You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে একটি গণহত্যার কাহিনী - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে একটি গণহত্যার কাহিনী

পাক সেনাবাহিনী ঢাকা সন্নিহিত কতিপয় গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এবং ৩০০ গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডােদের তৎপরতা প্রতিহত করার জন্য শহরের চারিদিকে গভীর প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করার জন্যই শহর সন্নিহিত গ্রামগুলাে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।  মৃত্যুর থাবা থেকে বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীরা সেই বীভৎস আক্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন। গত সােমবার ২৯শে নভেম্বর শহরের উত্তর দিক থেকে এসে পাক সেনারা নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর ধারাবাহিক আক্রমণ পরিচালনা করে। একতরফা সংঘর্ষে ৩০০ গ্রামবাসী নিহত হন। এ বি সি সংবাদ সংস্থার হংকংস্থ ব্যুরাে প্রধান মি: হাওয়ার্ড টুকারের মতে গত শনিবারে (২৭শে নভেম্বর) ঢাকার পাশের একটি গ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা ৭৫জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে পুরুষ ছাড়াও মহিলা ও শিশু রয়েছে। গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল সন্দেহ করেই গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।  মিঃ টুকার বিধ্বস্ত এলাকার ফটো তুলে এনেছেন। তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম সরকারী বাহিনীর যাওয়ার পর ৭৫টি মৃত দেহ পড়ে আছে। মি: টুকার বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র যা ঘটছে এটা তার। খন্ডাংশ মাত্র। এটা আমরা আগেও শুনেছি, লােকজনও তাই বলতেন, এবার আমরা নিজেদের চোখেই দেখলাম।  মিঃ টুকার বলেন যে পশ্চিমা সেনাবাহিনী যে-সব বাঙ্গালী গেরিলাদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চায়। বিধ্বস্ত গ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ-ই জানে না। ঐ গ্রামটি সত্যি সত্যি গেরিলাদের আশ্রয় দিয়েছিল কী না। কিন্তু সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই বাঙ্গালী নিশ্চিহ্ন করার কাজটি সম্পন্ন করছেন।  জনৈক এ পি (আমেরিকা)-র ফটোগ্রাফার সম্প্রতি ঢাকা থেকে ৮ মাইল দূরের একটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন প্রায় অধিকাংশ খড়ের ঘরেই আগুন লাগানাে হয়েছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামে তাকে যেতে দেয়নি। উক্ত ফটোগ্রাফার অভিযােগ করেন যে, তিনি পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলােতে যেতে চাইলে সেনাবাহিনী বাধা  দেয়। তিনি বলেন, সেই গ্রামগুলিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জয়বাংলা (১) ॥ ১: ৩৪ ॥ ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪