You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.30 | বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নিকসন তৎপর হবেন- শেখ মুজিবের বাংলাদেশ ইন্দিরার ভারত একযােগে রুখিয়া দাড়াও - সংগ্রামের নোটবুক

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নিকসন তৎপর হবেন?

মুজিবনগর, ২৮শে নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং আলাপ, আলােচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসন ইয়াহিয়া খানের কাছে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন জানাবেন বলে চিন্তা করছেন। গত ২৪ শে নভেম্বর জনৈক বিশ্বাসযােগ্য সংবাদদাতার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটনের “নিউইয়র্ক টাইমস্”-এ খবর প্রকাশ করেন। তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদকে পাক ভারত সমস্যা নিয়ে আলােচনা করবার জন্যে অনুরােধ জানাবার প্রস্তাবটিও মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১ : ৭ ॥ ৩০ নভেম্বর ১৯৭১

রৌমারী ॥ ৩০শে নভেম্বর।

ভয়েস অফ আমেরিকা পরিবেশিত সংসদীয় মিশন জেনেভায় আন্তর্জাতিক আইন কমিশন ইয়াহিয়া খানের নিকট থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে এক আবেদন লিপি প্রেরণ করেছে। সংবাদে আরও প্রকাশ যে এই আইন কমিশন আরও আবেদন করেছে যে যদি শেখের বিচার শেষ হয়ে থাকে এবং তাঁর মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে তবে তাকে যেন ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়।

অগ্রদূত ॥ ১: ১৪ ১ ডিসেম্বর ১৯৭১

শেখ মুজিবের বাংলাদেশ ইন্দিরার ভারত একযােগে রুখিয়া দাড়াও ঃ দুশমনকে খতম করাে- (রাজনৈতিক ভাষ্যকার)

গান্ধী-নেহেরু-নেতাজী-ইন্দিরার মহান ভারত শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করিয়াছে। ভারত আর বাংলাদেশ আজ দুইটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র একই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ আর সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ আর ইন্দিরার ভারত আজ একই পররাজ্যলােভী জল্লাদ ইয়াহিয়ার হিংস্র আক্রমণের সম্মুখীন। এই আক্রমণ বাংলাদেশ আর ভারতের ৬২ কোটি মানুষের উপর। তাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর ইন্দিরার ভারতকে আজ একযােগে রুখিয়া দাড়াইতে হইবে। ঐক্যবদ্ধ আঘাতের নির্মম প্রচণ্ডতায় দুশমনকে চিরতরে নির্মূল করিয়া দিতে হইবে। শত্রুকে এমন শিক্ষা দিতে হইবে যেন কোনদিন আর কোন উন্মাদ জঙ্গীবাজ বাংলাদেশ বা ভারতের মাটিতে হামলা করিতে সাহস না পায়।  এতদিন যুদ্ধ চলিতেছিল বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। কিন্তু বীর প্রসবিনী বাংলার দুঃসাহসী মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পিছু হটিতে হটিতে সুনিশ্চিত পরাজয়ের আতঙ্কগ্রস্থ বেশামাল জঙ্গীশাহী বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভারতীয় আক্রমণের ধুয়া তুলিয়া ভারতের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পিণ্ডিচক্রের এই নগ্ন হামলার জবাবে প্রচণ্ড প্রত্যাঘাত হানিয়াছেন।

বাংলাদেশেও মুক্তিযােদ্ধাদের সমর্থনে ভারতীয় সেনাবাহিনী দুর্বার গতিতে শত্রুর উপর ঝাপাইয়া পড়িয়াছেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে বাংলাদেশের শত্রু অধিকৃত অঞ্চলের শত্রুর বিমান বহর বিধ্বস্ত হইয়া গিয়াছে। মুক্তিযােদ্ধারা মিত্র সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া ঝড়ের মত অগ্রসর হইয়া চলিয়াছেন। পিণ্ডির জঙ্গীচক্রের যুদ্ধের খায়েস ইতিমধ্যেই চরিতার্থ হইয়াছে কিনা জানা যায় নাই, কিন্তু দীর্ঘ। আট মাস পূর্বে নিহত পাকিস্তানের লাশ বুকে জড়াইয়া জঙ্গীচক্র এখন সাম্রাজ্যবাদী দেশ সমূহের দ্বারে দ্বারে পদলেহী কুকুরের মত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। বিশ্বের হীনতম সাম্রাজ্যবাদ, মানবতার ঘৃণ শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এইবার তাহার মুখােশ খুলিয়া ধরিয়া আপন মূর্তিতে নামিয়াছে । নিপীড়িত নির্যাতিত মানবতার তথাকথিত বন্ধু গণচীনও সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের এই সাপ নাচানাে বাঁশীর সুরে মােহিনী সাপিনীর মত নাচিতেছে। জাতিসঙ্ঘে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীন একযােগে ভারত উপমহাদেশের যুদ্ধবিরতি ঘােষণার জন্য প্রস্তাব আনিয়াছিল। সােভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠীর এই চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দিয়াছে। অপর দুই স্থায়ী সদস্য বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়া নিরপেক্ষতা অবলম্বন করিয়াছে। এই দুইটি দেশ অর্থাৎ ফ্রান্স ও বৃটেন বর্তমান মুহূর্তে সম্ভবতঃ অত্যন্ত সাবধানতার সহিত পরিস্থিতি পর্যালােচনা করিয়া চলিয়াছে।

আমরা জানি, বিশ্বের সরকার সমূহ যতই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন না কেন, সমগ্র বিশ্বের শান্তি। প্রিয় ও গণতন্ত্রকামী জনগণ বাংলাদেশের জনগণের এই ন্যায় সংগ্রামকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানাইয়াছেন।  এই সমর্থন লাভ করিবার অধিকার বাংলার জনগণ অর্জন করিয়াছেন। বাংলাদেশের মরণজয়ী মানুষেরা চরম আত্মত্যাগ ও রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমেই এই সমর্থন লাভ করিয়াছেন। বিশ্বের স্বীকৃতিও বাংলার জনগণ এই উপায়ে অর্জন করিবেন। আর সেই দিনটি খুব বেশী দূরেও নয়। কিন্তু আজ এই শুভদিনেও যে কোন বাঙ্গালীর চিত্ত বেদনায় বিপন্ন। বাংলার প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজও শক্রর কারাগারে। তার কারামুক্তি আর শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলার জয়জয়ন্তী ত্বরান্বিত করার জন্যই আজ প্রজন্ম শক্তিকে দুশমনের উপর ঝাপাইয়া পড়িতে হইবে— রুদ্ধ করিয়া দিতে হইবে শক্রর পলায়নের সকল পথ।

বাংলার বাণী ॥ ১৫ সংখ্যা ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩