You dont have javascript enabled! Please enable it!

সীমান্তরাজ্য আসামে প্রতিরােধ প্রস্তুতি ঠিকমত হচ্ছে না
(আসাম-ত্রিপুরা সীমান্তরাজ্য সফরান্তে প্রত্যাগত বিশেষ প্রতিনিধি)

যদিও আসাম এবং মেঘালয় সীমান্ত রাজ্য এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় পকিস্তানি গােলাবর্ষণ ও পাক চরদের অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে, গৌহাটি এবং শিলং শহরের জনসাধারণের মধ্যে খুব একটা উদ্বেগের চিহ্ন আছে বলে মনে হলাে না। জীবনযাত্রা মন্দ মন্থর গতিতে বয়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত অসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ কিছুই হয়নি।
শােনা গেল কোনাে কোনাে বিশেষজ্ঞের মতে নাকি এখনকার দিনে ট্রেঞ্চের আর বিশেষ কোন উপযােগিতা নেই, তাই ট্রেঞ্চ খােড়া হয়নি। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থাও করা হয়নি। সামরিক প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা অবশ্য যথাযথ করা হয়েছে। পাকিস্তান যদি উন্মত্তের মতাে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে তাহলে সে উপযুক্ত জবাবই পাবে।
বাঙলাদেশ থেকে আসাম এবং মেঘালয়ে প্রচুর শরণার্থী এসেছেন। এক মাইলাম এবং বালাত শরণার্থী শিবিরেই তিন লক্ষাধিক শরণার্থী রয়েছেন এবং এখনও সেখানে দলে দলে শরণার্থী আসছেন। আসাম এবং মেঘালয় কোন সরকারের কাছ থেকেই তারা খুব একটা সহৃদয় ব্যবহার পাচ্ছেন না। এমনকি স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যেও অনেকে তাদের আপদ বলেই গণ্য করছেন।
সরকার জিনিসপত্রের মূল্যমান স্থিতিশীল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঠেলে উঠেছে। এজন্য শরণার্থী আগমনকে দায়ী করার প্রবণতাও কোনাে কোনাে … দেখা গেল। | এদিকে যখন নানা শিবিরে শরণার্থীদের দুর্দশার সীমা নেই, তখনই আবার এক রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে মইলাম ও বালাতে প্রায় ২৮ হাজার শরণার্থী নতুন করে গৃহহীন হয়েছেন। কেউ কেউ এই অগ্নিকাণ্ডকে অন্ত র্ঘাতমূলক কাজ বলে সন্দেহ করেছেন।
অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ, বিশেষ করে করিমগঞ্জ জেলায়, ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পাক চরেরা রেল যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দেবার জন্য মরীয়া হয়ে চেষ্টা করছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলােকে মাইন’ পেতে রাখা নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে করিমগঞ্জ এলাকা থেকে ২৮টি অন্তর্ঘাতমূলক কাজের রিপাের্ট পাওয়া গেছে। একটি ঘটনার সম্পর্কে ধৃত এক ব্যক্তি জনৈক কংগ্রেস এম এল এ এব্যাপারে লিপ্ত বলে বিবৃতি দিলে ঐ অঞ্চলে বিশেষ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিধান সভায় এ-নিয়ে কিছু উত্তেজনাও সুষ্টি হয়। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মহেন্দ্র চৌধুরী অবশ্য বলেন, অসদুদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে মিথ্যা করে উক্ত কংগ্রেস এম এল একে ঐ ঘটনার সঙ্গে জড়ানাে হয়েছে।
সে যাই যােক, করিমগঞ্জ অঞ্চলে পাক চরদের কার্যকলাপ সরকারের শিরঃপীড়ার কারণ হয়েছে। তদুপরি, এ-অঞ্চলের ভৌগােলিক সংস্থান এরূপ যে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা সশস্ত্র সংঘর্ষ বেধে গেলে সাময়িকভাবে এ-অঞ্চল ভারতের অবশিষ্টাংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও আছে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ এ-ব্যাপারে অবহিত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাদিও করা হয়েছে বলে শােনা গেল।
অন্যদিকে আবার এ-রাজ্যে পাকিস্তান ছাড়া অন্য বিদেশি রাষ্ট্রের চরেরাও বিশেষভাবে সক্রিয়। বিশেষ করে সি আই এ চরেরা বাঙলাদেশ মহলে রজার্স ফর্মুলার সপক্ষে জোর প্রচার চালাচ্ছে। ততটা না হলেও, এ-প্রচারে একেবারে কোন কাজ হয়নি এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না।
কিন্তু পরিস্থিতির মােকাবিলা করার মতাে বিশেষ কোন উদ্যেগ দেখা গেল না। আসামে কংগ্রেসই সর্বেসর্বা। সি পি আই খুবই ছােট পার্টি, সি পি এমের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কিন্তু আসাম কংগ্রেস অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ । পরিস্থিতি মােকাবিলার চেতনাও তাঁদের মধ্যে কতটা আছে বলা শক্ত। সি পি আই কিছু কিছু কাজ করবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সামর্থ্য কম। এদিকে অসমীয়া ও বাঙালিদের মধ্যে চাপা বিরােধ একটা ক্ষতিকর উপাদান হিসেবে কাজ করছে। এবিষয়ে অবিলম্বে অবহিত না হলে এই গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তরাজ্যে পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ ধারণ করতে পারে।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!