You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ ঘটনার নেপথ্য শেখ মুজিব ভূট্টোকে প্রধানমন্ত্রী 

 মুজিবনগর, ১লা নভেম্বর : সাংবাদিক মিঃ এ্যান্টনি মাসকারেনহাসের সম্প্রতি প্রকাশিত বই “দি রেপ অব বাংলাদেশ’-এ পাকিস্তানের বর্তমান ইতিহাসের বহু নেপথ্য ও সত্য কাহিনী উদঘাটিত হয়েছে। এমনি একটি কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, পাক জাতীয় সভায় ৩১৩টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন অধিকার করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর শেখ মুজিবর রহমান আন্তরিকভাবেই মিঃ জুলফিকার আলি ভূট্টোকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। এই মহানুভবতার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সৈন্যবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। মুজিবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গৌরবময় পদ থেকে স্বেচ্ছায় নিজেকে বঞ্চিত করে মিঃ ভূট্টোর কাছে তার এই প্রস্তাব পাঠান একজন দূতের মাধ্যমে। এর দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে একটা বিরােধ জিইয়ে রেখে সামরিক একনায়কত্বকে চিরস্থায়ী করার যে চাল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দিয়েছিলেন, তা কার্যতঃ ব্যর্থ হােতাে। কিন্তু ইতিহাস অন্য পথ নিল। মিঃ মাসকারেনহাসের জন্ম ভারতে। সাংবাদিকতা করছিলেন পাকিস্তানে। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক কর্তৃপক্ষের নৃশংসতম নরহত্যার অভিযান দেখে তিনি পালিয়ে যান। তিনি তার এই বইতে বলেছেন, অবশেষে মিঃ ভূট্টো দ্বিতীয়বার জনসাধারণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। ইয়াহিয়া তাঁকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

নাটকীয় অধ্যায়

মুজিবর তার প্রস্তাব পাঠালেন লণ্ডন থেকে আগত একজন বাঙ্গালী ছাত্রনেতার মাধ্যমে। উক্ত  ছাত্রনেতা মুজিব এবং ভুট্টো উভয়েরই বন্ধু । তিনি কিছু দিনের জন্য ঢাকা এসেছিলেন। সময়টা তখন নির্বাচন হয়ে যাওয়ার সপ্তাহ তিনেক পরে। তিনি বলেছিলেন, মিঃ ভুট্টোর সঙ্গেও দেখা করবেন এই কথা শুনে মুজিব বললেন, মিঃ ভুট্টোকে জানাবেন, যদি তিনি আমাদের দু’দফা কাৰ্যসূচী মেনে নেন। তবে তার জন্য একটা বড় পদ আমি ছেড়ে দেব।  সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ব্যাপারে তিনি (মিঃ ভুট্টো) যেন আমার  সংগী হন। ছাত্রনেতা চললেন ভুট্টোর কাছে। মিঃ ভুট্টো তখন সবেমাত্র লারকানা থেকে ফিরেছেন। তাঁর। রাজকীয় বাসভবনে তখন সভাসদদের ভীড়। তাদের মধ্যে জাতীয় সভার নবনির্বাচিত কিছু কিছু সদস্যও আছেন।  মিঃ ভুট্টো ছাত্রনেতাকে নিয়ে গােপন কক্ষে চললেন। যথারীতি হুইস্কি এলাে। তারপর মুজিবের । প্রস্তাব শুনেই তিনি স্তম্ভিত! কিছু সময়ের জন্য আনন্দে, উত্তেজনায় স্তব্ধ হয়ে রইলেন। চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলেন—“সত্যি বলছেন? দূত বললেন—’সত্যি বলছি’ মিঃ ভুট্টোর তর সইছিল না। সহকারীকে ডেকে বললেন, “জলদি আরজেন্ট ট্রাঙ্ককল বুক কর। আমি মুজিবরের সংগে এক্ষুণি বাতচিত করবাে।’ কিন্তু দুর্ভাগ্য। কিন্তু মুজিবকে কোথাও পাওয়া গেল না, না বাড়ীতে না পার্টি অফিসে! তখন ঐ দূতকেই মিঃ ভুট্টো বললেন, আপনি মুজিবকে বলবেন, কয়েকটা উপনির্বাচন নিয়ে খুব । ব্যস্ত আছি। তাই ওর সঙ্গে দেখা করতে পারছিনা। আমি মুস্তাফা খেরকে ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য। পাঠাবাে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর দু’দফা কার্যসূচী বিরােধী নই। তবে আমার পার্টিকে এ ব্যাপারে। মত করাতে হবে।’

বাংলাদেশ (১) [ ১: ১৯ ১ নভেম্বর ১৯৭১।

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!