You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.14 | অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই জননী বাংলার পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপােষ নাই - পাক প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করুন মুজিবের সঙ্গে সমঝােতায় আসতে- নিউ ইয়রক টাইমস - সংগ্রামের নোটবুক

অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই জননী বাংলার পূর্ণ স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপােষ নাই বাংলাদেশ কনসালটেটিভ কমিটির সুস্পষ্ট অভিমত -রাজনৈতিক সংবাদদাতা 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে সময়ে সময়ে আলােচনা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের লইয়া গঠিত কনসালটেটিভ কমিটির দ্বিতীয় সভায় ন্যায় নীতির প্রতি নতি স্বীকার করিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দানের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান হয়। সভায় ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহী কর্তৃক সভ্যতার মাথায় পদাঘাত তথা সকল ন্যায় নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করিয়া এখনও বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখার তীব্র নিন্দা করা হয়।  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে গত শনিবার মুজিবনগরে অনুষ্টিত কনসালটেটিভ কমিটির এই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদ, অর্থমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান, আওয়ামী লীগের শ্রী ফনিভূষণ মজুমদার ও জনাব আবদুস সামাদ, ন্যাপের অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির শ্রী মনােরঞ্জন ধর এবং বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির শ্রী মনি সিংহ উপস্থিত ছিলেন। ন্যাপের মওলানা ভাসানী অসুস্থ তার দরুণ সভায় উপস্থিত থাকিতে পারেন নাই।

সভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অটুট সংকল্পের কথা পুনরায় ঘােষণা করা হয় এবং স্বাধীনতা বিহীন অন্য যে কোন প্রকার। আপােষ ফর্মুলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।  সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর সমর প্রস্তুতি এবং ভারতের উপর নগ্ন হামলা চালাইবার সংকল্পের নিন্দা করিয়া বলা হয় যে বাংলাদেশ সমস্যা হইতে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরাইয়া নেওয়ার জন্যই ভঙ্গীশাহী পাক ভারত বিরােধের ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করিতেছে। প্রস্তাবে আরাে বলা হয় যে, বাংলাদেশে মুক্তিযােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণ এবং সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতেই জঙ্গীশাহী এই পন্থা অবলম্বন করিতেছে। সভায় জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের বিশেষ করিয়া সকল স্তরের মুক্তিযােদ্ধাদের প্রতি জঙ্গীশাহীর এই দুর্বলতার সুযােগ গ্রহণ করিয়া এবং ঐক্যবদ্ধভাবে হানাদারদের উপর চূড়ান্ত আঘাত হানিয়া এই জঘন্য চক্রান্ত প্রতিহত করার আহ্বান জানান হয়। সভায়। গৃহীত অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, ইয়াহিয়া খান তথাকথিত বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের নামে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করার প্রয়াস পাইতেছে। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাইয়া সভায় আরাে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশের ব্যাপারে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযােগিতা করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বের যে সকল রাষ্ট্র বাংলাদেশে গণহতার ব্যাপারে ইয়াহিয়া খানকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়া সাহায্য করিতেছে, সেইসব দেশের জনগণকে তাহাদের সরকারকে বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হইতে নিবৃত্ত করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের জন্য অনুরােধ জানান হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে যাহারা জীবন উৎসর্গ করিয়া চলিয়াছেন তাহাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন। করিয়া গৃহীত এক প্রস্তাবে বীর মুক্তিযােদ্ধাদের এই চরম আত্মাৎসর্গের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার। দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করা হয়। আলােচনা কমিটির সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে দিল্লীর পাকিস্তান হাইকমিশিন অফিসে জনাৰ । হােসেন আলী তাঁহার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে বলপূর্বক আটক করিয়া রাখাকে জঙ্গীশাহীর বর্বরতার আরও একটি নিদর্শন বলিয়া অভিহিত করিয়া অবিলম্বে তাহাদিগকে মুক্তিদানের দাবী জানান হয়।

বাংলার বাণী # ১২ সংখ্যা । ১৪ নভেম্বর ১৯৭১।

পাক প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করুন মুজিবের সঙ্গে সমঝােতায় আসতে- নিউ ইয়রক টাইমস

নিউ ইয়রক, ১৫ নভেম্বর : আজ নিউ ইয়রক টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে একটা সমঝােতায় আসার জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের অনুরােধ জানানাে হয়েছে মারকিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত থাকার জন্য ওয়াশিংটন যে অনুরােধ জানিয়েছিল, কার্যত দুটি দেশ থেকেই তাতে তেমন উল্লেখযােগ্য সাড়া পাওয়া যায় নি। কারণ, মারকিন প্রশাসনের আচরণ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে সাহায্য করেছে।  পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য না করার মারকিন সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে মার্কিন সাহায্যপুষ্ট ইয়াহিয়ার সরকার পূর্ববঙ্গে যে ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার অস্ত্র না দেওয়ার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি একটি সামান্য পদক্ষেপ মাত্র। পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য করে এবং সেই অস্ত্রের সাহায্যে বাঙালীদের উপর অত্যাচার চালানাের জন্য মারকিন যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী হতে হবে।

বাংলাদেশ (১) ১: ২১ x ১৫ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩