বাংলাদেশের তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করছে ইয়াহিয়াচক্র
(চট্টগ্রাম প্রতিনিধি)। লম্পট শিরােমণি বর্বর ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্র বাংলাদেশ থেকে তরুণী পাচার সমানেই চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ৩০০ তরুণীকে অপহরণ করে কারগাে বােটে করে পশ্চিম পাকিস্তানে ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়েছে। আরাে জানা যায় যে, চাক্মা উপজাতীয় বহুসংখ্যক তরুণীকেও মধ্য প্রাচ্যের কোনাে কোনাে অজ্ঞাতস্থানে পাঠানাে হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে খানসেনারা বেশ কয়েকশত বাঙ্গালী মেয়েকে এমনি করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনাে কোনে বিশেষ দেশে রফতানী করে সেখানকার ধনী ব্যক্তিদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রী করেছিল। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মধ্যপ্রাচ্যের ইরাণ ও সৌদী আরবই নাকি দুষ্ট ইয়াহিয়ার এই সব হীন দুষ্কর্ম ও লাম্পট্য-ব্যবসার লীলা নিকেতন। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, কুখ্যাত ২০শে মার্চের পর থেকেই খানসেনারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মা-বােনদের উপর অকথ্য অত্যাচার, উৎপীড়ন, ধর্ষণ ও বলাকার চালিয়ে আসছে। এমন কি স্কুলের। বালিকারাও নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
ঢাকাস্থ রােকেয়া হলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ হােষ্টেল থেকে মেয়েদের ধরে নিয়ে বিভিন্ন সামরিক ছাউনিতে মাসের পর মাস আটক করে রাখা হয়। এই সব মেয়েদের অনেকেই সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচার থেকে মুক্তিলাভের জন্য দড়ি এবং পরিধানের বস্ত্র দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এভাবে আটক মেয়েদের মধ্যে দিন দিন আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে নরপশু ইয়াহিয়ার বর্বর সেনারা তাদের সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় ও কড়া প্রহরায় আটক রাখে। কয়েক মাস পরে খানসেনারা যখন একসঙ্গে কয়েক শত মেয়েকে মুক্তি দেয় তখন দেখা গেল যে, তারা সবাই ৪ থেকে ৫ মাসের গর্ভবতী। ভাবতে গেলে আতঙ্কে শিউরে উঠতে হয় এবং জিভ কামড়ে বলতে হয় যে, এসব হতভাগিনীর মুক্তির চেয়ে মৃত্যুই ভাল ছিল। সমগ্র বিশ্বের না হলেও অন্তত: এই উপমহাদেশের প্রতিটি সুস্থ ব্যক্তিই কল্পনা করতে ও উপলব্ধি করতে পারেন যে, সমাজে এই সব মেয়েদের স্থান কোথায়। বাংলাদেশের সামাজিক নিয়মের নির্মম সিঁড়ি বেয়ে এই সব মেয়েদের ভাগ্যে যে কেবল সীমাহীন লজ্জা, গ্লানি, ঘৃণা ও নিগ্রহ নেমে আসছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নরপশুদের পাশবিক লীলার কদর্য কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। কিছুদিন আগে কয়েকশত বাঙ্গালী তরুণীকে বন্দী করে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ যােগে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী ও লাহােরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার সামরিক শিবিরে খান সেনাদের লালসার খােরাক হিসেবে বিলিয়ে দেয়া হয়। কিছু সংখ্যক বাছাই করা সুন্দরী তরুণীকে সেখানকার ধর্নাঢ্য লম্পট নরপশুদের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রীও করা হয়। কর্মাত ইয়াহিয়া ও খান সেনাদের দুষ্ট বুদ্ধি ও দুশ্চরিত্রের আশ্ৰব্য কাহিনী শুনে বিশ্বের মানব সমাজ ঘৃণা ও লজ্জায় সত্যিই আঁৎকে উঠবেন না কি?
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১ : ৫ ১৮ নভেম্বর ১৯৭১
নৃশংস হত্যা
পাক হানাদারদের বর্বরতার কোন নজীর নেই। তাইতাে সেদিন ধর্মযাজক ফাদার ইভান্স ওদের পৈশাচিক নৃশংসতার শিকারে পরিণত হলেন। হ্যা, গত ১৩ই নভেম্বর তিনি যাচ্ছিলেন শত্রু শিবিরের পাশ দিয়ে, তখন নরখাদক পশুরা তাকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
বাংলাদেশ (৪) ১: ৪ ॥ ১৯ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪