You dont have javascript enabled! Please enable it!

অক্টোবর ১৪, ১৯৭৪ সােমবার ঃ দৈনিক বাংলা

কনসর্টিয়াম বৈঠকে ১৮টি দেশ যােগ দেবে; বন্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংক পর্যাপ্ত সাহায্য দিতে পারে : স্টাফ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব দেশই অর্থনৈতিক সাহায্য করতে আগ্রহী। বাংলাদেশকে সাহায্যকল্পে আগামী ২৪ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য কনসর্টিয়ামের বৈঠকে বিশ্বের ১৮টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। বন্যার স্থায়ী সমাধানের বৃহত্তর পরিকল্পনায় বিশ্বব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য পাওয়ার আশা করা যায়। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক প্রধান মি, ম্যাকনামারা প্রথম যােজনার বাইরেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী এক নাগাড়ে এক মাস সাত দিনব্যাপী বিদেশ সফর শেষে রবিবার ঢাকায় ফিরে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে সােভিয়েট ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও সাহায্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরাে বলেন যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোন বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লাগবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরীভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা যত শীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়য়িত করা হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ কনসর্টিয়াম বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবী, কুয়েত, ইরান অংশগ্রহণ করবে। সৌদি আরব বৈঠকে অংশগ্রহণের কথা এখনাে ঘােষণা করেনি।

তবে তারা বাংলাদেশকে সাহায্যকল্পে এই বৈঠকে যােগদান করবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করেছে। এটা কনসর্টিয়াম বৈঠকে পেশ করা হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, পাকিস্তানী আমলে গৃহীত বৈদেশিক ঋণের যে অংশ বাংলাদেশে দৃশত: কোন পরিকল্পনায় ব্যয় হয়েছে সে অংশ পরিশােধ করতে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। তিনি আরাে জানান যে, সাবেক সাহায্যকারী দেশগুলাের কাছে বাংলাদেশ উক্ত ঋণের প্রায় ৮০/৯০ ভাগ বরাদ্দ (সাহায্য) হিসেবে গণ্য করার জন্য আবেদন করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ঋণ দানকারী দেশগুলাে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ ঋণ বরাদ্দ হিসেবে গণ্য করবেন। তিনি জানান যে, এ ব্যাপারে স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলাে থেকে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। বিদেশ থেকে কি পরিমাণ অর্থনৈতিক সাহায্য পাওয়া যাবে, এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, কনসর্টিয়াম বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত এ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে চান না। তবে তিনি বলেন যে, আমরা যদি সঠিক ও সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারি তবে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বৈদেশিক অর্থনৈতিক সাহায্যের কোন অভাব হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের চটকলগুলােতে শ্রমিকদের উৎপাদন দক্ষতার স্বল্পতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান যে, বাংলাদেশ চটকলগুলােতে দক্ষতার শতকরা ৫২ ভাগের বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

অথচ ভারতে শতকরা ৮০ ভাগ দক্ষতা আছে। ডান্ডি আমাদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে কাঁচা পাট ক্রয় করে শতকরা ৮৬ ভাগ দক্ষতা দিয়ে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন করে তা থেকেই মুনাফা অর্জন করছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ আরাে বলেন, আমরা যদি এখনাে জরুরীভিত্তিতে কাজ করি, কাজে যদি আমাদের আন্তরিকতা, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা এবং সর্বোপরি উদ্দেশ্যের প্রতি যদি সততা না থাকে তা হলে আমাদের জন্য অনেক দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!