You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.07.12 | দৈনিক পূর্বদেশ -পাটের একর প্রতি ফলন বৃদ্ধি করে মােট উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে - সংগ্রামের নোটবুক

জুলাই ১২, ১৯৭৪ শুক্রবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

পাটের একর প্রতি ফলন বৃদ্ধি করে মােট উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে ঃ সংসদ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে বলেন, দেশে একর প্রতি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করে পাটের মােট উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বাকি জমিতে ধান উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানাে হবে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বাজেটের উপর সংসদ সদস্যদের সাধারণ আলােচনার প্রেক্ষিতে উপরােক্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ধান পাটের প্রতিযােগী হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এ ব্যাপারে হতাশ হবার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, চলতি আর্থিক বছরে ৩৬৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। তবে এর মধ্যে ২৮৭ কোটি টাকা খাদ্য আমদানি বাবদ ব্যয় করতে হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পাট থেকেই আসে। পূর্বে যে সমস্ত দেশ বাংলাদেশ থেকে পাট ক্রয় করত তাদের এক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের পর ভারত তার ১১৭টি পাটকল চালানাের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাট নিত। কিন্তু পরবর্তীকালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাদের কাছে পাট বিক্রয় বন্ধ করে দেয়ায় তারা নিজেরাই পাট উৎপাদন শুরু করে। তিনি বলেন, যেভাবেই হােক ভারত বর্তমানে পাটের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা ঠেকানাে যাবে না।

তবে অন্য দিক থেকে আমাদের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের চাল কিনতে হয়। দেশে পাটের জমির একাংশে ধান উৎপাদিত হলে আমাদের বিদেশ থেকে চাল কেনার পরিমাণ কমবে এবং তাতে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে। তবে তিনি বলেন, বাকি পাটের জমিতে অধিক। পরিমাণে পাট উৎপাদন করে পাটের মােট উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চটকলগুলাের চাহিদা মেটানাে হবে। তিনি আরও বলেন, কাঁচা পাট রফতানি করলাম কি করলাম না সে কথা বলে হতাশা সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন যে, বর্তমানে দেশে পাট ও চামড়ার উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। চামড়ার ক্ষেত্রে তিনি হানাদার শত্রুদের গবাদী পশু হত্যার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চা এবং চামড়া দিয়ে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ২০ ভাগ আসবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পাট ও উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্য দিয়ে আগামী বছর ৩০০ কোটি টাকা উপার্জন করা যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পাটই হবে | আমাদের মূল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। তিনি বলেন, পাট থেকে বিকল্প সুতা তৈরি করে যদি কাপড় তৈরি করা যায় তাহলে বিদেশ থেকে কাপড় আনার প্রয়ােজনীয়তা হ্রাস পাবে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমবে। এ ব্যাপারে গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং গবেষণা চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি