You dont have javascript enabled! Please enable it!

জুন ২৬, ১৯৭৪ বুধবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ

বক্তৃতা বিবৃতিতে ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না; এর জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা চাই ও সংসদ রিপাের্টার। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সরকার সচেতন বলেই উন্নয়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। উন্নয়ন বিমুখ হলে জাতি পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে আত্ম-নির্ভরতা অর্জন করতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অর্থবিলের উপর বিতর্কের সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন। অর্থমন্ত্রী তার ভাষণে অর্থ-বিলের সমালােচনার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, দরিদ্র জনগণের ক্লেশ ও দুর্ভোগ দূর করার জন্যে সর্বপ্রকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন যে, বক্তৃতা বিবৃতিতে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে উন্নতি হয় । ভাগ্যোন্নয়নের জন্যে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়ােজন। উন্নয়নমূলক কাজের জন্যেই বাড়তি অর্থের দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, আমরা এখনাে পরনির্ভরশীল রয়ে গেছি। তিনি বলেন যে, পরনির্ভরশীলতা কারাে কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন যে, জাতির অগ্রগতির জন্যে কিছু না করা চরম বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। তিনি বলেন, কর আরােপের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারাই এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। তাই খন্ড খন্ড বক্তব্য এক করে দেখা হলে মনে হবে সারা জাতিই বিক্ষুব্ধ। কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। যা করা হয়েছে তা জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই করা হয়েছে। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, বৈদ্যুতিক পাখা, টেলিভিশন, বাড়িভাড়ার ওপর কর, চিনি, রং প্রভৃতির ওপর কর আরােপের ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ | হবে না। জনাব তাজউদ্দিন বলেন, কর ধার্য একটি অত্যন্ত অপ্রীতিকর বিষয়। কর ধার্য করে দেশের সব মানুষকে খুশি করা যায় না। যাদের ওপর কর আরােপ করা হয় তারা অখুশি হয়েই থাকে।

তিনি বলেন যে, রাজস্ব বাজেটে আয়-ব্যয় সমান | ধরা হয়েছে। খাদ্য শস্য আমদানিতে সাবসিডি দেয়া না হলে ৬০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তিনি বলেন, বিদেশী সাহায্যের ওপর যে আশা করা হয়েছে, সে সব দেশের নাম ঘােষণা না করায় সমালােচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন যে, বিদেশী সাহায্যের ব্যাপারে কথাবার্তা অব্যাহত রয়েছে। সবাই যে সাহায্য দেবে এমন কোন কথা নেই। জনস্বার্থের খাতিরেই এ সব গােপন রাখা হবে। সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে গ্রান্ট হিসাবে সাহায্য পাওয়া যায়নি বা পাওয়ার কোন | আশ্বাস পাওয়া যায়নি বলে তার কথিত বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, আমি কস্মিনকালেও এ কথা বলিনি। তিনি বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলাে স্বাধীনতা | আন্দোলন বা এরপর সাহায্য করেছে এবং ভবিষ্যতেও তারা তাদের সাধ্যমত সাহায্য করবে। তিনি বলেন যে, মানুষের কল্যাণ এবং সম্পদ বর্ধনের স্বার্থে উন্নয়নের কাজ বন্ধ রাখতে পারি না। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়ােজন। এ| জন্যে কর আরােপ করা হচ্ছে এবং কর সংগ্রহ ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। তিনি | ৫২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার উপর অত্যধিক গুরুত্ব | আরােপ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, অর্থ-বিলের আলােচনায় স্বতন্ত্র ও বিরােধী দলের সদস্যরা সরকারের ব্যর্থতার সমালােচনা করেছেন, কিন্তু সরকার যে কিছু কিছু ভাল কাজ করেছেন সে ব্যাপারে তারা কিছুই বলেননি।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!