You dont have javascript enabled! Please enable it!
তাঁকে হত্যা করে বাঙ্গালী জাতিকে স্তব্ধ করা যাবে না
মুজিব আজ আর কোন ব্যক্তি নয় সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর নাম শেখ মুজিব (জয়বাংলা প্রতিনিধি)
মানব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকারী ইয়াহিয়া লাখাে লাখাে নিরপরাধ বাঙ্গালীর শােণিতে দেহ। রঞ্জিত করেও তার রক্ত পিপাসা নিবৃত্ত করতে পারেনি। ঘেঁকি কুত্তা খিপ্ত হয়ে উঠলে যেমন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে যা তা কিছু করে বসে তেমনি মদ্যপ দুশ্চরিত্র ইয়াহিয়াও ঝকালাে ডিম্পল হুইস্কির। নেশায় গােলাৰী হয়ে গিয়ে তার মনিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচারের প্রহসন চালাবার জন্য উদ্ধত ঔদ্ধত্বে খেউ খেউ রব ছাড়তে শুরু করেছে।  মানব সভ্যতা ও মানবিক মূল্যবােধের প্রতি হুমকি স্বরূপ এই ঘৃণ্য নরপশুকে তার বিপজ্জনক কাজ। থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বিশ্বের মানবতাবাদী বিবেক তাঁদের কণ্ঠস্বরকে উচ্চগ্রাসে তুলেছেন। কিন্তু। তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। উন্মত্ত খেকি কুত্তাকে যেমন মুগুরের আঘাতে মাথার মগজ বের করে দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনার পথকে কণ্টকহীন করতে হয় ইয়াহিয়া এবং তার । ইতিহাসের শিখা বিস্মৃত জান্তাকেও তেমনি প্রচণ্ডতার সাথে আঘাত করতে না পারলে আগুন নিয়ে। খেলা করা থেকে নিবৃত্ত করা যাবে না। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ের গালিজ-পঁচা চরিত্র হিটলার, আইখম্যান, মুসােলিনীদেরও মিষ্টি কথায় নিবৃত্ত করা যায় নি। যেমন কুকুর তার জন্য তেমন মুগুরের প্রয়ােজন। আমাদের মুক্তি বাহিনী স্বয়ংক্রিয় মুগুর হাতে সে কাজ সমাধা করার জন্য আজ বিদ্যুতের গতিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তারা পথের কোন বাধা মানবে না, বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের জীবন রক্ষার জন্য কোন ত্যাগকেই বড় করে দেখবে না। মুজিব ভাই না বাঁচলে। তাদের আলাে-বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকারও কোন আগ্রহ নেই। প্রতিটি অস্ত্রাঘাতে জল্লাদদের বাচার ক্ষীন সম্ভাবনাকেও তরুণ মুক্তি সেনারা অসম্ভব করে তুলবে।
ইয়াহিয়া ঘােষণা করেছে, সে ৭৫ মিলিয়ন বাঙ্গালীর আশা-আকাঙ্ক ও আবেগ-অনুভূতির প্রতীক শেখ মুজিবের বিচার করবেই বিচারের কয়েক মাস আগেই সে ২৬শে মার্চের বেতার ভাষণে রায়ও। দিয়ে ফেলেছে। মদ্যপ ইয়াহিয়ার মাতাল কণ্ঠ থেকে সেদিন ঝরে পড়েছিল : শেখ মুজিবকে রেহাই দেওয়া হবে না। পরবর্তী কালে একই কষ্ঠ ঘােষণা করেছে, বিচারে শেখ মুজিবের প্রাণদণ্ড হতে পারে। তার পাঞ্জাবী সেনাদের বুটের আঘাতে প্রকম্পিত বেতার থেকে প্রতিদিন শেখ সাহেবকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খেকি কুকুরের দুগ্ধময় নখ চাটা বাঙ্গালী কণ্ঠ তাকে ‘মীরজাফর’ বলার ঔদ্ধত্য। দেখাচ্ছে।  এই পরিবেশে স্থানের নামহীন, বিচারকের নামহীন খাকী ইউনিফর্মধারীদের গ্যাস চেম্বারে বাংলার নয়ন মনি শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়েছে বলে ঘােষণা করা হয়েছে। আরও একটি চমকপ্রদ ঘােষণাও একই সাথে করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সিন্ধুর আল্লাবক্স খােদাবক্স ব্রোহী শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে স্বীকৃত হয়েছেন। এবং তাকে শেখ সাহেবের পক্ষ অবলম্বনের জন্য অনেক চেষ্টা তদ্বির করতে হয়েছে। চেষ্টা করেছেন স্বয়ং ঘাতকবিচারক ইয়াহিয়া। অনেক চেষ্টা তদ্বিরের পর জনাব ব্রোহী মামলা পরিচালনায় স্বীকৃত হয়েছেন। আহাঃ কি নাটক! কি উপাদেয় নাটক! শেখ মুজিব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেছিলেন, আমার বিচার করার কোন এখতিয়ার ইয়াহিয়ার নেই। কিসের অভিযােগ আমার বিরুদ্ধে? আমার বিরুদ্ধে অভিযােগ করার কি অধিকার ইয়াহিয়ার আছে? তাকে এ অধিকার কে দিয়েছে? এর পরও জনাব এ, কে, ব্রোহীকে নাকি শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিযুক্ত করা ।
হয়েছে এবং তিনি তার মক্কেলের সাথে আলােচনার জন্য এক অঘােষিত স্থানে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সে স্থানের নাম তিনি প্রকাশ করবেন না কারণ তিনি গােপনতার শপথ পাঠ করেছেন ইয়াহিয়ার কাছে। ঘাতক যে শেখ সাহেবকে অপরাধী বলে পূর্বেই রায় দিয়ে ফেলেছে, যার প্রচারযন্ত্র অহরহ শেখ বিরােধী বিষ ছড়িয়ে-ঝরিয়ে যাচ্ছে সেই আইনের আর ইতিহাসের জ্ঞান বর্জিত ইয়াহিয়া আবার অনেক চেষ্টার পর’ বিবাদী পক্ষের আইনজীবীও ঠিক করে দিয়েছেন। ইয়াহিয়া তােমাদের হাজারা গ্রামের গুহায় এ জাতীয় বিচারের প্রহসন হতে পারে কিন্তু সভ্যতার আলাে-বাতাসে উদ্ভাষিত আজকের বিশ্বে এ জাতীয় মধ্যযুগীয় বিচারের প্রহসন অকেজো। ইয়াহিয়া তােমাকে খেয়াল রাখতে হবে পরকীয়া প্রেম করে তােমার সাদ্দাদী বেহেস্ত প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রত্যাবর্তনের পর তােমার স্ত্রীকে চোখ রাঙ্গিয়ে ঠাণ্ডা। করার ক্ষমতা তােমার আছে কিন্তু দুর্জয় শপথের দীপ্তিতে মাথা উঁচু বাঙ্গালীরা তােমার হুমকির কাছে যে মাথা নােয়াবার শিক্ষা পায়নি তা তুমি এবং তােমার জেনারেলরা ইতিমধ্যেই নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছ। মিঃ ব্রোই মামলায় কার পথ অবলম্বন করবেন? শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে কি অভিযােগের জবাব । তিনি দেবেন এবং কার কোটে? বিশ্ব জনমতের আদালতে শেখ মুজিব একটি মাত্র অপরাধ করেছেন। এবং তা’ হলাে জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুভূতির সাথে তিনি বিশ্বাস ঘাতকতা করেন নি ছয় দফার সাথে বেঈমানী করে প্রধান মন্ত্রীর পদকে বড় করে দেখেন নি। জনতার নদী নদী রক্ত আর ।
অশ্রু গঙ্গার সাথে নিজেকে একাত্ম করে নিতে সূক্ষ্মতর বিলম্ব করেন নি। এই অপরাধে যদি শেখ সাহেবের বিচার হয় তা হলে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকেও বিচারের কাঠ গড়ায় উঠাতে হবে। কারণ। শেখ মুজিব আজ ব্যক্তি নয়, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর নাম শেখ মুজিব মুজিব মানে সাড়ে সাত । কোটি বাঙ্গালী কণ্ঠ, বাঙ্গালী প্রাণ, বাঙ্গালী আবেগ। ইয়াহিয়া তােমার ক্ষমতাদর্পী সেনারা একটি জাতিকে কি নিশ্চিহ্ন করতে পারবে? পারবে না। হিটলার পারেনি। আইখম্যানদের গ্যাস চেম্বারও একদিন টায়ার্ড হয়ে পড়েছিল।
জয়বাংলা (১) [১: ১৬ ২৭ আগস্ট ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে হবে
গণ প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাঙালীর নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার প্রহসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কণ্ঠ আরও সােচ্চার হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রাণ রক্ষার জন্য বৃটেন, কানাডা, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি অক্সফাম-এর মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। | আবেদনকারীর মধ্যে আছেন ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন কেনেৰ্থ গলব্ৰেথ, রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কানাডার ডঃ হিউ কীনলে কাইড, ভারতের প্রাক্তন সৈন্যাধ্যক্ষ জেঃ জয়ন্তনাথ চৌধুরী প্রভৃতি। | তারা আরও বলেছেন, বৃহৎ শক্তিগুলাের হস্তক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে যে কোন মুহূর্তে বড় রকমের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশের অবস্থা আয়ত্তে আনার জন্য তাঁরা সকল রাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানকে সাময়িকভাবে সব রকম অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য বন্ধের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। পঃ জার্মানীর মন্ত্রীর উদ্বেগ পশ্চিম জার্মানীর দূতাবাসের মন্ত্রী মিঃ ডবলিউ বেরেস গত ২২শে আগষ্ট কলকাতায় বলেন যে; শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করা হলে পাকিস্তানের ইয়াহিয়া ভীষণ ‘রাজনৈতিক ভুল করবেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিবরের ব্যাপার নিয়ে পশ্চিম জার্মানী সরকার শীগগীর পাকিস্তানের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। অষ্ট্রেলিয়ান সরকারের উদ্বেগ পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রিয় নয়নমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে বিচার চালাচ্ছে তাতে অষ্ট্রেলিয়া সরকার তার উদ্বেগের কথা পাকিস্তানকে জানিয়েছেন বলে অষ্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ নিগেল বােয়েন গত ১৮ই আগষ্ট পার্লামেন্টে বলেছেন। প্রধান মন্ত্রী মিঃ উইলিয়াম ম্যাকমােহন ইয়াহিয়াকে প্রেরিত এক ব্যক্তিগত বার্তায় অষ্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
জয়বাংলা (১) # ১ : ১৬ # ২৭ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!