You dont have javascript enabled! Please enable it!

খুব বেশি যুদ্ধের আওয়াজ তুলবেন না—পাকিস্তান সুযােগ পাবে
লােকসভায় বিরােধী নেতৃবৃন্দের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি

নয়াদিল্লী, ২৮ জুন (ইউ এন আই)-প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজ সকালে লােকসভার বিরােধী দলের নেতাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বাঙলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলােচনা করেন।
তিনি বলেন, “আপনারা যুদ্ধের কথা বেশী বলবেন না। এতে পাকিস্তানকেই সাহায্য করা হবে। এসব কথা শুনে পাকিস্তানের বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলি তাকে আরাে সাহায্য দিতে প্রলুব্ধ হতে পারে।”
আজকের বৈঠকে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি বলেন, বর্ষণ সত্ত্বেও পূর্ব বাঙলার কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলা ভারত সরকারের দখল করে নেওয়া উচিত। এর ফলে বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকবে। এর ফলে সােভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত ও অন্যান্য দেশের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হবে।
কমিউনিস্ট প্রতিনিধি আরাে বলেন, ভারত সরকারকে একথা মানতেই হবে যে, পাকিস্তান বিভাগ ঠেকাবার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে পূর্ণমাত্রায় সাহায্য দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে।
শ্ৰীমতী গান্ধী বলেন, বাঙলাদেশের যুদ্ধ মূলতঃ পূর্ব বাংলার লােককেই করতে হবে। আগেভাগে স্বাধীন বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, বাঙলাদেশের সমর্থনে ভারতের পক্ষে যতটা করা সম্ভব তা করছে এবং সরকারকে কোন হঠকারী পদক্ষেপ নিতে চাপ দেওয়া উচিত নয়।
মুক্তিফৌজ যে সফল হবেই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি সদস্যদের ধৈর্য ধরতে বলেন এবং ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতৃবৃন্দকে জানান, বৃষ্টি শুরু হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিফৌজ সক্রিয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বর্ষায় গেরিলা তৎপরতা চালানােও অসুবিধাজনক।
বহু সদস্য বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন প্রতিক্রিয়া বুঝতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীশরণ সিংয়ের ব্যর্থতার কড়া সমালােচনা করেন বলে জানা গেল। তারা অভিযােগ করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের এবং দেশের সামনে ভুল চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এ অভিযােগ মানেন নি।
শ্রীশরণ সিং জানিয়েছেন, মার্কিন মুলুকেও প্রশাসকদের বেশ কিছু অংশ বাঙলাদেশ পরিস্থিতি বেশ ভালই বুঝেছেন। তাই পরিস্থিতি সম্পর্কে অতটা হতাশ হবার কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন না। আজকের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শ্রীওয়াই বি চাবনও উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!