You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলার নারীদের উলঙ্গ করিয়া পাকসেনার গুণ্ডামী - পাঞ্জাবী পুঁজিপতি ও সেনাবাহিনীর স্বার্থেই চালান হচ্ছে বাংলাদেশে গণ-হত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার নারীদের উলঙ্গ করিয়া পাকসেনার গুণ্ডামী

আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানাইতেছেন যে– রাজশাহীর কয়েকটি অঞ্চলে বহু যুবতী নারীকে উলঙ্গ করিয়া স্বামী-পুত্র, পিতা-মাতার সামনে বর্বরােচিত অত্যাচার চালাইতেছে। এমন কি কোন কোন স্থানে নিজের পশুক্ষুধার নিবৃত্তির পর অন্যকেও এই নির্যাতন চালাইতে বাধ্য করিতেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল ২০/২২টি মহিলাকে উলঙ্গ করিয়া মাঠে ছাড়িয়া দেওয়া হয়। পরে তাহাদিগকে ছুটাছুটি করিতে বাধ্য করা হয়। মহিলারা যখন ছুটাছুটি করিতে থাকে—পাক সেনারা পৈশাচিক আনন্দে ফাটিয়া পড়ে এবং এই অবস্থায় ছুটিয়া গিয়া তাহাদিগকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও বলাৎকার করে। এই নির্যাতনের পরও তাহাদের রেহাই ছিল না—অনেকের স্তন কাটিয়া ফেলা হয়। এই অকথ্য অত্যাচারের ফলে অনেকের ঘটনা স্থলেই মৃত্যু ঘটে। অনেকে লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যা করে।

বঙ্গ বাণী ॥ ১:১ ॥ ২৩ মে ১৯৭১

পাঞ্জাবী পুঁজিপতি ও সেনাবাহিনীর স্বার্থেই চালান হচ্ছে বাংলাদেশে গণ-হত্যা

সীমান্ত গান্ধী। খােদাই খিত্মতগার নেতা ও সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান গত বাইশে মে এক বিবৃতিতে । অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঞ্জাবী সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন। জনাব গাফফার খান বলেন, বাঙলা দেশে বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে তা আসলে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার জন্যে নয়, বরং পাঞ্জাবী স্বার্থ রক্ষার জন্যেই চালানাে হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পাঞ্জাবের জনাকয়েক সমর নায়ক ও পুঁজিপতির স্বার্থে এ যুদ্ধ চালানাে হচ্ছে। খান আবদুল গাফফার খান বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র অপরাধ তারা বিগত নির্বাচনে জয়লাভ করেছে এবং গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার দাবী করছে। তিনি বলেন, বাঙালীরা পাকিস্তান ধ্বংসের জন্যে দায়ী নয়। এ জন্যে যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকে, তারা হলেন ভুট্টো কাইয়ুম ও পাঞ্জাবী চক্র। পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনা করে খান সাহেব বলেন, ভারতের অন্য কোন প্রদেশে যখন মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা গঠিত হতে পারে নি তখন বাংলাদেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলাে মুসলীম লীগ সরকার। বাংলাদেশের মুসলমানরা সেদিন পাকিস্তানের দাবী সমর্থন না করলে, পাকিস্তানের জন্মই হতাে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ সেই বাঙালীদের বিরুদ্ধেই তােলা হয়েছে পাকিস্তান ভঙ্গের অভিযােগ। তিনি আরাে বলেন, যে বাঙালী মুসলমানরা মনেপ্রাণে মুসলমান, আজ তাদেরই বিরুদ্ধে চালানাে হচ্ছে ইসলাম ধ্বংসের অভিযােগ।

আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচী পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী বলে স্বার্থবাদী মহল যে বাজে অজুহাত খাড়া করেছে তার জওয়াবে বাদশাহ খান বলেন, ছয়দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে পূর্বাহ্নে তা নিষিদ্ধ করা হলাে না কেন? অথবা আওয়ামী লীগকে ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে দেয়া হলাে কেন? তিনি আরাে জিজ্ঞাসা করেন, ছয় দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পরিপন্থী হয়ে থাকে তাহলে ছয়দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে জয়লাভের পর শেখ সাহেবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধান মন্ত্রী হিসেবে ইয়াহিয়া অভিহিত করেছিলেন কেন? অথবা ছয়দফা যদি পাকিস্তানের স্বার্থের পরিপন্থী বা শেখ মুজিব যদি দেশদ্রোহী হয়ে থাকেন তাহলে ইয়াহিয়া খান সাহেব নির্বাচনে জয় লাভের পর শেখ মুজিব ও তাঁর দলকে অভিনন্দনই বা জানিয়েছিলেন কেন? এ প্রসঙ্গে খান আবদুল গফফার খান বলেন জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগুরু হয়েও বাংলা দেশের যদি। আজ এ অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে সিন্ধু সীমান্তের মতাে সংখ্যালঘুদের ভাগ্যে যে কি ঘটতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সীমান্ত গান্ধী জানান যে বাংলাদেশে আজ যা ঘটছে সে ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে তিনি রাজী আছেন বলে ইয়াহিয়াকে জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি। সে জন্যেই বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান যে, এখনাে তিনি তার প্রস্তাবে অটল রয়েছেন এবং পাকিস্তান সরকার সম্মত থাকলে তিনি পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি নিয়ে বাংলাদেশে যেতে রাজী আছেন। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে বলে তাঁর বিশ্বাস।  উপসংহারে সীমান্ত গান্ধী বলেন, আজ বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তা পাঞ্জাবের সেনাবাহিনী ও পুঁজিপতিদের স্বার্থে ও নির্দেশেই ঘটেছে।

জয়বাংলা (১) ১: ৪ ॥ ২ জুন ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪