You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.13 | বৃটিশ লেবার পার্টি সম্মেলনে - অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা - সংগ্রামের নোটবুক

বৃটিশ লেবার পার্টি সম্মেলনে

বাংলাদেশে পাক নৃশংসতার তীব্র নিন্দা ব্রাইটন, ইংল্যান্ড, ৯ই অক্টোবর— আজ লেবার পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশে মানব ইতিহাসের যে বিরাট দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তাতে আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাতীয় এক্সিকিউটিভ কমিটির প্রস্তাবে সম্মেলনের পক্ষ থেকে সৰ্ব্বসম্মতিক্রমে পূর্ব বাংলার জনগণ ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের বিরুদ্ধে পাক সরকারের অন্যায়ভাবে সামরিক শক্তি ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করা হয়। রাজনৈতিক সমাধানে রাজী না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে জরুরী  মানবিক সাহায্য ছাড়া সমস্ত রকম সাহায্য বন্ধ করতে সকল দেশের প্রতি বিবৃতিতে আহবান জানান। হয়েছে।

বাংলাদেশ (১) ॥ ১ : ১৬ ॥ ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

অধিকৃত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থার নমুনা- শিক্ষকদের হয়রানি অব্যাহত স্কুল কলেজে ছাত্রসংখ্যা হাস্যকররূপে নগন্য।

(বিশেষ প্রতিনিধি) বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় হানাদার বাহিনীর চন্ডনীতি অব্যাহত রহিয়াছে। বাঙ্গালী জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিক্ষেপ করিয়া চিরতরে পঙ্গু করিয়া রাখার দুরভিসন্ধি হাছিলের উদ্দেশ্যে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে বর্বর নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করে, উহার বিভীষিকাময় স্মৃতি বাঙালীর মন ও মানস হইতে এখনও মুছিয়া যায় নাই। আজও ছাত্র-শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের বুলেটবিদ্ধ মৃতদেহের ময়আতংক দৃশ্য আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন আবাসিক হল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তুপ বাংলার ছাত্র-শিক্ষকদের নিরন্তর চাবুক মারিয়া বলিয়া দিতেছে হানাদার পাঞ্জাবী ডালকুত্তার দল চায় বাংলাদেশের শিক্ষা জীবনকে পঙ্গু করিয়া দিতে, ছাত্র-শিক্ষক বুদ্ধিজীবী সহ গােটা বাংগালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করিয়া দিতে চায়, বাংলাকে চিরদিন পদানত করিয়া রাখিতে। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ৭ই মার্চের ভাষণে নির্দেশ দিয়াছেন, যতদিন। বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, ততদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই আজ আর বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্র-শিক্ষকদের ভীড় নাই। শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়া ছাত্র তরুনেরা সমরাস্ত্র হাতে রণাঙ্গনের প্রান্তে প্রান্তে খুঁজিয়া বেড়াইতেছেন শত্রুবাহিনী। আর শিক্ষকরা পালন করিতেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গণে আপন আপন দায়িত্ব।

সেই কারণেই, অধিকৃত এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিয়াছে বলিয়া জঙ্গী শাহীর অবিরাম প্রচারণা সত্বেও স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখনও গড়ের মাঠ আর ইহাতে ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে জল্লাদশাহী। প্রতিহিংসা চরিতার্থতার জন্য পাকফৌজ এখন ঝাপাইয়া পড়িতেছে অধিকৃত এলাকায় এখনও যে অল্পসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষাবিদ রহিয়াছেন তাহাদের উপর। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের খবরে প্রকাশ যে, দখলদার জঙ্গীবাহিনী সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত: ১৫ জন বিশিষ্ট অধ্যাপককে গ্রেফতার করিয়াছে কিংবা সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হইবার নির্দেশ দিয়াছে। হানাদার বাহিনী যাহাদের উপর এই নির্দেশ জারী করিয়াছে তাহাদের মধ্যে রহিয়াছেন, ইংরাজী বিভাগের রীডার ড: এহসানুল হক এবং বিজ্ঞান বিভাগের ৪ জন বিশিষ্ট অধ্যাপক। এই গ্রেফতারের ব্যাপারে অবশ্য পাকিস্তান সরকার নীরব। শিক্ষাবিভাগের সহিত সংশ্লিষ্ট মহলের সংবাদে প্রকাশ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে গড়ে ৪৭/৪৮ জন ছাত্র ক্লাসে আসে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হাজারেরও অধিক ছাত্রের মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন এবং ঢাকা কলেজের প্রায় ১ হাজার ছাত্রের মধ্যে ৬০ জন ল’কলেজ ও নটর ডাম কলেজে কেহই ক্লাসে যােগদান করিতেছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির সংখ্যা মাত্র ১৬ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপস্থিতির সংখ্যাও প্রায় অনুরূপ।

বাংলার বাণী ॥ ৩ সংখ্যা ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪