You dont have javascript enabled! Please enable it!

৪-৫ নভেম্বরঃ বিলোনিয়ার ২য় যুদ্ধ

কে ফোর্সের অধীনে নব গঠিত ১০ ইবি ছিল বিলোনিয়ার উত্তর পশ্চিমে রাজনগরে। এর কম্যান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম। এর ৪ কোম্পানির মধ্যে আলফা কোম্পানীর কম্যান্ডার ছিলেন ইমামুজ্জামান, ব্রাভো কোম্পানির কম্যান্ডার ছিলেন, সেঃ লেঃ মিজান, চার্লি কোম্পানির কম্যান্ডার ছিলেন সেঃ লেঃ দিদার, ডেলটা কোম্পানির কম্যান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন মোখলেস। এস ফোর্সের এর ২ বেঙ্গল থেকে ধার করে আনা হয় ক্যাপ্টেন হেলাল মোরশেদের কোম্পানী। ১ নং সেক্তরের — – সাব সেক্টরের ক্যাপ্টেন মাহফুজ পূর্ব দিক থেকে পজিশন নেন। সকল গ্রুপ মিলে হয় বিলোনিয়া টাস্ক ফোর্স। এই টাস্ক ফোর্সের এর কম্যান্ডার হন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম। ফেনীতে পাকিস্তান আর্মির ছিল ১৫ বালুচ। ১৫ বালুচের ৩টি কোম্পানী বিভিন্ন যায়গায় মোতায়েন করা হয়। এপকাফ ও রাজাকার দিয়ে ৩টি কোম্পানী সৃষ্টি করে বিভিন্ন যায়গায় মোতায়েন করা হয়। বিলোনিয়ায় ১৫ বালুচ কোম্পানী, বিলোনিয়ার পশ্চিমে রাজনগরের দিকে এপকাফ, পরশুরামে ১৫ বালুচ কোম্পানী, ঘুতুমাতে এপকাফ, নয়াপুর জামুরায় এপকাফ, আমজাদ হাটে ১৫ বালুচ কোম্পানী। সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় রাজপুত ও ডগরা বাহিনীর কমান্ডাররাও। স্যান্ড মডেলের ওপর পরিকল্পনা বুঝে নেওয়া হয়। আর তা হচ্ছে, শত্রু অবস্থানের মাঝ বরাবর অতর্কিতে ঢুকে পড়ে তাদের অপ্রস্তুত ও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। যুদ্ধের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। অনিয়মিত বাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর একটি নির্দেশনা ছিল। তারা যেন ফায়ার অন না করেন।

পাকিস্তানি বাহিনী ১০০ মিটারের কাছে চলে এলেই যেন ফায়ার ওপেন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ বেঙ্গল সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মিজানের বি কোম্পানী পূর্ব দিকে গুথুমা পর্যন্ত অগ্রসর হবে এবং ১ নং সেক্টর বাহিনি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে সমগ্র বিলোনিয়া বালজ কে দ্বিখণ্ডিত করবে এবং উত্তরের বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করাবে। ৫ তারিখে ভোর হওয়ার আগেই চিথলিয়া থেকে পরশুরামের মাঝখানে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বাংকার খুঁড়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। বিলোনিয়া থেকে ফেনী পর্যন্ত রেললাইনের সঙ্গে সমান্তরাল কাঁচা রাস্তায়ও মুক্তিবাহিনী অপেক্ষা করছিল বাংকারে। এসময় একটি ট্রলিতে পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসছিল চিথলিয়ার দিক থেকে। আগের রাতে নীরবে যে মুক্তিযোদ্ধারা এতো কাছে চলে এসেছে তা ঘুনাক্ষরেও জানতো না হানাদারেরা।

ট্রলিটি তখন মাত্র কয়েক গজ দূরে। পথের ধারের বাংকার থেকে গর্জে ওঠে হাবিলদার এয়ার আহাম্মদ এবং তার সঙ্গীদের অস্ত্র। উল্টে গেল ট্রলি, মারা পড়ল হানাদারেরা। আবেগকে সংবরণ করতে না পেরে এয়ার আহম্মদ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে উঠে গেলেন শত্রুদের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার জন্যে। এমন সময় চিথলিয়া ঘাঁটি থেকে হানাদারদের একটি বুলেট এসে বিঁধলো এয়ার আহম্মদের বুকে। বাঙ্কারের মুখেই ঢলে পড়লেন তিনি। এরই মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারলো, পরশুরাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে যাচ্ছে। বাংকার লক্ষ্য করে গুলিবৃষ্টি করতে থাকে তারা। শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারাও। পরশুরামের হানাদারেরা মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হলো। তাদের লক্ষ্য ছিল, যে করেই হোক চিথলিয়ার সাহায্য পাওয়া। কিন্তু সেটাকে অসম্ভব করে তোলেন ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা এবং মুক্তিযোদ্ধারা।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!