কোণঠাসা পাকবাহিনীর ঢাকায় বর্বর নির্যাতন
গত বুধবার জঙ্গীশাহী ঢাকা শহরে কারফিউ জারী করিয়াছে। রেডিও পাকিস্তানে কারফিউ জারীর। ঘােষণা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহে দুই বার ঢাকা শহরে কারফিউ জারী করা হইল। এই কারফিউ কতদিন। বলবৎ থাকিবে রেডিও পাকিস্তানের ঘােষণায় তাহা কিছু বলা হয় নাই। ইতিপূর্বে গত ১৭ই নভেম্বর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ জারী করিয়া ইয়াহিয়ার জল্লাদরা বাড়ী বাড়ী তল্লাসী চালায় এবং জনগণের উপর বেপরােয়া হামলা ও নির্যাতন করে। কারফিউ জারী করিয়া পাক সেনারা প্রতিটি পাড়া ও মহল্লা ঘিরিয়া ফেলে। উহারা পর্যায়ক্রমে। তিনটি বেষ্টনী রচনা করে যাহাতে অবরুদ্ধ এলাকা হইতে কোন কাকপক্ষীও বাহির হইতে না পারে। তারপর প্রত্যেক বাড়ীতে ঢুকিয়া হানাদার শয়তানরা অনেক যুবককে হত্যা করে, শত শত মানুষকে। বন্দী করে, মেয়েদের উপর অত্যাচার চালায় ও তল্লাসীর নামে বাড়ী ঘর তছনছ ও লুটপাট করে। ঢাকা শহরে মুক্তি সংগ্রামী গেরিলাদের ব্যাপক তৎপরতায় কোণঠাসা ও ভীত হইয়াই পাক বাহিনী কারফিউ জারী করিয়া এইরূপ গেরিলা বিরােধী অভিযান চালাইতেছে ও শহরবাসীর উপর বেপরােয়া।
নির্যাতন ও সন্ত্রাসী আশ্রয় লইয়াছে। আটক করা ব্যক্তিদের সেনাশিবির সংলগ্ন বন্দী শিবিরে রাখিয়া পাক সেনারা নিষ্ঠুর নিপীড়ন চালাইতেছে। গেরিলাদের খুজিয়া বাহির করার জন্য শহরবাসীর উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাইতেছে। রেডিও পাকিস্তানের ভাষ্য হইতে বুঝা যায় যে গেরিলাদের টিকির নাগাল উহারা বিশেষ ধরিতে পারে নাই। রেডিও পাকিস্তানে প্রচার করা হয় যে, খানাতল্লাসী চালাইয়া সেনাবাহিনী কিছু অস্ত্র উদ্ধার করিয়াছে। পাক বাহিনীর এত অত্যাচার সত্ত্বেও ঢাকায় গেরিলাদের তৎপরতা হ্রাস পায় নাই বরং বাড়িয়া চলিয়াছে।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ২১ ॥ ২৮ নভেম্বর ১৯৭১
ভালুকায় পাকসেনাদের নৃশংস অত্যাচারের আরেক পর্যায়
[নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত] গত ১৭ই নভেম্বর ভােররাতে বর্বর পাকবাহিনী বিকনিয়া ও বাকশী গ্রামে ত্রিমুখী হানা দেয়। গ্রামের নিরস্ত্র জনগণ প্রাণ বাঁচানাের জন্যে পশ্চিমদিকে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু অত্যাচারীরা পিছন দিক থেকে জনসাধারণকে ঘিরে ফেলে এবং নৃশংসভাবে তাদের ওপর গুলি ছুঁড়তে থাকে। ফলে ৭২ জন নিরীহ। গ্রামবাসী শহীদ হন। হত্যাযজ্ঞ সমাপ্ত করে অত্যাচারীরা জনশূন্য গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযােগ করে। এবং যাবতীয় মালপত্রও লুট করে নেয়।
জাগ্রত বাংলা ॥ ১: ৭ ২৮ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪