সর্বময় কতৃত্ব যে সামরিক বাহিনীর হাতে; আর কৃপা দৃষ্টি যতদিন বহাল থাকবে ততদিন আবার দালালদের ভয়ে ভীত হবার কোন কারণ নেই। প্রয়ােজন হলে কাসেম-নওয়াজেসরাই অপর পক্ষ সংহতি বিরােধী কার্যকলাপের দায়ে বহিষ্কার করতে পারবে। | তবে বহিষ্কৃত তারা অবশ্যই হবেন, এ দুনিয়ার মাটি থেকেই বহিষ্কৃত হবেন, আর সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধারা। তারা যেদিন আঘাত হানবে সেদিন তাদের কোন প্রভুই রক্ষা। করতে পারবে না।
জয়বাংলা (১) ॥ ১: ২২ ॥ ৮ অক্টোবর ১৯৭১
দালালের সাফাই
(বৈদেশিক প্রতিনিধি) জাতিসংঘ ৬ই অক্টোবর-জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের নেতা মামুদ আলি গত সােমবার-সাংবাদিকদের বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আলােচনা করতে রাজী হন নি বলেই পাকিস্তান সরকারকে সৈন্যদের হাতে শান্তি রক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রের আইন লঙ্ন করেছিলেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও তাদের কোন সদস্য জাতি সঙ্ঘের প্রতিনিধি দলে নেই কেন? তাকে একথা প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে মামুদ আলি বলে, সেই পরিষদের তাে কোন অধিবেশনই হয় নি।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১: ৩ ॥ ১০ অক্টোবর ১৯৭১
সাজ্জাদ হােসেন খতম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নিযুক্ত উপাচার্য ড: সাজ্জাদ হােসেন সম্প্রতি মুক্তিবাহিনীর হাতে খতম হইয়াছে বলিয়া মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় । সাজ্জাদ হােসেন ছিল একজন প্রথম সারির কর্তাভজা ও শাসকগােষ্ঠীর পা চাটা দালাল। গণবিরােধী ভূমিকার জন্য সে বজ্জাত হােসেন নামেই সমধিক পরিচিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ১৪ ১০ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪