হানাদার দস্যুদের বর্বরতা
আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেন গত ছয়ই নভেম্বর আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে হানাদার বাহিনীর একটি দল আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে চরম মার খেয়ে নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর বেপরােয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে ফলে ১৫ জন বাংলার সরল প্রাণ মানুষ মৃত্যু বরণ করেন। আরাে জানা গেছে বর্বর বাহিনী ৯ জন মেহনতি মানুষকে ধরে এনে তাদের দ্বারা মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ করায়। পরে আগলা প্রাইমারী স্কুলের সম্মুখে লাইন করিয়ে তাদের উপর গুলি চালায়। এতে ৭ জন নিহত এবং দুজন সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। এর কয়েকদিন আগে হানাদার দসূরা নবাবগঞ্জ থানার অন্তর্গত নাউপাড়া গ্রামটি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। ফলে অসংখ্য মেহনতি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ (৪) ॥ ১: ৩ ॥ ১২ নভেম্বর ১৯৭১
বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ইয়াহিয়া চক্রের হাতে লাঞ্ছিত
দখলীকৃত বাংলাদেশের ক্রীড়নক গভর্ণর ডা: মালিকের পুতুল সরকারের আড়ালে পাকিস্তানী জঙ্গীচক্র বাঙালী শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপর নতুন করে হামলা শুরু করেছে। এখানে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বার বার হুমকী দেওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফাকা রয়েছে। হানাদারচক্র ছাত্রদের শায়েস্তা করতে না পেরে বর্তমান শিক্ষাবিদদের উপর খড়গহস্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসার ডঃ এনামূল হক ও বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ডঃ মােহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ডঃ মনিরুজ্জামানের। ওপর হুকুম জারী হয়েছে যে, আগামী ৬ মাস তিন কোন সরকারী বা বেসরকারী চাকরীই করতে পারবেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপের জন্য ডঃ কুদরত-ই-খুদা, ড: নীলিমা ইব্রাহিম ও ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ডঃ আবুল খয়ের, জনাব রফিকুল ইসলাম, জনাব সহিদুল্লাহ, জনাব শাদউদ্দীন ও জনাব। আশাবুল হকসহ বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষাবিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জাতীয় বাংলাদেশ ১:১ ১৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪