বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য ইয়াহিয়ার উপর রাশিয়ার চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা
নয়াদিল্লী হইতে ইউ, এন, আই, জানাইয়াছেন সােভিয়েত সরকার শীঘ্রই পাকিস্তানের সামরিক জান্তার নিকট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তির প্রস্তাব উত্থাপন করিবে। মস্কোয় ভারতীয় প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির তিনদিন ব্যাপী সফরের সময় ভারত সরকারের কর্মচারীরা সােভিয়েতের এই সিদ্ধান্তের আভাস পাইয়াছেন বলিয়া জানাইয়াছেন। গত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে শেখ মুজিবের সহিত বাংলাদেশ প্রশ্নে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আলােচনা করিতে সােভিয়েত সরকার পাকিস্তানকে অনুরােধ করিবে বলিয়া আশ করা যাইতেছে। সােভিয়েত রাশিয়ার এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হইবেই, ভারত সরকার এমন আশা যদিও করেন না তথাপিও শেখ মুজিবের অবিলম্বে মুক্তিবিধান এবং আলাপ আলােচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানে যে কোন দেশের শুভ প্রচেষ্টা কে ভারত সরকার অভিনন্দন জানাইবে বলিয়া জানা গিয়াছে।
বাংলার বাণী ॥ ৬ সংখ্যা ॥ ৫ অক্টোবর ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর মুক্তিদানই জঙ্গীশাহীর পাপ মােচনের একমাত্র উপায় ডগলাস হটন। (কলিকাতা প্রতিনিধি)
বৃটিশ পার্লামেন্টের শ্রমিক দলের চেয়ারম্যান মিঃ ডগলাস হটন গত সােমবার কলিকাতায় এক সাক্ষাঙ্কারে বলেন যে শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা অতি প্রয়ােজনীয়। তিনি বলেন যতদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ‘অপরাধী’ বলিয়া জঙ্গীশাহী আটক রাখিবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের আশা সুদূর পরাহত। তাহার মতে ইসলামাবাদের শাসকদের বিগত দিনের পাপগুলি মােচন করিবার সর্বপ্রথম উপায় হইল শেখ | মুজিবর রহমানকে মুক্তি দান করা। মিঃ হটন বলেন বৃটেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য এবং শরণার্থীদের দেশে ফিরাইবার ব্যবস্থা করিবার জন্য নিজের প্রভাব বিস্তার করা উচিৎ।
মিঃ হটন জানান যে বৃটেন একটি নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করিয়া ভারত বা পাকিস্তান কাহারও বিরূপভাজন না হইবার চেষ্টা করিতেছে কিন্তু সমস্যাটি যাহাতে গুরুতর পর্যায়ে না যায় তজ্জন্য চেষ্টা করিতে বৃটিশ সরকারকে চাপ দিবে। এই ব্যাপারে বৃটেনেরই উচিত সমস্যাটি জাতিপুঞ্জে উত্থাপন করা এবং সেখানে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সহিত ও ভারতের বৈদেশিক বিষয়ক মন্ত্রী মিঃ শরণ সিংএর সহিত আলাপ করেন। পরে তিনি কলিকাতার লবণহদ ও কল্যাণীর শরণার্থী শিবিরসমূহ পরিদর্শন করিয়া বলেন যে ইহা মানবেতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তুহারা সমস্যাটিও ইহার তুলনায় সামান্যতম একটি অংশ মাত্র। তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন বিশ্ববাসী ব্যাপারটির গুরুত্ব এখনও অনুধাবন করিতে পারে নাই। এবং ভারত এই জন্য বিশ্বের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করিতে পারে তাহারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য কি করিয়াছে? তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আগামী ১৮ই অক্টোবর বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিতর্ক উত্থাপনের জন্য সরকারী ভাবে প্রস্তাব আনয়ন করিবে। ভারত যে ভাবে এই সমস্যাটির মােকাবিলা করিতেছে মিঃ হটন তাহার প্রশংসা করেন।
বাংলার বাণী ৬ সংখ্যা ॥ ৫ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩