You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.15 | শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন দ্বারা জঙ্গীচক্র - মুজিবের প্রাণদণ্ডাদেশ? - সংগ্রামের নোটবুক

শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন দ্বারা জঙ্গীচক্র। নিজেদের অপরাধ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে– প্রাভদা

সােভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির পত্র প্রাভদা’ পত্রিকার সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় ভােলাখুলিভাবে। বিস্তারিতভাবে পাকিস্তানের ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ করা হয়। ঐ পত্রিকায় পাকিস্তানী সামরিক পক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযােগ করে বলা হয়, সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে পাকিস্তান সরকার তাদের অসৎ উদ্দেশ্যগুলির সমর্থন করবার চেষ্টা করেছেন। প্রাভদা বলেন, “পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ববঙ্গে যে ব্যাপক নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের দ্বারা তারা নিজেদের ঘৃণ্য অপরাধ ঢাকা দিতে চাচ্ছে। প্রাভদা বলেন, ন্যায় বিচার লঙ্ঘিত হওয়ায় সােভিয়েট জনসাধারণ অত্যন্ত ক্রুদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করছে এবং তারা অবিলম্বে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি এবং পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান। দাবী করছে। তারা উদ্বাস্তুদের নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তনও দাবী করে।  প্রাভদা পাকিস্তানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলেন, ১৯৪৭ সনে পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর থেকে একচেটিয়া পুঁজিবাদীরা, সামন্তগণ এবং উচ্চ শ্রেণীর সরকারী আমলারা মিলে এক প্রতিক্রিয়াশীল শাসকচক্র গঠন করেছে।

এই শাসকচক্র শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থই দেখেছে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান গণতান্ত্রিক শক্তিকে দমন করতে চেষ্টা করেছে। এর ফলে উপেক্ষিত পূর্ববঙ্গে দারুণ অসন্তে ষের সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকার উক্ত পর্যালােচনায় পাকিস্তানের একচেটিয়া ব্যবসায়ের শ্রীবৃদ্ধি এবং দেশের দুই অংশের মধ্যে একান্ত বৈষম্যের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রাভদা শেখ মুজিবর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচী নিয়েও আলােচনা করেন এবং তাঁর দল যে ১৯৭০ সনের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতায় জয়লাভ করেছে সে কথা উল্লেখ করেন। পাকিস্তানে এই ধরনের নির্বাচন এই প্রথম বলে প্রাভদা মন্তব্য করেন। প্রাভদা বলেন, পাকিস্তানী প্রশাসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃবৃন্দ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হতে দেন নি। পূর্ববঙ্গে এর জন্য প্রতিবাদ জানানাে হয়। তারপর পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষের আদেশে পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ সব বিষয় প্রাভদায় এর আগেও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কূটনীতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন এর পূর্বে এমন সরাসরি ভাবে পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এসব কথা প্রাভদায় বলা হয়নি।

জয়বাংলা (১) ॥ ১: ২৩ ১৫ অক্টোবর ১৯৭১

মুজিবের প্রাণদণ্ডাদেশ? | [নিজস্ব প্রতিনিধি]

ইয়াহিয়া চক্রের সামরিক আদালত প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবর রহমানের প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়াছে বলিয়া বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়। ইতিপূর্বে শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবল দাবির মুখে পাক শাসকগােষ্ঠীর জনৈক মুখপাত্র ঘােষণা করিয়াছিল যে, শেখ সাহেবের ‘বিচার’ চলিতেছে এবং যথাসময়ে উহার রায় প্রকাশ করা হইবে।  শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ ও উহার ‘বিচার’- গােটা বিষয়টাই একটা লােক দেখানাে ব্যাপার ছাড়া কিছু নয়। মামলা শুরু হওয়ার অনেক আগেই ইয়াহিয়া খান নিজেই শেখ মুজিবরকে ‘দেশদ্রোহী’ বলিয়া আখ্যায়িত করে এবং তাঁহাকে বিনা শাস্তিতে রেহাই দেওয়া হইবে না বলিয়া ঘােষণা করে। এদিকে জাতিসংঘে পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকচক্রের প্রতিনিধি শেখ মুজিবর রহমানের প্রাণদণ্ডাদেশের খবর অস্বীকার করিয়াছে।

মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ১৫ # ১৭ অক্টোবর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩