You dont have javascript enabled! Please enable it!

৮ই জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি

বাহাত্তরের ৮ই জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডির সিহালা পুলিশ রেস্ট হাউজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পিআই-এর বিশেষ বিমানে(ফ্লাইট নং ৬৩৫) রওনা হয়ে ৯ জানুয়ারী ভোর ৬ টায় লন্ডনের হিথরো বিমান বন্দরে পৌঁছেন । পিআইএ এর বিমানে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত আকাশ পথে নিরাপত্তার স্বার্থে শেখ মুজিবুর রহমান বিমানে আছেন তা গোপন রাখা হয়েছিল। হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণের আধ ঘণ্টা আগে বৃটিশ সরকারকে জানানো হয়েছিল বিমানে শেখ মুজিবুর রহমান আছেন। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেখ মুজিবুর রহমান কে অভ্যর্থনা, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে বৈঠক, পুরো সময়জুড়ে ঐতিহাসিক এই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন ড. কামাল হোসেন। যিনি নিজেও যুদ্ধচলাকালীন পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অ্যাবোটাবাদের হরিপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন।
২৮শে ডিসেম্বর সকালে ড. কামাল হোসেন কে বলা হলো স্থানান্তরের জন্য তৈরি থাকতে। সাদা পোশাকে মিলিটারি অফিসাররা ভক্সওয়াগন গাড়িতে ড. কামাল হোসেনকে হরিপুর থেকে রাওয়ালপিন্ডি হয়ে সিহালা পুলিশ রেস্ট হাউজের ১নং কক্ষে নিয়ে যায় ।এই ১নং কক্ষেই শেখ মুজিবুর রহমান গৃহবন্দী ছিলেন ।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ(১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি ছিলেন) সিহালায় ভুট্টোর বার্তা নিয়ে এলেন । ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমান কে দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা চলছে বলে জানান ।তিনি প্রস্তাব দিলেন, পিআই-এর বিমানে নেয়ার। কিন্তু আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পিআই-এর বিমানে নেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তা লাগবে। তেহরান হতে পারে সেই তৃতীয় দেশ। শেখ মুজিবুর রহমান আপত্তি জানালেন। পাকিস্তান প্রস্তাব দিল তাহলে লন্ডন হতে পারে। শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন যেতে রাজি হলেন ।জানুয়ারী এর ৭ তারিখ আজিজ আহমেদ এসে শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে গেলেন রাওয়ালপিন্ডি। সেখানে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ডিনারের আয়োজন করলেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট শাহ ৮ জানুয়ারী আসবেন। ভুট্টো মুজিবের সাথে ইরানের প্রেসিডেন্ট এর একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিলে শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারলেন, ইরানকে দিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা চালাবেন ভুট্টো। 

শেখ মুজিবুর রহমান ডিনার বয়কটের হুমকি দিলে ঐ দিন ই ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমান এর ফ্লাইট চূড়ান্ত করেন ।৮ তারিখ প্রথম প্রহরে রাত ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু, ড. কামাল হোসেন আর পিআই-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান এই তিনজনকে নিয়ে বিমান লন্ডনের উদ্দেশে রাওয়ালপিন্ডি ছাড়ে। ভুট্টো নিজে বিমানবন্দরে এসে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান। বলা হলো, এটা স্ট্রাটেজিক কার্গো হিসেবে ননস্টপ লন্ডন যাবে। বিমানে শেখ মুজিবুর রহমান আছেন এ কথা ব্রিটিশ সরকার কে লন্ডন বিমানবন্দরে বিমান নামার আধঘণ্টা আগে জানানো হয় ।।পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিন এশিয়া ও কমনওয়েলথ ডেস্কের প্রধান ইয়ান সাদারল্যান্ড মুজিব কে অভ্যর্থনা জানান এবং যথাযত প্রটোকল প্রদান করেন।

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!