You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিলেত থেকে আগত বাঙালীদের প্রত্যাগমনে দুর্ভোগের একশেষ

আব্দুস শহীদ। সিলেট, ১৩ই সেপ্টেম্বর বিলেতে বসবাসকারী যেসব বাঙালী আত্মীয় স্বজনকে দেখার জন্য বাংলাদেশে এসেছিল তারা এখন আর সহসা সেখানে ফিরে যেতে পারছেন না। অনেকে খুন হচ্ছেন। রাজাকার অথবা খান সেনাদের হাতে। অনেকে সর্বস্ব হারিয়েছেন লুটতরাজ আর অগ্নিসংযােগে। সহায় সম্পত্তির সঙ্গে অনেকের আবার পাসপাের্টটিও খােয়া গেছে। সুতরাং বিলেত থেকে আগত কয়েক হাজার সিলেটী জনসাধারণ চরম অসুবিধার মধ্যে কালাতিপাত করছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, একমাত্র সিলেট জেলারই প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ইংল্যান্ডে বসবাস করে। বর্তমানে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গােপালগঞ্জ, বিয়ানী বাজার, ধীরাই, রাজাপুর, কোয়াজপুর, বাঘ মায়না, বিশ্বনাথ, লােছরপুর, সদর গাঁও, লােহার গাঁও, রাণীগঞ্জ, ভবানীপুর, কোনার চর, ছাতক প্রতি এলাকার বিলেত থেকে আগত ভদ্রলােকদের পাসপাের্ট রাজাকার বাহিনীর বর্বররা। ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই সব পাসপাের্ট পশ্চিমাদের দালাল সিলেট শহরস্থ লতিফ ট্রাভেলস, মাসুম ট্রাভেলস ও তাহের  ট্রাভেলস-এ জমা দেওয়া হচ্ছে। পরে এইসব পাসপাের্ট মালিকদের করাচী হয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়। জঙ্গীশাহীর নির্দেশ এর পর এই সব যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালীদেরকে সেনাবাহিনীর প্রহরায় করাচী নিয়ে গিয়ে এই মর্মে শাসানাে হচ্ছে যে, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা যদি প্রত্যেকে কমপক্ষে ৭০০ পাউন্ড করে পাকিস্তানে না পাঠান, তাহলে তাদের ঘর-বাড়ী, সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হবে এবং পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে  এছাড়া পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর পক্ষে প্রচার চালানাের জন্যও তাদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

চিঠি আসিল না কেন, টাকা আসিল না কেন? কিন্তু এখানেই কাহিনীর শেষ নয়। বিলেত প্রবাসী বাঙ্গালীদের আত্মীয়-স্বজনকে রাজাকার বাহিনীর লােকেরা থানায় সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর তাদেরকে দিয়ে জোর করে লন্ডন ও অন্যান্য স্থানে এই মর্মে চিঠি লিখানাে হচ্ছে যে, পাকিস্তানে বর্তমানে পূর্ণ ‘শান্তি’ বিরাজ করছে। পশ্চিমা সৈন্যদের আচরণ বেশ ‘মিঠে মিঠে’ লাগছে। সুতরাং তারা যেন বিদেশ থেকে পাকিস্তানে নিদ্বিধায় টাকা পাঠায়। পাছে চিঠিগুলি বিদেশে না পাঠানাে হয়, এই সন্দেহে রাজাকার বাহিনীর লােকেরাই এগুলাে পােষ্ট করছে।  চিঠি পাঠানাের দু’ সপ্তাহের মধ্যে কোন জবাব কিংবা টাকা-পয়সা না এলে রাজাকাররা আবার সেই প্রবাসী ভদ্রলােকের আত্মীয় স্বজনের বাড়ী গিয়ে চড়াও হচ্ছে। হুকুম করছে—আবার চিঠি লিখ । লােপ প্রশ্ন— ‘চিঠি আসিলনা কেন, টাকা আসিলনা কেন?’

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১; ১ ॥ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!