You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.09 | পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুতেই বাঙ্গালীরা রাজী হইবে না - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুতেই বাঙ্গালীরা রাজী হইবে না

অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিদান এবং বাংলাদেশ হইতে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহার করিতে হইবে মহান ভারতের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর দ্ব্যর্থহীন ঘােষণা – বিশেষ প্রতিনিধি

ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক শর্ত। হিসাবে অবিলম্বে বাংলাদেশ হইতে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য অপসারণের জন্য দাবী জানাইয়াছেন। গত ৩০শে নভেম্বর ভারতীয় রাজ্যসভায় শ্রীমতি গান্ধীর সম্প্রতি বিদেশ সফর সম্পর্কিত তিনঘণ্টাব্যাপী বিতর্কের জবাব দানকালে তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানী সৈন্যের উপস্থিতি ভারতের। নিরাপত্তার পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের প্রসঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন যে বাংলাদেশ সমস্যা। সমাধানের ব্যাপারে কোন কথাবার্তা চালাইতে হইলে তাহা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই তাহা চালাইবেন। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহাদের অবিসংবাদী নেতা এবং তাহাকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হইবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কি ঘটিয়াছে তাহা শেখ মুজিবকে জানিতে দিতে হইবে। শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কি চাহেন, তাহা বলার অধিকার কেবলমাত্র তাঁহাদেরই আছে। তাহাদের (বাংলাদেশের জনগণের) হইয়া কিছু বলার অধিকার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নাই বলিয়া শ্ৰীমতী গান্ধী মন্তব্য করেন। তবে তাঁহার ধারণা স্বাধীনতার কমে কোন কিছুতেই বাংলাদেশের জনগণ রাজী হইবে না।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করিয়া বলেন, আমাদের প্রতিবেশীদের আমরা নিশ্চিহ্ন হইতে দিতে পারি না। বাংলাদেশের নিজস্ব জনগণকে ধ্বংস করা হইবে তাহা আমাদেরও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং সেই রকম একটি কিছু ঘটিলে আমাদের নিরাপত্তা আরও পারিবেন তাহাতে তাহার কোন সন্দেহ নাই।  বাংলাদেশে যাহারা সাহসের সহিত লড়াই করিতেছেন সেই মুক্তিযােদ্ধাদের ভূয়সী প্রশংসা করিয়া শ্ৰীমতী গান্ধী বলেন তাহাদের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা এবং সমর্থনও রহিয়াছে তিনি আরও বলেন। ভবিষ্যতে কি হইবে তাহা কেই বলিতে পারে না। তবে এখনই পরিস্থিতি সহজ হইতেছে না। কারণ ইহার কোন অলৌকিক সমাধান নাই।  বাংলাদেশ প্রশ্নটিকে আন্তর্জাতিক রূপ দিয়া উহাকে পাক-ভারত সমস্যায় পরিণত করার অন্য পাকিস্তানের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসের উল্লেখ করিয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রসঙ্গটি নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের প্রচেষ্টা ও বাস্তব ঘটনাকে ঘােলাটে করার অভিসন্ধিরই অঙ্গ এবং এই ব্যাপারে যাহারা। তদারকি করিতেছেন ভারতের জন সাধারণ স্বভাবতই তাহাদিগকে সন্দেহের চোখে দেখিবেন।

ভারতে অগণিত শরণার্থী সমাগমকে একটি নূতন আক্রমণ বলিয়া উল্লেখ করিয়া শ্ৰীমতী গান্ধী বলেন ইহা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের প্রতি হুমকী স্বরূপ ভারতের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়া তিনি বলেন, আমি অবশ্যই সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই তবে তাহা বাংলাদেশ হইতে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যগণ তাহাদের ঘরবাড়ী ছাড়িয়া বহু দূরদেশে পড়িয়া রহিয়াছে। তাহারা কার্যও পাইতেছে প্রচুর। তিনি বলেন আমার মনে হয় তাহাদের ফিরাইয়া নেওয়া উচিত। পশ্চিম পাকিস্তানে তাহাদের পরিবার পরিজনের সহিত তাঁহারা আবার মিলিত হউক।  শ্রীমতী গান্ধী বাংলাদেশের গণহত্যাকে অপ্রয়ােজনীয় ট্রাজেডী বলিয়া অভিহিত করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি এবং লক্ষলক্ষ মানুষের বাস্তচ্যুতি ছাড়াও সমস্ত দেশটাকে একটি উদ্বাত্ত্ব শিবিরের মত দেখাইতেছে। বিপুল সংখ্যক লােক গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। তিনি বলেন ভীতি প্রদর্শন এবং প্ররােচনার মাধ্যমে জঙ্গীশাহী বিশেষ ভাবে লাভবান হইয়াছে বলিয়া তিনি মনে করেন না। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অশালীন আর অবিচার করা হইয়াছে … বলিয়াই আমরা ক্রুদ্ধ হই নাই ক্ষুব্ধ হইয়াছি বাংলাদেশে যাহা ঘটিয়াছে, তাহার জন্য। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে গৃহহারা হইতে হইয়াছে। পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা হয়রান হইয়া তাহারা গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন ভারত পূর্ব রণাঙ্গনে কোন রকমে কোন পাল্টা হুমকী দেয় নাই। পশ্চিম রণাঙ্গণে কোন ব্যবস্থা নেয় নাই । শ্রীমতি গান্ধী দৃঢ়তার সহিত বলেন, আমাদের সীমান্তে কোন স্থানে আমাদের স্বাধীনতা নিরাপত্তার পক্ষে বিপদ দেখা দিলে আমরা উহার মােকাবিলা করিবই । তিনি আরও বলেই অন্যান্য রাজ্যের মত ভারতেই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কাশ্মীর বা অন্য কোথাও আক্রমণ করা হইলে সম শক্তি দিয়া তাহার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হইবে।

বাংলার বাণী ১১ সংখ্যা ৮

৯ নভেম্বর, ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩