হাতিয়া ও বনগ্রাম অঞ্চলে পাক বাহিনীর হত্যাকান্ড ও অগ্নিসংযােগ
উলিপুর ১৪ই নভেম্বর আমাদের প্রতিনিধি পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ গত ১১ ও ১২ই নভেম্বর তারিখে বর্বর পাকসেনার এক কোম্পানী উলিপুর থানার হাতিয়া ও চিলমারী থানার বগ্রাম অঞ্চল দুটীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং বেশ কিছু সংখ্যক গ্রামে অগ্নি সংযােগ করে ভষ্মিভূত করে দেয় ও নিরিহ গ্রামবাসীকে বেয়নেটের চার্জে ও গুলির আঘাতে হত্যা করে। এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডে প্রায় পাঁচশত মানুষ প্রাণ হারায়। পাক। সৈন্যদের এই আক্রমণের ফলে প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। সংবাদে আরও প্রকাশ পাক সেনারা যখন তাদের চিরাচরিত দহন ও হত্যাযজ্ঞে মত্ত তখন আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর একটি দল। মি: শওকত আলীর নেতৃত্বে এ অঞ্চলে হাজির হয় এবং পাক সেনাদের উপর এক সাফল্যজনক হামলা পরিচালনা করে। এর ফলে ২৫ থেকে ৩০ জন পাক সেনা খতম হয় এবং এর চেয়েও অধিক সংখ্যক আহত হয়। পরে পাক সেনারা সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
অগ্রদূত ॥ ১:১২ / ১৭ নভেম্বর ১৯৭১
ঢাকায় আবার গণহত্যা
গত ১৩ই নভেম্বর অধিকৃত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে পাকিস্তানের জঙ্গীচক্র পুনরায় কার্ফিউ জারী করে। মুক্তিসংগ্রামীদের আক্রমণে নাজেহাল হয়ে জঙ্গীশাহী দুটো শহরেই ২৫শে মার্চের কায়দায় জনসাধারণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কোনাে একটি দালালী সুত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে। মুক্তিসংগ্রামীদের নামে একটি তালিকা প্রস্তুত করে তারা বাড়ী বাড়ী তল্লাশী চালায়। প্রকাশ তাদের না পেয়ে পাক সৈন্যরা বহুসংখ্যক নিরীহ লােককে হত্যা করে, অনেকের উপর অকথ্য অত্যাচার চালায় এবং বেশ কিছু সংখ্যক নির্বিরােধ নাগরিক ও স্কুল কলেজের ছাত্রকেও ধরে নিয়ে যায়। ফলে কার্ফিউ। তুলে দেবার পর পরই জনসাধারণ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্য ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। এবারকার অভিযানে শত্রুসেনা প্রবল প্রতিরােধের সম্মুখীন হয়। সরাসরি সংঘর্ষে দুপক্ষেই প্রচুর হতাহত হয় বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে মুক্তিসংগ্রামীরা বহু এলাকাকেই শত্রুকবলমুক্ত করেছেন। নােয়াখালীতে একটি এফ ৮৬ পাকিস্তানী জেট প্লেনও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, জঙ্গী শাহী বিশ্বজনমতকে ধাপ্পা দেয়ার জন্যে ২৭শে ডিসেম্বর ইসলামাবাদে জাতীয় পরিষদের যে গোঁজামিল অধিবেশন বসানাের প্রচেষ্টা চালিয়েছে সেটা পুরােপুরি। বানচাল করে দিয়ে তার আগেই বাংলাদেশের সর্বত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু করার জন্যে মুক্তিবাহিনী যে দুর্বার অভিযান চালিয়েছেন ঢাকার এই সরাসরি সংঘর্ষ তারই একটি অংশ।
অভিযান ॥ ১ : ১ ॥ ১৮ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪