You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.03 | দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা-মুষ্টিমেয় লােকের জন্য বাংলাদেশ হয়নি - সংগ্রামের নোটবুক

জুন ৩, ১৯৭৪ সােমবার ঃ দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা

মুষ্টিমেয় লােকের জন্য বাংলাদেশ হয়নি : ঢাকা, ২ জুন, বাসস। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ জীবনের মান বাড়াতে জাতীয় পুনর্গঠনে এগিয়ে আসার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ কর্মচারি ইউনিয়নের দ্বিতীয় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণ দানকালে মন্ত্রী এই আবেদন জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক মানুষের জন্য বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়নি। যারা রাতারাতি বেআইনী উপায়ে অর্থ উপার্জন করে কেঁপে উঠেছে, তাদের খুঁজে বের করতে তিনি জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানান। অর্থমন্ত্রী নিজে কৃতা সাধন না করে অপরকে কৃতা সাধন করার উপদেশ না দিতে আহ্বান জানান। মন্ত্রী সমাজ বিরােধীদের দমনে সরকারের সাথে সহযােগিতা করতে জনগণের প্রতি আবেদন জানান। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, পে-কমিশনের ৬ থেকে ১০ গ্রেডের নতুন বেতন স্কেল ১ জুলাই থেকে শতকরা ৭৫ ভাগ কার্যকর হবে, বাকি ২৫ ভাগ আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে। ইতােমধ্যে ৬ থেকে ১০ গ্রেডের নতুন বেতন স্কেল শতকরা ৬০ ভাগ কার্যকর হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র ও যােগাযােগ মন্ত্রী জনাব এম. মনসুর আলি।

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন যে, ২ হাজার ২৪০টি ভিন্ন বেতন স্কেলকে ১০টি গ্রেডের ভেতর আনা হয়েছে। এটি যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বেতন কমিশনের মূল লক্ষ্য কাজ অনুযায়ী সমতা বিধান (ফাংশনাল ইকুইভ্যালেন্ট) করা। গ্রেড-নির্ধারণে ভুল-চুক রয়েছে তা তিনি স্বীকার করে বলেন যে, বেতন কমিশন রিপাের্ট কার্যকর করার ব্যাপারে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়েই রিপাের্ট কার্যকর করছেন। পূর্বতন বেতন স্কেলে কয়েকটি বৈষম্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, কমিশন দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপাের্ট দিয়েছেন। এই রিপাের্ট একবার বাস্তবায়ন করার পর তা ক্রমান্বয়ে সংশােধন করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশের সীমিত আয়ের বিশেষ করে মেহনতী মানুষের বর্তমান সমস্যা প্রায় অভিন্ন। সরকার এ ব্যাপারে সচেতন। সরকার নিম্ন বেতনভূক্ত কর্মচারিদের বাসস্থান ও কার্যালয়ে যাওয়া আসার যানবাহনের প্রচেষ্টা শুরু করেছে। তিনি আরাে বলেন যে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি না করে কাগজের নােট ছাপিয়ে জনসাধারণের অবস্থার উন্নতি সম্ভব হবে না। বরং মুদ্রাস্ফীতিই ঘটবে। তিনি বলেন, একমাত্র দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করেই আমাদেরকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হলে সকলকে আত্মনির্ভর ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে – সিমিন হোসেন রিমি