You dont have javascript enabled! Please enable it!

ঢাকার মুক্তি যে কোন মুহূর্তে : যশাের ও কুমিল্লার পর খুলনা ও চাঁদপুর মুক্ত বঙ্গবন্ধুকে চাই – (জয়বাংলা প্রতিনিধি)

বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর দুর্বার অভিযানের মুখে এখন ঢাকা শহরের মুক্তি আসন্ন। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা শহর মুক্ত হতে পারে। ঢাকা থেকে ইয়াহিয়ার দস্যুবাহিনীর নায়ক লেঃ জেনারেল নিয়াজী পশ্চিম পাকিস্তানে পলায়ন করেছেন। পলায়নপর পাকিস্তানী সৈন্যরা জলপথে পলায়নের জন্য বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জে সমবেত হয়েছিল। ভারতের প্রধান সেনাপতি তাদের আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিপূর্বে কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশাের দুর্গসহ যশাের, আখাউরা, খুলনা প্রভৃতি শহর মুক্ত হয়েছে। চাঁদপুর থেকে সম্মিলিত বাহিনী এখন ঢাকার পথে।  জাতিসঙ্ঘে গৃহীত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে ফ্যাসিষ্ট জঙ্গীশাহীকে রক্ষার আরেক মার্কিণ চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। ইসলামাবাদে বসে জেনারেল ইয়াহিয়া লােলচর্মবৃদ্ধ নুরুল আমিন ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে মৃত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়ােগের কথা ঘােষণা করেছেন। ভূট্টো জাতিসঙ্ঘে ধর্ণা দেয়ার জন্য মােটরযােগে নিউইয়র্কের পথে কাবুল রওয়ানা হয়ে গেছেন। তিনি ভারতীয় বিমানের ভয়ে আকাশ পথে যেতে সাহসী হননি।

বাংলাদেশ সরকার এক বেতার ঘােষণায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ধৃত পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের সহযােগীদের হত্যা না করে মুক্তিবাহিনীর হাতে অর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রায় চার ডিভিশন সৈন্যকে বন্দী করে তাদের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু এবং পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানকারী কয়েক লাখ বাঙালীকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।  বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘােষণা করেছেন, আমরা এখন বঙ্গবন্ধুকে চাই। একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে অবৈধভাবে জেলে আটক রাখার কোন অধিকার ইয়াহিয়ার নেই। প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ অপূর্ণ চোখে বলেন, এই নবজাতকের (স্বাধীন বাংলাদেশের) প্রথম ক্রন্দন ধ্বনি যার কর্ণে প্রথম পৌছানাে উচিৎ ছিল, সেই বঙ্গবন্ধু এখন আমাদের মধ্যে নেই, এটা আমাদের জন্য পরম দুঃখের বিষয়। এই পরম আনন্দের মুহূর্তে আমাদের মধ্যে তার অনুপস্থিতি আমাদের হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। (অসমাপ্ত)

জয়বাংলা (১) | ১: ৩১ ! ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

মার্কিন সংবাদ সাপ্তাহিক ‘টাইম’ শেষ পর্যন্ত নিক্সনী কায়দায় পাকিস্তানের রাজনীতিকে পৰ্যবেক্ষণকরতে শুরু করেছে এবং জঙ্গী চক্রের নায়ক ও বাংলাদেশে গণহত্যার শ্রেষ্ঠতম রূপকার জানােয়ার। ইয়াহিয়ার ‘ইমেজ সৃষ্টি করার কাজে সুচতুরভাবে অগ্রসর হয়েছে। ২৮শে নবেম্বর নিউইয়র্কে প্রকাশিত ‘টাইম’-এর সর্বশেষ সংখ্যায় ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হয়েছে যে, বাঙ্গালীদের সাথে ইয়াহিয়া খান সমঝােতায় আসার ব্যাপারে আগ্রহী কিন্তু তার চরমপন্থী জঙ্গী। জেনারেলরা তা হতে দিচ্ছে না। এর অর্থ হচ্ছে ইয়াহিয়ার কোন দোষ নেই। সে তাে দুধের মতাে। সাদা ফেরেস্তা মানুষ। দোষ সব হচ্ছে তার জেনারেলদের।  হিংস্র নেকড়ে ইয়াহিয়ার ‘ইমেজ সৃষ্টির কারণ হচ্ছে তার সাথে যেন বাংলাদেশ সরকার। আলােচনায় বসে। টাইম’-এর মূল বক্তব্য : ইয়াহিয়ার মতাে মানুষ হয় না। সুতরাং তার সাথে। পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে বাংলাদেশ সমস্যার আলােচনায় প্রবৃত্ত হওয়া উচিত।  পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, নিক্সন নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে এমন একটি শান্তি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন যাতে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ের সাথে ইয়াহিয়ার আলােচনার কথা। ছিল। 

রিপাের্টে বলা হয়েছে, নিক্সন ভারতকে নমনীয় মনােভাব গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেছিল এবং ওয়াশিংটন বর্তমানে কারারুদ্ধ নেতা শেখ মুজিবর রহমানের সাথে আলােচনা করতে ইয়াহিয়াকে সম্মত করাতে চেষ্টা করেছিল।  ‘টাইম’ আরও বলেছে যে, শ্রীমতী গান্ধী সংযত হতে সম্মত হয়েছিলেন কিন্তু পাকিস্তানী জেনারেলরা শেখ মুজিবর রহমানের তথাকথিত ষড়যন্ত্র মামলা শেষ হবার আগেই তাকে খতম করে। দিতে চাচ্ছে। টাইম’ একজন পশ্চিমী কূটনীতিকের ভাষ্য উদ্ধৃত করে বলেছেন : “এমন হতে পারে। মুজিব হয়তাে বাংলাদেশে জীবিত ফিরে যেতে পারবে না।” জেনেভা থেকে ফরাসী সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের খবরে বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক জুরিষ্ট। কমিশন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক শেখ মুজিবর রহমানের বিচার সম্পর্কে সম্পূর্ণ গােপনীয়তা অবলম্বন। করার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সামরিক ট্রাইবুনালে শেখ সাহেবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তাকে মার্জনা করার জন্য কমিশন এক তারবার্তায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে অনুরােধ করেছেন। তারবার্তায় আরও বলা হয়েছে যে, কমিশন সুনিশ্চিত যে, শেখের প্রাণদণ্ড দেওয়া হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।

জয়বাংলা (১) [ ১: ৩১ ॥ ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩