You dont have javascript enabled! Please enable it!

হানাদারদের হাতে নারী লাঞ্ছনার করুণ কাহিনী

পূর্ববঙ্গে যে দিন থেকে ইয়াহিয়া বাহিনীর গণহত্যা ও গণনির্যাতন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও যুবতীদের জীবনেও নেমে এসেছে যন্ত্রণাদীর্ণ গ্লানিময় জীবনের নির্মম অভিশাপ। বৰ্ব্বর ইয়াহিয়া সৈন্যরা সেদিন শুধু হত্যা, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞের পৈশাচিকতায় সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। পাশবিক লালসা চরিতার্থ করার জন্য নারী অপহরণ ও ধর্ষণের বব্বর উল্লাসেও তারা সেদিন মেতে উঠেছিল। গণহত্যা ও গণ-সন্ত্রাসের কথা আজ বিশ্বের অজানা নয়। কিন্তু যে হতভাগ্য যুবতীদের জীবনে। চিরদিনের মত কলঙ্কের অন্ধকার নেমে এসেছে তার খবর হয়ত বিশ্ববাসী জানেন না। কারণ এই ব্যাপারে বিশ্বের নারী সংগঠনগুলির সােচ্চার নিন্দাও শােনা যায় নি। মার্কিন সাপ্তাহিক ‘টাইমস’ পত্রিকার সংবাদদাতা মি: ডান কোগিনকে ধন্যবাদ তিনি পাক সৈন্যদের হাতে লাঞ্ছিত যুবতীদের সম্পর্কে মর্মান্তিক এক সংবাদ (টাইম, ২৫শে অক্টোবর, ১৯৭১) দিয়েছেন।  পূর্ববঙ্গে যুদ্ধের শুরু থেকে ৫৬২ জন বাঙালী যুবতীকে ঢাকার নােংরা সামরিক ছাউনিতে আটক রাখা হয়। তাদের মধ্যে ১৮ বছরের যুবতীরাও আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও লােকালয় থেকে সংগৃহীত এই যুবতীদের সামরিক পতিতালয়ের জীবন। যাপনে বাধ্য করা হয়। তারা অনেকেই তিন থেকে পাঁচ মাসের গর্ভবতী। সামরিক ছাউনিতে আটক নারীদের গর্ভপাত করানাের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষ স্ত্রী-রােগ বিশেষজ্ঞ বাঙালীদের একটি তালিকা তৈরী করেছে বলে প্রকাশ।  কিন্তু যে যুবতীরা ঢাকা সামরিক ছাউনিতে রয়েছে তাদের গর্ভপাত ঘটানাের সময় পেরিয়ে গেছে। সৈন্যরা এখন তাদের কয়েকজনকে একসঙ্গে মুক্তি দিচ্ছে। কিন্তু তাদের গর্ভে রয়েছে পাক সৈন্যদের ভােগ ও লালসার অপসৃষ্টি।

বাংলাদেশ (১) ॥ ১: ১৯ ॥ ১ নভেম্বর ১৯৭১

হানাদার ডালকুত্তাদের নৃশংস বর্বরতা অব্যাহত

এসােসিয়েটেড প্রেসের সংবাদদাতা ঢাকা হইতে লিখিয়াছেন যে, পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন যতই অস্বীকার করুক, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে ইসলামাবাদের তল্পীবাহক গভর্ণরের বাসভবনটির কাছাকাছি মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণ হইলে পাঞ্জাবী পুলিশ ও সৈন্যরা সেখানকার অসামরিক ও নিরস্ত্র জনতার উপর আক্রমণ চালাইয়া প্রতিশােধ লইতেছে। প্রামাণ্য সূত্র হইতে বলা হইয়াছে যে, বাংলাদেশ ত্যাগী লক্ষ লক্ষ শরণার্থী যাহাতে স্বগৃহে ফিরিয়া যাইতে আগ্রহী হয়, তেমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য মার্কিন সরকার পিন্ডির জঙ্গী-চক্রকে আক্রমণ বন্ধ করিতে বার বার অনুরােধ করিতেছে। উক্ত সূত্রে বলা হইয়াছে যে, আমেরিকার রিপাবলিক দলীয় সদস্য পিটার ফেলিং এই মাসের গােড়ার দিকে যখন রাওয়ালপিন্ডি সফরে যান, তখন তাহাকে নিরস্ত্র জনতার উপর আক্রমণ সম্পর্কে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কথা বলিতে বলা হইয়াছিল।

ইয়াহিয়া তখন গুলিবর্ষণের কথা অস্বীকার করে এবং এমন ঘটনা কোন অবস্থায়ই ঘটে নাই বলিয়া মন্তব্য করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য হইতেছে, এক সপ্তাহ আগে সৈন্যদল, পাঞ্জাবী পুলিশ ও রাজাকাররা দয়াগঞ্জে কয়েক ডজন বাড়ী পােড়াইয়া দিয়াছে এবং বেশ কিছু সংখ্যক লােককে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। ইহার এক ঘন্টা পর দুইজন বীর মুক্তিযােদ্ধা দিনের বেলায় প্রহরারত ছয়জন সৈন্যকে গুলিবিদ্ধ করিয়া হত্যা করে। পাঞ্জাবী পুলিশ ও সৈন্যদের হত্যাকান্ডের পর যে সকল লােক সেখানে বাঁচিয়াছিলেন তাহারা বলেন যে, কমপক্ষে ৫০ জন লােককে উহারা হত্যা করিয়াছে। সৈন্যরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া গুলি চালাইয়াছে এবং আবাসবাড়ীতে আগুন লাগাইয়া দিয়াছে। একটি পুলের উপর দাঁড়াইয়া একজন গুনিয়া দেখিয়াছেন যে অন্তত: ৬০টি বাড়ী ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। উক্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা বলেন যে, প্রায় তিন শ’ বাড়ী হইতে সমস্ত লােক পালাইয়া অন্যত্র চলিয়া গিয়াছে।

 বাংলার বাণী ॥ ১০ সংখ্যা ॥ ২ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!