You dont have javascript enabled! Please enable it! সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাক দস্যুরা নয়নপুর ও তালাবরের ১৬ জন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় -মাতৃজাতির ওপর ইয়াহিয়া বাহিনীর বর্বরতা - সংগ্রামের নোটবুক

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাক দস্যুরা নয়নপুর ও তালাবরের ১৬ জন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়

এবং তিনদিন ছাউনীতে রাখার পর চতুর্থ দিনে সারী বেঁধে দাড় করায়ে মেশিনগানের গুলিতে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সাক্ষী স্বরূপ এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে রেখে বলা হয় “তুমি গ্রামে গিয়ে প্রচার কর কিভাবে এদেরকে হত্যা করা হল।” নৃশংসতার এমন নজীর আর কোথাও দেখা যায়নি।

জাগ্রত বাংলা ॥ ১: ৩ ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

মাতৃজাতির ওপর ইয়াহিয়া বাহিনীর বর্বরতা 

পৃথিবীর ইতিহাসে এর নজির নেই। ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের মাতৃজাতির ওপর যে রকম অত্যাচার করেছে জগতের যুদ্ধের ইতিহাসে তার তুলনা নেই। সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রত্যাবৃত জনৈক দায়িত্বশীল ভদ্রলােক জানিয়েছেন যে, গত ২৫শে ও ২৬শে মার্চ রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হােষ্টেল ঘেরাও করে খান সৈন্যরা মেয়েদেরকে গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। কিছু সংখ্যক মেয়ে তখন হােষ্টেলের ব্যালকনি থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ে জীবন দিয়ে ইজ্জত রক্ষা করেন। বাকি মেয়েদেরকে গ্রেপ্তার করে খান সৈন্যরা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। এরপর ঢাকার বিভিন্ন কলেজের মেয়ে হােষ্টেল এবং বিভিন্ন বাড়ী থেকে আরাে তরুণী ছাত্রী, শিক্ষিকা, নার্স ও গৃহবধূ ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ও ঢাকার জেলখানায় রেখেছিলাে। বর্তমানে ২/৩ কিস্তিতে প্রায় সাত শতাধিক মেয়েকে ক্যান্টনমেন্ট ও জেলখানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। মেয়েদের অধিকাংশই সন্তান সম্ভবা। তাদের একজন জানিয়েছেন, ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার পরে খান বাহিনীর অফিসার গ্রুপ এসে প্রথমে নিজেদের পছন্দ মতাে একেক জনকে বেছে নেয়। তারপর পেটী অফিসার এবং সর্বশেষে সাধারণ সৈনিক। কিন্তু কিছুদিন পরে-পরেই হাত বদল। এরুপভাবে প্রতিটি মেয়েকেই অফিসারদের শয্যা সঙ্গিনী হতে হয়েছে। বর্তমানে ঐ মেয়েগণ আত্মহত্যার চিন্তা করছেন।

নিজেদের আত্মীয় পরিজনদের কোনাে খবর পাচ্ছেন না। আমাদের মুক্তিফৌজের সদস্যগণ ওদেরকে মুক্ত এলাকায় নিয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আরাে একটি খবরে প্রকাশ, কুমিল্লার ইমাম মাওলানা শাহ আবিদের অনুপস্থিতিতে একদল খান সেনা মাওলানা সাবের বাড়ীতে যেয়ে হাজির হয় এবং তার সুন্দর যুবতী মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যায়। মাওলানা সাব বাড়ী এসে উহা জানতে পারেন। তাড়াতাড়ি মিলিটারী ক্যাম্পে যান। ওদেরকে উর্দু ভাষায় বলেন যে তিনি বাঙালী নন। বাংলাদেশের সমর্থক ও নহেন তিনি কিন্তু কিছুই কাজে আসেনা। তার কাকুতি মিনতি ও চোখের অশ্রুতে পাথর হলেও হয়তাে গলে যেতাে কিন্তু খান সেনার? না, ওরা গলবেনা। মানবতা, নারীর ইজ্জত ওদের কাছে মূল্যহীন। ওরা বলে, মাওলানাজী খামখা কেও বওয়া করতে হাে? উওততা মালে গণিমত হ্যায়।’ এবং মাওলানাসাবকে লক্ষ্য করে পিস্তল উঁচিয়ে ধরে।

চোখের অশ্রু মুছে নিজের মেয়েকে দস্যুদের হাতে সঁপে দিয়েই মাওলানা সাবকে ফিরে আসতে হয় মেয়েশূন্য বাড়ীতে।  গেরিলা বাহিনী সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে অতি সম্প্রতি ঢাকা জেলার খান সেনাদের একটা ক্যাম্পে অতৃর্কিত আক্রমণ চালিয়ে অকুতােভয় গেরিলারা ২৪ জন তরুণীকে উদ্ধার করেছে। খান সেনাদের সংগে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে ১৭টা খানসেনা নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খানসেনাদের ক্যাম্পে কতাে বাঙালী তরুণী যে বন্দীদশায় উৎপীড়ন অত্যাচার এবং নরপশুদের জৈবিক ক্ষুধার শিকার বনে দিন কাটাচ্ছে তার সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারে না কেউ। বাংলাদেশ আজ এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে টিকে আছে! ওদের জৈবিক কামনায় আত্মাহুতি দিচ্ছে বাংলার অসংখ্য মেয়ে। তাদের অশ্রুজলে পূর্ণ হয়ে ওঠেছে বাংলার আকাশ-বাতাস। এবং বজ্রাঘাত হয়ে তা ফিরে এসে পড়বে খানসেনাদের শিরে।।

মুক্ত বাংলা (১) ॥ ১ : ৩ ৪ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪