ঢাকায় হানাদার জল্লাদের নতুন কৌশল
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জল্লাদ ইয়াহিয়ার হানাদার সেনাবাহিনী চরম পরাজয় ও নিশ্চিত্ত বিলুপ্তির মুখে পৌছিয়া আবার তাহাদের নারকীয় হত্যা যজ্ঞের জঘন্য খেলা শুরু করিয়াছে। জঙ্গীচক্রের দুর্ভেদ্য দুর্গ বলিয়া কথিত ঢাকা শহরে মুক্তিযােদ্ধাদের সুতীব্র গেরিয়া আক্রমণে দিশাহারা হইয়া হানাদার জল্লাদ বাহিনী সম্প্রতি ঢাকার উপকণ্ঠে কয়েকটি গ্রাম পােড়াইয়া দিয়াছে হত্যা করিয়াছে প্রায় তিনশত গ্রামবাসীকে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, গেরিলা কম্যান্ডােদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতার মােকাবেলা করার জন্যই জল্লাদরা এই সব নিরপরাধ গ্রামবাসীকে হত্যা করিয়াছে পােড়াইয়া দিয়াছে তাহাদের ঘরবাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা গিয়াছে, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষের দিকেই দখলদার জানােয়াররা, এই পৈশাচিক আক্রমণ চালায় এবং ঢাকার উত্তরে একদিনেই ৩০০ জনকে হত্যা করে। মার্কিন সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এসােসিয়েটেড প্রেসের একজন আলােকচিত্র শিল্পী ঢাকার প্রায় ৭ মাইল উত্তরে তিনটি গ্রাম পরিদর্শন করিয়া দেখিতে পান, গ্রামের অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়িই ভস্মীভূত হইয়াছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা তাহাকে অন্যান্য গ্রামগুলি পরিদর্শন করিতে দেয় নাই। কয়েকজন গ্রামবাসী এই মার্কিন আলােকচিত্রকে জানান প্রায় ৫০০ জন খানসেনা তিন বার এই গ্রামগুলির উপর আক্রমণ চালায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়িতে খানসেনারা গ্ল্যানেড নিক্ষেপ করে।
যেসব মানুষ জ্বলন্ত ঘর হইতে বাহির হইয়া পালাইয়া যাইবার চেষ্টা করে তাহাদেরকে খান-বাহিনীর পশুরা মুজিবনগরে এই ধরনের আরাে খবর আসিয়া পেীছিতেছে। বিবরণে জানা যায় খান সেনারা মুক্তিযােদ্ধাদের ক্রমাগত অগ্রগতির মুখে ঢাকা শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরাে জোরদার করার প্রস্তুতি লইতেছে। তাহারা শহরের চারিদিকে শহর হইতে ৪ মাইল দূরে প্রতিরক্ষা ব্যুহ স্থাপনের পরিকল্পনা করিতেছে। | নদী বিধৌত বাংলাদেশের নদীর উপর সেতুগুলি আজ আর অক্ষত নাই ফেরী ঘাটগুলির মুক্তিযােদ্ধারা ক্রমাগত দুর্ধর্ষ আক্রমণ চালাইয়া চলিয়াছে। অধিকৃত এলাকার যােগাযােগ ব্যবস্থা বস্তুত: সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
বাংলার বাণী ॥ ১০ সংখ্যা ! ২ নভেম্বর ১৯৭১
দূতাবাস নয়, দুবৃত্তদের আখড়া
(নিজস্ব প্রতিনিধি। বেতারযােগে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গত ২রা নভেম্বর দিল্লীস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের অবশিষ্ট ১১ জন বাঙালী কর্মচারী বাঙলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘােষণা করিয়া স্ব স্ব পরিবারের সকলকে লইয়া বাহির হইয়া আসার সময় দূতাবাসের পাকিস্তানী নিরাপত্তা বাহিনীর লােকেরা তাহাদের উপর লাঠি, লােহার রড, ছােরা ইত্যাদি লইয়া আক্রমণ করেও সকলকে গুরুতররূপে আহত করে। মহিলা শিশুরাও রেহাই পায় নাই। হােসেন আলী নামে জনৈক কর্মচারী তাহার স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ গুরুতর আহত অবস্থায় ভেতরে আটক আছেন এবং বাকি সকলে সপরিবারে বাহির হইয়া আসিতে পারিয়াছেন। বাঙলাদেশ সরকার জনাব হােসেন আলীর মুক্তির জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করিয়াছেন। বিদেশে নিযুক্ত আরও তিন জন কূটনীতিক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘােষণা করিয়াছেন। ইহারা হইলেন জাপানে পাকিস্তানী দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাচি জনাব এম এম মাসুদ, থার্ড সেক্রেটারি জনাব এম, এম, রহিম ও সুইজারল্যান্ডস্থ পাক দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি জনাব ওয়ালিউর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১ : ১৮ ॥ ৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪