সমিতির লাল নিশানটা আমার কবরে দিও
সমিতির লাল নিশানটা আমার কবরে দিও’। কথাটা প্রায়ই বলিতেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক কর্মী, ঢাকা জেলার নারায়ণপুরের আবেদ আলী। যদি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার, শ্রমিক কৃষকের রাজ কায়েম হওয়ার। আগেই তাহার মৃত্যু হয় তাহা হইলে তাহার সংগ্রামের সাথীরা যেন কবরের নরম মাটিতে লাল নিশানটা। পুঁতিয়া দিতে না ভােলেন, ইহাই ছিল সমাজতন্ত্রের অনুরাগী এই জঙ্গী বৃদ্ধ কৃষকের আন্তরিক আকাক্ষা। জীবনেও তিনি লাল নিশানকে কাছ ছাড়া করেন নাই কখনও সমিতির লাল নিশান সবসময় মজুত থাকিত। তাহার ঘরে। প্রয়ােজন পড়িলেই, সংগ্রামের ডাক আসিলেই নিশানটা হাতে বাহির হইয়া পড়িতেন। সেই বৃদ্ধ কৃষক কর্মী আবেদ আলী আজ আর আমাদের মধ্যে নাই। সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের মত।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামেও তিনি ছিলেন প্রথম সারির সৈনিক। গত ৫ই অক্টোবর ইয়াহিয়ার। দস্যু বাহিনী নারায়ণপুর আক্রমণ করে এবং গ্রাম ও বাজার পুড়াইয়া ছারখার করিয়া দেয়। আবেদ। আলী, বাদশা মিয়া (৫০) হাসর আলী (১৮) এবং কাঙ্গালিয়ার লাল মিয়া (৩৫) এই চারি জন কৃষক কর্মীসহ এগার জন গ্রামবাসী পাক দস্যুদের হাতে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন। আগুনে আবেদ আলীর ঘর এবং সমিতির নিশানটা পুড়িয়া যাওয়ায় তাহার কবরে লাল নিশান। পুঁতিয়া দেওয়া সম্ভব হয় নাই সত্য কিন্তু আবেদ আলীর স্বদেশকে উদ্ভাসিত করিয়া স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের লাল সূর্য একদিন অবশ্যই উদিত হইবে। সেদিন শহীদ আবেদ আলী ও তাহার সাথীদের দেশবাসী স্মরণ করিবেন পরম শ্রদ্ধাভরে।
মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ১৭ ॥ ৩১ অক্টোবর ১৯৭১
হানাদার দস্যুদের বর্বরতা
গত ২৬শে অক্টোবর দু’টি বড় লঞ্চ বােঝাই হানাদার দস্যুরা শেখরনগর ও তার আশেপাশের গ্রামগুলিতে নিরস্ত্র জনগণের উপর বেপরােয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে ফলে ২০ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে দু’জন মহিলা এবং একটি শিশুও রয়েছে। ঘনশ্যামপুরে দু’জন মহিলার মধ্যে একজন আট দিনের শিশু সন্তানকে রেখে বাঁচার জন্য পুকুরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু হানাদারের শ্যেনদৃষ্টি ওঁরা এড়াতে পারল না। দুটি বুলেট ওঁদের বক্ষ বিদীর্ণ করে চিরতরে ‘মা’ ডাক শােনা বন্ধ করে দিল। হানাদারদের নৃশংসতার এখানেই শেষ নয়-শেখরনগর ও তার পার্শবর্তী। গ্রামগুলিতে অসংখ্য ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে বাংলার অসংখ্য মেহনতী মানুষকে ওরা আশ্রয়হীন করে দেয় । (নিজস্ব প্রতিনিধি কর্তৃক প্রেরিত)।
বাংলাদেশ (৪) [ ১:১ ৩১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪