You dont have javascript enabled! Please enable it!

অধিকৃত এলাকায় বুদ্ধিজীবিদের উপর দমন নীতি অব্যাহত

(নিজস্ব প্রতিনিধি)। দখলীকৃত এলাকার অসামরিক গভর্ণর ডাক্তার মালেকের সরকারকে শিখণ্ডী খাড়া করিয়া বর্বর জঙ্গীশাহী। সরকার বাঙালী শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের উপর অব্যাহতভাবে দমননীতি চালাইয়া যাইতেছে।  সম্প্রতি জল্লাদী বর্বরতার শিকার হইয়াছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইসলামিক ইতিহাসের অধ্যক্ষ ড: হাবিবুল্লাহ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড: মনিরুজ্জামান ও ইমিরিটাস অধ্যাপক ড: এনামুল হক। তাহাদিগকে চাকরী হইতে বরখাস্ত করা হইয়াছে। ডঃ মনিরুজ্জামান আগামী ছয়মাস কোন সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী করিতে পারিবেন না বলিয়া হুকুমজারী হইয়াছে। ইহা ছাড়া। রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকিবার অভিযােগে প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডঃ কুদরত-ই-খুদা, ড: নীলিমা ইব্রাহিমও ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে হুঁশিয়ার করিয়া দেওয়া হইয়াছে।  ইতিপূর্বে ড: আবুল খায়ের, জনাব রফিকুল ইসলাম জনাব শহীদুল্লাহ প্রমুখ বিশিষ্ট অধ্যাপক ও কয়েকজন বুদ্ধিজীবিকে গ্রেফতার করা হইয়াছে। অন্য এক সংবাদে প্রকাশ, বেশ কিছুদিন পূর্বে জঙ্গীশাহীর বর্বর সৈন্যরা মর্ণিং নিউজের চীফ রিপাের্টার জনাব শহীদুল হক, ঢাকা বেতারের সাইফুল বারি ও এ, পি, পির জনাব মােজাম্মেল হক ও পি, পি, আই এর জনাব নাজমূল হকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে ধরিয়া লইয়া যায়। পরে তাহাদের কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই।  সামরিক সরকার বাঙালী উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বিশ্বাস করিতে না পারিয়া পশ্চিম পাকিস্তান হইতে অবাঙ্গালী চীফ সুপারিটেন্ডেন্ট অব পুলিশ ও চীফ সেক্রেটারী আমদানী করিয়াছে।

 বাংলার বাণী ॥ ১৫ সংখ্যা ॥ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

ঢাকার অদূরে জানােয়ারদের নৃশংস হামলা

কয়েকটি গ্রাম নিশ্চিহ্ন : বিদেশী পত্রিকার রিপাের্ট  মার্চ-এপ্রিলে নয়, নভেম্বরের শেষের দিকে ঢাকার অদূরে কয়েকটি গ্রামে কসাই ইয়াহিয়ার জানােয়ার বাহিনীর লােমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের দু’একটি ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।  সুইডেনের এক্সপ্রেশান’ সংবাদপত্রের দূরপ্রাচ্য সংবাদদাতা হারমান লিন্ডভিষ্ট বাংলাদেশের হাজারাে মাই লাইর মধ্যে একটির আংশিক বিবরণ দিয়েছেন।  প্রকাশিত রিপাের্টে বলা হয়েছে, “যা কিছুই পােড়ানাে যায়, তাই পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। সর্বত্রই ধ্বংসলীলার চিহ্ন। গৃহে ব্যবহার্য তৈজসপত্র পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে। বেঁচে থাকা মানুষগুলি ধ্বংস স্তুপের মধ্যে বাঁচার উপকরণ খুঁজছিলাে ।”

বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধাদের সন্ধানে দু’টি গ্রামে পাকিস্তানী দস্যু বাহিনীর হানা দেওয়ার পর সমস্ত এলাকাকে তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে অসংখ্য বাঙালীকে পৈশাচিক আনন্দে হত্যা করে। সংবাদদাতা লিখেছেন যে, এই ধ্বংসযজ্ঞে কত বাঙ্গালী প্রাণ হারিয়েছে তা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামের মধ্যে একটির নাম কালামুড়ি। এ গ্রামে জানােয়ার হানাদার বাহিনী কমপক্ষে ৭৫টি গৃহ পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে এবং ৫০ থেকে ৮০ জনের মতাে বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। সংবাদদাতা লিখেছেন যে, গ্রামবাসীরা তাকে ঘাস দ্বারা আচ্ছাদিত কয়েকটি মৃতদেহ দেখান। কিন্তু বীভৎস গন্ধ বেরুচ্ছে দেখে ঘাস উটিয়ে মৃতদেহগুলি দেখতে সাহসী হননি।

সংবাদদাতা লিখেছেন যে, বাঁশ ঝাড় এবং সাদা শাপলা ফুলে আচ্ছাদিত একটি পুকুরে খান। সেনারা তিন শতাধিক মৃতদেহ ফেলে দেয়।” সংবাদদাতা বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা কেন এই নারকীয় হত্যাকান্ড চালালাে তা কেউ বলতে পারে। কেউ বলেছেন, তারা বাঙ্গালীদের হত্যা করে আনন্দ পায় বলেই হত্যাকান্ড চালিয়েছে। অন্য আর একজন বলেছেন যে, হয়তাে ইয়াহিয়ার পশু সৈন্যরা মনে করেছে যে এ এলাকায় মুক্তি সেনানীরা থাকে। তাই এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এখানে কোন মুক্তি সেনা নেই। কোন অস্ত্র খান সেনারা পায়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরােধও ছিল না।  ধ্বংসপ্রাপ্ত দু’টি গ্রামের একটিতে জনৈক যুবকের সাথে কথাবার্তার বিবরণও সুইডেনের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। যুবকটি সংবাদদাতাকে বলেছেন, “নভেম্বরের গত সপ্তাহের বুধবারে সৈন্যরা আসে; পাঞ্জাবী সৈন্য। তারা গৃহে গৃহে তল্লাসী চালায় এবং টাকা পয়সা লুট করে। শুক্রবার তারা আবার ফিরে আসে। তারা কয়েক শত ছিল। তখন সন্ধ্যা ছ’টা। হঠাৎ তারা কারফিউ জারী করে এবং কয়েকটি ফাকা। আওয়াজ করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ। হারায়। তারপর সৈন্যরা গৃহে গৃহে তল্লাসী শুরু করে তারা হাতের কাছে যা পেয়েছে—অলঙ্কার…ধরে চলে। এ এক ভায়াবহ দৃশ্য প্রাণ ভয়ে ভীত মানুষের সে সকরুন কান্নার বিবরণ দান দুঃসাধ্য।

জয়বাংলা (১) ॥ ১: ৩১ ॥ ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!