You dont have javascript enabled! Please enable it!

খােদ পাঞ্জাবে শেখ মুজিবের মুক্তি দাবী

সাম্প্রতিক কালের উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি; লেনিন শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এয়ার মার্শাল আসগর খান সহ মােট ৪২ জন বুদ্ধিজীবি এবং রাজনীতিবিদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবী করেছেন।  ‘জনগণ চাহিলে মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেয়া হবে’—খুনী ইয়াহিয়ার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এ দাবী করেছেন। জনগণ’ বলতে ইয়াহিয়া পাঞ্জাবের কায়েমী স্বার্থের ধারকদের বােঝেন কিনা তা স্পষ্ট করে না বললেও এঁদের দাবী যে তার কুমতলবকে আরও একটু নগ্ন করা ছাড়া অন্য কোন সাফল্য আনবে না তা সকলেই জানে।  তবুও পাঞ্জাবী বুদ্ধিজীবিদের শুভ বুদ্ধির দ্রুত উন্নয়ন হলে অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষা না হলেও অন্তত পক্ষে পাঞ্জাব রক্ষা হতে পারে।

উত্তাল পল্লী ॥ ১:১

২৪ নভেম্বর ১৯৭১

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বিফল যেতে পারে না —ওবায়দুর রহমান

বঙ্গবন্ধু কারাগারের অন্তরাল হতে আমাদের এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—তার রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত নির্দেশাবলি অনুসারে আপনারা কর্তব্য করছেন, করতে থাকুন, আমি আপনাদের সামনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে যাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বিফল হতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলের এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব কে, এম, ওবায়দুর রহমান তার উদ্দেশ্যে এ বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগ নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘােষণা করেন। যে, বাংলার মানুষ এবার স্বাধীনতা আদায় করবেই। তিনি ইতিহাসের উপমা টেনে বলেন, মহাপরাক্রমশালী মুঘলেরা বাংগালী জাতিকে পদানত করে রাখতে পারেনি, আর তুমি ইয়াহিয়া খা। তাদের পরবর্তী বংশধরদের কলােনীর কীট বানিয়ে রাখতে পারবে না।

তিনি বাংগালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশদ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের স্বাধীনতার দাবী কোন ভূইফেঁড়সদৃশ দাবী নয়—শ্বাশত অধিকার। সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক তথা প্রত্যেক দৃষ্টিকোণ হতে আমরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, রাষ্ট্রও স্বতন্ত্র হওয়া উচিত। ইতিপূর্বে তিনি সাতক্ষীরা সহ কতিপয় জনসভায় ভাষণ দেন। বিশেষ উল্লেখ্য যে, সাতক্ষীরা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি সম্প্রতি মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। উক্ত সভাগুলিতে তিনি জনতাকে সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি ও সত্বর সাফল্যের আশ্বাস দেন। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় জনতার স্বতঃস্ফূর্ত কর্মচাঞ্চল্যের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।  জনাব রহমান কতিপয় যুব ট্রেনিং শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি মুক্তি বাহিনীর যােয়ানদের এক সমাবেশে বলেন, “আপনারাই জাতির ভবিষ্যত, আপনাদের ত্যাগে জাতির বুকে নতুন ইতিহাস রচিত হােক—যে ইতিহাস পড়ে আমাদের পরবর্তী বংশধরদের বুক যেন আনন্দে দোলা দিয়ে ওঠে। শহীদদের অমর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনান্তে বলেন, “যদি বাংগালী আত্মবিস্মৃত না হয়, আজকের এ শহীদদের ভুলতে পারবে না।”

তাকে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলতে শােনা যায়, বাংলার রক্তাক্ত মানচিত্রের মাঝেই তােমরা বেঁচে আছে, থাকবে।” “আজ আমরা এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছি—যেখান হতে বাংলার বস্তি তে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষেরও বাচার নিশ্চয়তা থাকবে। বঙ্গবন্ধু জাতিকে ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির আশ্বাস দিয়েছিলেন আমরা তা বাস্তবে রূপ দেবাে; এদিকে রাঘব বােয়ালদের সম্পদের ছড়াছড়ি, অপর দিকে ডাষ্টবিনের উচ্ছিষ্ঠ নিয়ে কাড়াকাড়ি—এ মানবিক অপরাধকে বাংলার বুকে প্রশ্রয় দেয়া হবে।  তিনি আরাে বলেন, “ন্যায় শান্তি প্রগতির জন্যেই আপনারা রক্ত দিচ্ছেন, জয় হবেই। কেননা, খােদা আমাদের সহায় আছেন। বিশেষ উল্লেখযােগ্য যে জনাব কে, এম ওবায়দুর রহমান সাহেব এখন উত্তর বাংলার মুক্তাঞ্চল সফরে রয়েছেন।

উত্তাল পন্না ! ১:১৪ ২৪ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!