বাংলাদেশে বর্বরতা
জুরিষ্ট কমিটি কর্তৃক নিন্দা জ্ঞাপনের উদ্যোগ (বৈদেশিক বার্তা পরিবেশক) আন্তর্জাতিক জুরিষ্ট কমিটি বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ সজাগ রহিয়াছেন এবং বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার বর্বরতার প্রতিবাদ করিয়া তাহারা একটি নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করিবেন বলিয়া গত বৃহস্পতিবার রাত্রে কায়রােতে কমিটি সদস্য মি: জন পি. মিলস জানাইয়াছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য আটককৃত সদস্যদের সম্পর্কে তিনি। বলেন যে কমিটি ইয়াহিয়ার নিকট তাহাদের ক্ষমা প্রদর্শনের আবেদন করেন কিন্তু উহা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় কমিটি এই বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতেছেন। তিনি প্রকাশ করেন ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবরের যে বিচার প্রহসনের আয়ােজন করিতেছে তাহাতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের বা তাহার সহিত সাক্ষাতের কোন সুযােগ কমিটির সদস্যদের দেওয়া হয় নাই।
বাংলার বাণী ৫ সংখ্যা ॥ ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
অত্যাচার!
ভালুকা থানার অন্তর্গত বিরুনীয়া, রাজই, পােনাশাইল, মল্লিকবাড়ী বয়বারট্যাক, উথুরা নয়নপুর প্রভৃতি অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষে পাক দস্যুরা টিকতে না পেরে পিছনে হটে যায় এবং গ্রামবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। এই কয়েক অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়ীই তারা জ্বালিয়ে দেয়। নির্যাতন! বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় পাক দস্যুদের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। কাতলামারীতে পাশবিক অত্যাচারে এক কূলবধূর মৃত্যু ঘটে ও অন্য একজন আত্মহত্যা করে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ গত ২৫শে সেপ্টেম্বর রােজ বৃহস্পতিবার মল্লিকবাড়ী ছাওনী থেকে একদল পাক সেনা ও রাজাকার কাতলামারী গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামবাসীদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। এক কূলবধূ অত্যাচারের দুঘণ্টা পরেই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। অন্য এক বাড়ীতে ঢুকে গৃহস্বামী ইয়াকুব আলী (একু)কে ধরে তার স্ত্রীর দিকে অসৎ উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে বধুটি নিজের সম্রম বাঁচার জন্য কোলের শিশুকে ফেলে রেখে কূপে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।
লুণ্ঠন
গত ২৩শে ও ২৫শে সেপ্টেম্বর গােবুদিয়া ও কাতলামারী বাজার জমার সময় পাকদস্যুরা বাজার অবরােধ করে এবং প্রত্যেক দোকানীর মালপত্র টাকা পয়সা লুঠ করে নিয়ে যায়। কেউ এক পয়সা নিয়ে ফিরে আসতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে প্রকাশ এই দুই বাজারে প্রায় দশ হাজার টাকার সম্পদ লুট করা হয়েছে। খৃষ্টানদেরও রেহাই নেই। ভালুকা থানার অন্তর্গত সােনাখালী অঞ্চলে পাকদস্যুদের অকথ্য নির্যাতন ও লুণ্ঠনের বিরােদ্ধে [বিরুদ্ধে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মযাজক পাদ্রীর কাছে আবেদন জানান। অকথ্য নির্যাতনের সাক্ষী স্বরূপ কয়েকজন মুমূর্ষ মহিলাকে পাত্রীর সম্মুখে নিয়ে বলেন, “হয় আপনি এদের গুলি করে হত্যা করেন নচেৎ আমাদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন। পাদ্রী সকল তথ্য সংগ্রহ করে পাক দস্যুদের ছাওনীতে চলে যান এবং এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানে কোন সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার দরুন তিনি ঢাকা চলে যান।
জাগ্রত বাংলা ॥ ১: ৩ ॥ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪